মুদ্রাপাচারে জড়িত এক ডজন অপরাধী শনাক্ত
অনলাইন ডেক্স । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
আন্তঃদেশীয় যোগসূত্র সৃষ্টি করে একটি মাফিয়া চক্র বাংলাদেশে মুদ্রাপাচারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে মুদ্রাপাচার চক্রের এক ডজন অপরাধীকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
তারা এখন গোয়েন্দা জালে। অবশ্য গোয়েন্দাদের ব্ল্যাক লিস্টে তাদের নাম আগেও ছিল। কয়েকজন গ্রেফতারও হয়েছিল। জামিন নিয়ে তারা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
পুলিশ ও র্যাবের গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ঢাকাকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করে অপরাধীরা মুদ্রাপাচার করে থাকে। মাফিয়া চক্রের কাছে ঢাকা এক ধরনের ‘মধুময় রুট’। এখানে সহজেই আত্মগোপনে থাকা যায়। বিশেষ করে পাকিস্তানি একটি গ্রুপ অপরাধীদের নিরাপদ আশ্রয় দেয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রাপাচার চক্রের গডফাদার হলেন সুমন।
আন্ডার ওয়ার্ল্ডের সবাই তাকে এ নামেই চেনে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তাকে দুইবার গ্রেফতার করেছিল। ঢাকার বাইরে দিল্লি, দুবাই ও ব্যাংককে তার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। এসব দেশে তিনি ‘আলী’ নামে পরিচিত। তার পুরো নাম সুমন আলী। তিনি চালাক সুমন নামেও পরিচিত।
শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের একটি সূত্র জানায়, বনানীর রেইনট্রি হোটেলে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে দুই তরুণী ধর্ষণের ঘটনার পর চোরাচালানবিরোধী অভিযানে সুমন আলীর নাম আসে। তার নাম শুধু মুদ্রাপাচারের সঙ্গে জড়িত নয়, স্বর্ণের চোরাচালানের সঙ্গেও তার নাম জড়িত। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) গোয়েন্দা তালিকায় সুমন কালো তালিকাভুক্ত। সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন- বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, দুবাই, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়াকেন্দ্রিক জালিয়াত চক্রের ১০ থেকে ১২ জন অপরাধীকে শনাক্ত করা গেছে।
বিভিন্ন স্থানে এখন তারা ঘাঁপটি মেরে আছে। এ চক্রের অন্যতম জালিয়াত সুমন। তিনি এতটাই চতুর যে, তাকে এ জন্য চালাক সুমন বলা হয়। সম্প্রতি এক আসামির কাছ থেকে সুমনসহ তার সিন্ডিকেট সম্পর্কে আরও তথ্য পাওয়া যায়। এ থেকে জানা গেছে, প্রায় এক ডজন অপরাধী মুদ্রাপাচারে জড়িত। যারা ঢাকাকে ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করে যাচ্ছে। তাদের কৌশলও ভিন্ন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রাপাচার চক্রের সদস্যরা ১৫ বছর ধরে অপকর্ম করছে। ঢাকা-দুবাই-ব্যাংকক চক্রে জহির মিয়া ও আলী নেওয়াজ, ঢাকা-কুয়ালালামপুর চক্রে মাহাতাব ও আলাউদ্দিন, ঢাকা-কলকাতা-দিল্লি চক্রে সাজু ও দানেশ এবং ঢাকা-ইসলামাবাদ চক্রে মোহাম্মদ আলী, মজিদ নুরানী ও আফজাল মামুনের যোগসূত্র রয়েছে। তারা সবাই রোমিং নম্বর ব্যবহার করে। কেউ কেউ অ্যাপসভিত্তিক যোগাযোগ করে থাকে। এ তালিকায় আমীর আলী, বকুল পাল ও ফরিদ মিয়ার নামও রয়েছে।
জানতে চাইলে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম জানান, মাফিয়া চক্রের সদস্যরা তাদের কৌশল বদলে অপরাধ করছে। তারা নিত্য-নতুন কৌশলের মাধ্যমে মুদ্রাপাচার ও স্বর্ণ পাচারসহ জালিয়াতি করছে। তবে তারা যত কৌশলই অবলম্বন করুক না কেন গোয়েন্দা জালে তাদের ধরা পড়তেই হবে। তিনি বলেন, ঢাকার সঙ্গে বিভিন্ন দেশের যোগসূত্র তৈরি করে যারা পাচার প্রক্রিয়ায় জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। এ ব্যাপারে অনুসন্ধান ও গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে। এ ধরনের কয়েকজন অপরাধীকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। সূত্র-যুগান্তর।