আত্ম প্রকাশ হলো “মুভমেন্ট ফর জাস্টিস”
অনলাইন ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
আজ বুধবার (১৭ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবে আত্ম প্রকাশ হলো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৮০ দশকের কিংবদন্তীতুল্য ছাত্রনেতা সানাউল হক নীরুর ‘মুভমেন্ট ফর জাস্টিস’।
উক্ত আলোচনা সভায় বিশেষ অথিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট আইনজীবী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এনামুল হক শহীদ, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্যসচিব আবম মোস্তফা আমিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আসিফ নজরুল ও সাংবাদিক রিতা রহমান প্রমুখ।
সভাপতিত্ব করেন মুভমেন্ট ফর জাস্টিস এর প্রধান সমন্বয়ক সানাউল হক নীরু।
ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন বলেন, সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্ব জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর ক্ষমতাসীন সরকার ভয় পেতে শুরু করেছে। অনেক রকমের গণ্ডগোলের মধ্যে আমাদেরকে চলতে হচ্ছে। সরকার জানে এবার কাজটা এতো সহজ হবে না। কিন্তু তারা যাবার আগে একটা মরণ কামড় দেবে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতি হবে আদর্শের ভিত্তিতে। গুজব নয়, গুজবের রাজনীতি করব না আমরা। গুজবের রাজনীতি করে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। বড় বড় কথা বলে, মানুষের রক্তের ওপর দিয়ে ক্ষমতায় এসে, তারপরে ভুলে যাওয়া এই রাজনীতি নয়। আদর্শের রাজনীতি বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।’ ‘গণতন্ত্র মানে মারামারি কাটাকাটি নয়, সুস্থ্য রাজনীতি করেন। নির্বাচনের মাধ্যমে যেই ক্ষমতায় আসবে সেই আসুক। ভোট প্রক্রিয়া কিন্তু দলীয় রাজনীতির প্রক্রিয়া নয়, এটা বিএনপি বা আওয়ামী লীগের নয়। এটা জাতীয় প্রক্রিয়া, এখানে আওয়ামী লীগ আসতে পারে, বিএনপি আসতে পারে। জনগণের মাঝে এখনও সচেতনতা এসেছে, যে ভোটের মাধ্যমে আমাদের সরকার গঠন করতে না পারি। তো আমাদের সরকার গঠন করে কি বিদেশিরা? সহজ প্রশ্ন আমরা কি চাই?’
তিনি আরও বলেন, জনগণের ভোটে হবে না তো কার ভোটে ক্ষমতায় থাকবেন। বর্তমান সরকার কার ভোটে ক্ষমতায় আছে? আমি মনে করি আমাদের সিভিল সার্ভিস, আমাদের পুলিশ, সকলকে সচেতন হতে যে, তাদের ভোটের অধিকার হরণ করা হয়েছে।
প্রবীণ এই অাইনজীবী বলেন, ‘এই ঐক্য প্রক্রিয়ায় আমাদের ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য। আমি মনে করি এটা জাতীয় ঐক্য। মামলা দিয়ে রাজনীতি করা, সেটা পাকিস্তানে ছিল না। পাকিস্তানের আমলে রাজনীতিবিদদের সম্মান করা হতো। কিন্তু এখন অল আর ক্রিমিনালস। আমি বলছি না, যে ক্ষমতায় যায়, অপজিশনকে ক্রিমিনাল কেস দেয়। এ রকম কখনও দেখিও নাই। আইনে তো থাকলেই হলো। প্রয়োগ করার দরকার নাই এবং এই আইনটা ভাঙার জন্য আমাদের চিফ জাস্টিসকে অপমান করে, ভয় দেখিয়ে বিদায় নিতে হয়েছে। এটা কোন কথা হলো। পাকিস্তান আমলেও তো চিফ জাস্টিসকে দেশত্যাগ করান নাই স্বৈরশাসকরা।’
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার কড়া সমালোচনা করেন মইনুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমার বন্ধু জাফরুল্লাহ সাহেব একটা ভুল করেছে, ক্ষমাও চেয়েছে। আমি তাকে বলেছি এই আর্মি নিয়ে কথা বলেছো কেন? রাজনীতি করো, রাজনীতি নিয়েই থাকো। সে একজন মুক্তিযোদ্ধা, সে বলে আমার আর্মি, কেন বলতে পারব না? আমি বললাম- ঠিক আছে বলো। যাই হোক এক ভুল হয়েছে, সে দুঃখ প্রকাশ করছে। এরপরে যা হলো, আমি নিশ্চই বিশ্বাস করি না এটা আর্মি চিফের চিন্তা-ভাবনা। এটা একটা স্বাধীন দেশ। একটা ভুলভ্রান্তি তো হইতেই পারে। সেই জন্য দেশদ্রোহী মামলা দিতে হবে, এটা কি ঠিক?’
‘এটা কেমন কথা, কেমন কথা হলো, সেটাই কষ্ট লাগে। আজকে মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রদ্রোহী হয়ে গেল? একটু সমালোচনা করেছে। এটা যেহেতু আমাদেরই সামরিক বাহিনী, একটু আধটু ভুলভ্রান্তি হতেই পারে।’
দেশে আইনের শাসন নেই উল্লেখ করে মইনুল হোসেন বলেন, ‘রাজনীতি করে তারা এখন আইনের শাসন বোঝে না। তারা শুধু জানে টাকা পয়সা-লুটপাট করতে। এটা হয়েছে গণতন্ত্রে নেতৃত্বের সংকটের কারণে। সব রাজনীতির নির্বাস হলো জাস্টিজ ফর দ্যা পিপল। বিচার বিভাগ স্বাধীন না হলে জাস্টিজ হয় না। আজকে দেশে যা হচ্ছে তা ভয়াবহ।’
মইনুল হোসেন বলেন, ‘দলীয় রাজনীতির বাইরে ভোট হওয়া উচিত। নির্বাচন নিয়ে জাতীয় আন্দোলন হচ্ছে, এতে শেখ হাসিনারও এই আন্দোলনে শরিক হওয়া উচিত। কারণ ভোট না দিতে পারলে আমরা স্বাধীন নই। এখন চলছে অন্ধ লুটপাটের রাজনীতি। চোর-ডাকাতদের হাতে রাজনীতি চলে গেছে।’
‘স্বাধীন দেশে আজকে কেন আমাদের পুলিশ পিটাবে। পাকিস্তানী পুলিশ আমাদের পিটাইছে, মানছি। সে সময় আমার বাবাকে ২২টা বেত্রাঘাত, ২২ বছর জেল দিয়েছিল। আজকে বাংলাদেশে কেন আমাকে ভয় দেখাবে? কথা বলতে পারবো না। আমার পুলিশ কেন আমাকে ভয় দেখাবে? সে কি স্বাধীন দেশের পুলিশ নয়? আমি যেমন স্বাধীন দেশের নাগরিক, পুলিশও স্বাধীন দেশের নাগরিক। সকলেই স্বাধীন দেশের নাগরিক।’
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমি একটা কথা বলেছিলাম, কথাতে শব্দের ভুল ছিল। তাই বলে কি আমি রাষ্ট্রদ্রোহিতা করেছি? আমি তারপরে ভুল স্বীকার করেছি। তার মানে রাষ্ট্র এখন মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। আমরা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। আমাদের চোখে ছানি পড়ে গেছে তাই আসল জিনিসটা দেখতে পাচ্ছি না।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমরা গণতন্ত্রের কথা বলছি, কিন্তু গণতন্ত্র গণতন্ত্রহীন হয়ে পড়েছি। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে শুধু সংখ্যা দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে না। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হবে। জনগণের সামনে উপস্থিত হতে হবে। বিভিন্ন দলের জনগণের সামনে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। কিন্তু আজ সরকারবিরোধী পক্ষকে কথা বলতে দিচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, দেশের এই ক্রান্তিকাল কাটিয়ে উঠতে হলে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হবে এবং নির্বাচনে সবাইকে সমঅধিকারে অংশগ্রহণ করতে দিতে হবে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলাম, মিটিং-মিছিল করতে যাওয়ার আগে আমাকে আটক করা হলো। হামলা-মামলা করা হলো। এতে তো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।
দেশের বর্তমান সংকট উত্তরণ ঘটাতে ঐক্যের বিকল্প নেই দাবি করে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট করেছি। একটা মাত্র পথ খোলা, গণতন্ত্র যদি চান, শান্তির বাংলাদেশ যদি চান, কল্যাণকর বাংলাদেশ যদি চান তাহলে আপনারা সবাই আমাদের সঙ্গে যোগ দেন, সবাই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেন।’
আসিফ নজরুল বলেন, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় যারাই ঐক্য প্রক্রিয়ায় আসবে তাদেরকেই সাথে নিবেন। আগে থেকেই শর্ত দেবেন না। কোন দল ক্ষমতায় আসবে কি আসবে না সেটা জনগণের উপর ছেড়ে দিন।
মুভমেন্ট ফর জাস্টিস এর প্রধান সমন্বয়ক সানাউল হক নীরু বলেন, সঠিক আঙ্গিকে রাষ্ট্রিয় ব্যবস্থাপনা বিনির্মাণের প্রত্যয়ে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, ন্যায়বিচার, বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে “মুভমেন্ট ফর জাস্টিস” নামে একটি সামাজিক সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ও আলোচনা সভার সভাপতির বক্তৃতা প্রদান করেন ও সংগঠনের শুভ সূচনা করেন।
সানাউল হক নীরু বলেন, দেশে কেউ ক্ষমতায় গেলে নামার কথা ভুলে যায়। দেশে যে পরিস্থতি চলছে তা ভয়াবহ। এ অবস্থা থেকে দেশকে বাঁচাতে আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি। আমরা চেষ্টা করে দেখতে চাই। যে পথে গেলে দেশ এবং দেশের মানুষ ভালো থাকবে আমরা সে পথ দেখাতে চাই।
তিনি তাঁর দীর্ঘ বক্তৃতার শেষলগ্নে বলেন, “দুনিয়াটা স্থায়ী বসবাসের জায়গা নয়, এটা নিছক একটি ট্রানজিট মাত্র, পরপারই হবে আমাদের স্থায়ী গন্তব্য। যেহেতু দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ সেহেতু দেশকে কিছু দেয়ার জন্য আমাকে সহায়তা করুন।”
কথাগুলো বলতে বলতে তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন এবং কানায় কানায় ভরপুর অডিটোরিয়াম এ পিনপতন নিরবতা নেমে আসে।