ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে শ্রমিক যাবে মালয়েশিয়ায়
আন্তর্জাতিক ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
‘জি টু জি প্লাস’ হচ্ছে জনশক্তি রফতানির সম্পূর্ণ একটা পদ্ধতি। ওই পদ্ধতিরই একটি অংশ হচ্ছে সিনারফ্যাক্সের স্পেশাল অনলাইন সিস্টেম, যেটাকে সংক্ষেপে বলা হয় এসপিপিএ। মালয়েশিয়া সরকার শুধু ওই সিস্টেমটা স্থগিত করেছে। এ ছাড়া সবকিছু ঠিকঠাক। আর শ্রমবাজারও বন্ধ হয়নি। এখন এসপিপিএ পদ্ধতির বদলে পুরনো পদ্ধতিতেই (ম্যানুয়েল সিস্টেম) শ্রমিকেরা মালয়েশিয়ায় যেতে পারবে।
গতকাল প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো: সেলিম রেজা এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে আজো (রোববার) যে চিঠি এসেছে, সেখানে কোথাও মালয়েশিয়া সরকার শ্রমবাজার বন্ধ করার বা জি টু জি প্লাস পদ্ধতি বাতিল করার কথা বলেনি। তারা চিঠিতে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশ থেকে বিদেশী শ্রমিক আনার ক্ষেত্রে সিনারফাক্সের যে স্পেশাল অনলাইন সিস্টেম (এসপিপিএ) চালু ছিল সেটিকে তারা সাসপেন্ড করেছে।
ডিজি বলেন, মালয়েশিয়া থেকে যে কর্মীদের নামে স্পেশাল অনলাইন পদ্ধতিতে যতগুলো চাহিদাপত্র এখন পর্যন্ত আমাদের পাইপলাইনে রয়েছে তাদের সবাই যেতে পারবে। তিনি বলেন, মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশী শ্রমিক নেয়া বন্ধের ঘোষণা দেয়নি। তারা আগে অনলাইনে চাহিদাপত্র দিতো। এখন দেবে ম্যানুয়েলি। সব রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক বা তাদের এজেন্ট মালয়েশিয়া থেকে চাহিদাপত্র সংগ্রহ করে সত্যায়নের জন্য হাইকমিশনে জমা দেবে। হাইকমিশন যাচাই বাছাই করে অনুমোদন দিলে তখন আমরা বহির্গমন ছাড়পত্র দেবো। কোনো সমস্যা তো দেখছি না। তিনি চিঠির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, তারা যেটা বলছে, আমাদের বাংলাদেশসহ মোট ১৪টি সোর্স কান্ট্রি আছে। সবার জন্য ইউনিফাইড (সমন্বিত) অনলাইন একটা সিস্টেম চালুর ব্যাপারে তারা চিন্তাভাবনা করছে বলে জানিয়েছে। ওই পদ্ধতি চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত চাহিদাপত্র, সত্যায়নসহ সবকিছু পুরনো নিয়মেই চলতে থাকবে। স্পেশাল সিস্টেমটাই কেবল বাতিল হলো। এটাই হলো ফ্যাক্ট।
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণকারী ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক নাম না প্রকাশের শর্তে গত রাতে এ প্রতিবেদককে বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে যে সিস্টেমে লোক পাঠানো হচ্ছিল সেটি ছিল চমৎকার। আপনার পজিশন কোথায়, কিভাবে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হচ্ছে সবকিছুই মুহূর্তে অনলাইনে জানা যেত। তবে সিস্টেমের নামে যে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হতো সেটি ভালো ছিল না। এটা নিয়ে আমরা বিতর্কের মধ্যে পড়তাম। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এখন সরকারকে বলে দেয়া উচিত, আমরা আসলে কত টাকার মধ্যে একটি কর্মীর নামে ভিসা পারচেজ করব। যদি এখনকার মতো সরকার টাকার অঙ্ক নির্ধারণ করে দেয় তাহলে আমি মনে করি, সর্বোচ্চ ১ লাখ ৫০ হাজার অথবা এক লাখ ৬০ হাজার টাকার মধ্যে একজন লোক পাঠাতে পারব।
ম্যানুয়েল সিস্টেম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মনে করেন, আমি এমপ্লয়ার থেকে ডিমান্ড লেটার এনেছি। কেডিএন এ তার অ্যাপ্রুভাল পেপার আছে। আমরা যেকোনো মেডিক্যাল সেন্টার থেকে যদি মেডিক্যাল করে পাঠিয়ে দেই, পরে ওই পেপার সরাসরি মালয়েশিয়ার কেডিএন এ জমা করবে। তারা তখন ওই কোটা দেখেই ভিসা ইস্যু করে দেবে। এটা আর অনলাইন থাকল না। কিন্তু অতীতে ম্যানুয়েলি পদ্ধতিতে যে সমস্যাগুলো হয়েছে, যার কারণে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার বার বার বন্ধ হয়েছে। সেটা হচ্ছে ম্যানুয়েলি পদ্ধতিতে বাংলাদেশী এক শ্রেণীর অসৎ ব্যবসায়ী, মালয়েশীয়রা মিলে ১০টি অ্যাপ্রুভালের জায়গায় একটা শূন্য বাড়তি বসিয়ে ১০০ চাহিদাপত্র তৈরি করে ফেলে। অনলাইনে কিন্তু জালিয়াতির সুযোগ নেই। ম্যানুয়েলিতে জালিয়াতি করার সুযোগ আছে। এমন ঘটনা অতীতেও ঘটেছে।
পরে দেখা গেছে ৯০ জন শ্রমিককে কোম্পানি রিসিভ করেনি। তখন তারাই কাজ না পেয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছে। না খেয়ে রয়েছে। বদনাম হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের আর ওদের সিস্টেমের। বর্তমান সরকারের সংশ্লিষ্টদের আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া ম্যানুয়েল পদ্ধতিটি এখন থেকেই মনিটরিং হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।