যুগের শ্রেষ্ঠতম ভাষণঃ পটভূমি ও সর্মার্থ
যুগের শ্রেষ্ঠতম ভাষণঃ পটভূমি ও সর্মার্থ
সিডনীর কথামালা-৭৪
রণেশ মৈত্র (সিডনী থেকে)
সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ
বাগ্মীতায়, শব্দচয়নে, দিক-নির্দেশনায়, পরিস্থিতির বর্ণনায় এবং জনগণকে ঐক্যবদ্ধ ও উদ্দীপ্ত করার যে মহাকাব্য রচনা করেছিলেন ৭ মার্চ, এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান, বাংলাদেশের জনগণের কাছেই শুধু নয় তা গোটা পৃথিবীর রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামে কোন জাতীয় নেতার সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবেই তা আজও বিবেচিত হয়ে আসছে।
জাতির সম্মান রক্ষার, জাতির অধিকার আদায়ের, জাতিকে সকল প্রকার বৈষম্যের অবসানের লক্ষ্যে তাঁর বাল্যকালে তিনি যেভাবে দৃড়পদে অগ্রসর হতে শুরু করেন তা এক অবিস্মরণীয় গতি সঞ্চার করে তাঁর জীবনে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই।
রাজনৈতিক জীবনও তাঁর বিচিত্র। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার এক মধ্যবিত্ত সম্মানিত কৃষকের ঘরের সন্বতান হিসেবে জন্ম নিয়ে তিনি সহসাই কোলকাতা গিয়ে কৈশোরেই মুসলিম লীগের ছাত্র সংগঠন মসলিম ছাত্র লীগের কর্মী হিসিবে আত্মপ্রকাশ করেন। ভারতবর্ষ তখন অবিভক্ত। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী তখন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের নেতা।
মুসলিম লীগ তখন এক সম্প্রদায়িক দাবী উত্থাপন করেছে। দাবী করে বসেছে ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি পৃথক রাষ্ট্র। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সহ প্রথম শ্রেণীর সকল বাঙালি মুসলিম লীগ নেতাই ঐ দলের প্রধান নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সাথে মুসলমানদের জন্য একটি পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবীতে একমত ছিলেন।
শেখ মুজিবর রহমান ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর প্রতিভা ভাজন শিষ্য। তাই মুজিব ভাই পাকিস্তান আন্দোলনে সক্রীয় ভাবে অংশ প্রহণ করেন। নানা ঘটনা দুর্ঘটনা, নানা আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পরিস্থিতি, ভারতীয় রাজনীতির মূলধারার কিছু কিছু ব্যর্থতা ও বৃটিশ এবং মুসলিম লীগের যৌথ ষড়যন্ত্র ও অপরদিকে বাংলার মুসলিম জনগণের মধ্যে ধর্মীয় সৃষ্টি বিভ্রান্তি ইত্যাদি মিলিয়ে শেষতক দ্বিজাতিতত্ব ও সাম্প্রদায়িকতা ভিত্তিতে মুসলিমদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র পাকিস্তানের সৃষ্টি হলো এবং তা বাস্তবে রূপ পেলো ১৯৪৭ সালের ১৪ আগষ্ট। ভারতবর্ষ দ্বিখন্ডিত হলো।
অন্য অনেকের মুজিব ভাই ও চলে এলেন পূর্ব বাংলার অর্জিত পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলে। নিজ জন্ম ভূমিতে। পূর্ব বাংলায় ফিরে এসেও তিনি বসে থাকেন নি। নিজেকে পুনরায় নিয়েজিত করেন রাজনীতিতে। অচিরেই পাকিস্তান সম্পর্কে মোহমুক্তি ঘটলো। মোহমুক্তি ঘটলো মুসলিম লীগ সম্পর্কেও। যখনই দেখলেন, মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয নেতৃত্ব বাঙালি বিরোধী এবং তা এতটাই তীব্র যে তাঁরা বাঙালি মুসলমানদেরকে প্রকৃত মুসলমান বলে মনেই করেন না, যখন দেখলেন মুসলিম লীগের পশ্চিম পাকিস্তানী নেতৃত্ব বিশেষ করে পাঞ্জাবী ধনিকদের নেতৃত্ব পূর্ববাংলাকে অর্থনৈতিক এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে শোষণ করতে অতিশয় ব্যস্ত এবং আরও দেখলেন খাজা নাজিম উদ্দিন সহ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত বাংলার মুসলিম লীগ নেতারা পশ্চিম পাকিস্তানী ঐ নেতৃত্বের পক্ষে এবং তাদের স্বার্থ রক্ষার্থেই নিয়োজিত পূর্ববাংলার স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে তখন সমমনা অপরাপর মুসলিম লীগ নেতাদের সাথে একমত হয়ে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনে উদ্যোগী হলেন তিনি।
প্রক্রিয়াটি সুরু করতে দেরী হয় নি। তৎকালীন রাজনীতিতে সাধারণ মুসলিম জনগণের অংশ গ্রহণ ছিল নেহাতেই অনুল্লেখি যোগ্য। রাজ নীতির মূল ধারা ছিল কংগ্রেস নেতৃত্বের হাতে। কংগ্রেস যদিও ছিল অসম্প্রদায়িক দল তবু তার মূল নেতৃত্বে সর্বত্রই ছিল হিন্দুদেরই প্রাধান্য। কিন্তু দেশ বিভাগের ভিত্তি সাম্প্রদায়িক হওয়াতে তাঁরা ১৪ আগষ্টের আগে থেকেই ভিটে মাটি ছেড়ে পশ্চিম বাংলায় চলে যেতে থাকেন। পরিণতিতে পূর্ববাংলার রাজনৈতিক অঙ্গনে সৃষ্টি হয় এক গভীর শূণ্যতার।
শিক্ষাদীক্ষা চরমভাবে অনগ্রসর বাংলার মুসলিম সমাজ মূলত: কৃষিকাজে তখন পর্য্যন্ত নিয়োজিত এবং ফিউডাল প্রভাবে তাঁরা ছিলেন তখনও বঞ্চিত। ফলে গড়ে ওঠে নি মধ্য বা নি¤œ মধ্যবিত্ত একটি তরুণ সমাজও।
অপর পক্ষে ধর্মের নামে ব্যাপকভাবে নানা বিভ্রান্তিকর প্রচারও তাঁদের মধ্যে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হওয়ায় বাঙালি সংস্কৃতির নানা দিক যেমন গান, নাচ, মেলা, আল্পনা প্রভৃতি ছিল তাঁদের কাছে না-জায়েজ। ফলে সীমাহীন পশ্চাৎপদতায় ভুগছিলো বাংলার মুসলিম সমাজ।
এ পরিস্থিতে ভারতে গঠিত মুসলিম ছাত্র লীগ যার পাকিস্তানী অংশ “অল ইষ্ট পাকিস্তান (বা “ল পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ”) নামে মুসলিম লীগের তরফ থেকে দাঁড় করানো হয়েছিল তার পরিবর্তে ১৯৪৮ সালে “পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ” নামে নতুন একটি মুসলিম লীগ বিরোধী ছাত্র সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলেন তিনি।
১৯৪৯ সালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী নেতৃত্বে গঠন করেন “পূর্ব পাকস্তিান আওয়ামী মুসলিম লীগ” । প্রতিষ্ঠাকালে দলটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন শামসুল হক আর যুগ্ম সম্পাদক পদে শেখ মুজিবর রহমান। অল্পকাল পরেই শামসুল হক মৃত্যু বরণ করলে দলটি ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্ত হন শেখ মুজিবর রহমান। তিনি একই পদে অধিষ্ঠিত থাকেন ষাটের দশকের মধ্যভাগ পর্যন্ত। অত:পর তিনি সভাপতি পদে এবং তাউদ্দিন আহম্মেদ সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন।
ইতোমধ্যে মওলানা ভাসানী ও শেখ মুজিবর রহমানের এবং দলভূক্ত কমিউনিষ্টদের সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় ১৯৫৬ সালে “আওয়ামী মুসলিম লীগ ” থেকে “মুসলিম” শব্দ বর্জন করে অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠা প্রত্যাশী দলে পরিণত হয় এবং ষাটের দশকের মধ্যভাগে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রবর্তনের নীতিও আওয়ামী লীগ গ্রহণ করে।
১৯৫৩ সাল থেকে শুরু করে পূর্ব বাংলার সংঘটিত তাবৎ গণ আন্দোলনের নেতৃত্বেও থাকে আওয়ামী লীগ।
এভাবে শেখ মুজিবর রহমান তাঁর রাজনৈতিক জীবনে ধারাবাহিকতা বজায় রাখার সাথে সাথে গ্রহণ-বর্জনের মধ্য দিয়ে এব অপূর্ব অসাধারণ সৃজনশীল জননেতায় পরিণত হন। পরিত্যাগ করেন সাম্প্রদায়িক রীতি আর গ্রহণ করেন অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষতার রাজনীতি। পুজিবাদী গতানুগতিক শোষণ মূলক অর্থনীতির পরিবর্তে গ্রহণ করলেন সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি ও দলীয় মেনিফেষ্টোতে।
সংগঠন আন্দোলন সংগ্রামে নানা সময়ে নানাবিধ গ্রহণ-বর্জনের মাধ্যমে এক অসাধারণ গতিশীলতা নজির বিহীন ভাবে প্রবর্তন পেতে, শেখ মুজিব নিজেকে বাঙালি জাতির প্রাণের অন্তরের গভীরে বিশাল একটি স্থান দখল করে নেন চিরস্থায়ীভাবে একটি স্থান তিনি তাঁর নেতৃত্বকে এক অসীম উচ্চতায় নিয়ে যেতেও সক্ষম হন।
৭ মার্চে প্রদত্ত জাতির উদ্দেশ্যে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসমুদ্রে প্রদত্ত তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণের তাৎপর্য্য উল্লেখ করতে গিয়ে যে পটভূমির উল্লেখ করলাম তা নেহায়েত প্রয়োজন মনে করেই করেছি। উদ্দেশ্য সবার স্মৃতিতে তা তুলে আনা এবং বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের কাছে ঐ ভূমিকা শিক্ষণীয় একটুকরো মূল্যবান ইতিহাস পারিবেশন করা।
গোটা ষাটের দশক জুড়ে চলছিলো সমগ্র পাকিস্তান ব্যাপী কঠোর সামরিক শাসন জেনারেল আইউব খানের অধীনে। বাঙালির বুকে নেমে এসেছিল দীর্ঘ মেয়াদী এক নির্য্যতনের দশক। কারা নির্য্যাতন, লঠি, গুলি, টিয়ারগ্যাস, সংখ্যালঘু নির্য্যাতন, দেশ থেকে সংখ্যালঘুদেরকে বিতাড়ন, শত্রু সম্পত্তি আইন নামক বৈষম্য মূলক সাম্প্রদায়িক আইন প্রবর্তন বাঙালির বুকে দুঃস্বপ্ন হিসেবেই নেমে এসেছিল। আজও সে ক্ষয়ক্ষতির হিসেব কেউ করেন নি। অপরপক্ষে ঐ নির্য্যাতন জুলুম প্রভৃতির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও সামরিক শাসনের অবসান ও সংসদীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবীতে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ও অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ এর নেতৃত্বে পরিচালিত ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) এর যৌথ নেতৃত্বে বা কখনও পৃথকভাবে পরিচালিত হতে থাকে তীব্র গণ আন্দোলন। একই সাথে অবিলম্বে সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সাধারণ নির্বাচন ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবীও জোরে সোরে উত্থাপিত হয়।
ইতোমধ্যে ১৯৬৩ সালে বৈরুতের এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ নেতা হোসনে শহীদ সোহরাওয়াদী পরলোক গমন করায় বঙ্গবন্ধু হয়ে দাঁড়ান আওয়ামী লীগ ও বাঙালীর একক ও একছত্র নেতা।
শেষ পর্য্যন্ত লৌহমানব আইউবকে সরিয়ে দিয়ে জেনারেল ইয়াহিয়া ক্ষমতা দখল করে ঘোষনা দিতে বাধ্য হলেন, ‘১৯৭০ এ সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সারা পাকিস্তান ব্যাপী সাধারণ নির্বাচন, এক ইউনিট বাতিল ও সকল প্রদেশের প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের স্বীকৃতি। সামরিক শাসকদের ধারণা ছিল পূর্ব বাংলায় সর্বাধিক আসনে আওয়ামী লীগ জিতলেও , সিন্ধু, পাঞ্চাব, বেলুচিস্তান ও উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ মিলে পশ্চিম পাকিস্তানের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা একচেটিয়াভাবে অর্জণ করে পূর্ব বাংলার সামান্য যে ক’টি আসন মুসলিম লীগ পাবে তাই দিয়ে পশ্চিম পাকস্তিানী সংখ্যগরিষ্ঠতা বজায় থাকবে।
কিন্তু ফলাফল ঘটলো একেবারেই বিপরীত। পূর্ব বাংলার নিবার্চনী ফলাফলে আওয়ামী লীগের একচেটিয়া বিজয়ের ফলে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগই সমগ্র পাকিস্তানে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করায় সরকারী প্রতিশ্রুতি ও আইনের বিধান অনুযায়ী ত্বঙ্গবন্ধর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার দাবীদার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রমাদ গমলো পাকিস্তানের সেনা শাসিত স্বৈরাচারী সরকার।
বঙ্গবন্ধু তাঁর দলীয় পার্লামেন্টারী পার্টির সভায় সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচিত হয়ে অনুষ্ঠানিকভাবে দাবী জানলেন দ্রুত শান্তপূর্ণভাবে তাঁর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে। সমগ্র বাংলার মানুষ অকুণ্ঠভাবে এই দাবী সমর্থন জানালো। তদুপরি বেলুচিস্তান ও উত্তর পাশ্চিম প্রদেশে ওয়ালী ন্যাপ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জিতে বঙ্গবন্ধুর ঐ দাবীর প্রতি সমর্থ জানায়।
এবারে পাঞ্চারের নেতা জুলফিকার আলী ভূট্টোর আবির্ভূত হন ভিন্ন দাবী নিয়ে। তিনি যেহেতু সমগ্র পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যা গরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়েছে তাই তিনি বঙ্গবন্ধুর নিখিল পাকিস্তান একক নেতৃত্ব মানতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ছয় মাস বঙ্গবন্ধু ও ছয় মাস ভুট্টো প্রধান মন্ত্রী হয়ে পাকিস্তানী কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালনার অদ্ভুত দাবী জানিয়ে বসলেন সামরিক শাসকদের ইন্ধনে। সারা পাকিস্তানের কোন গণতন্ত্রে বিশ্বাসী মানুষ বা দলই ভূট্টোর দাবী সর্মথন না করে বঙ্গবন্ধুর হাতে অবিলম্বে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবীতে প্রবল আন্দোলন গড়ে তোলেন।
এই সুযোগে সামরিক সরকার এক দিকে সংসদ অধিবেশন ডেকে বঙ্গবন্ধু সহ পাকিস্তানের সকল দলের বিজয়ী নেতাদেরকে আপোষ আলোচনার প্রস্তাব দিলে সকলে তা গ্রহণ করেন। আলোচনায় বসতে রাজী হলেও বাঙালীয় ছয় দফার প্রশ্নে আপোষ নেই এ কথাও বঙ্গবন্ধু জানিয়ে দিলেন। ওয়ালী মোজাফ্ফর ন্যাপ ও গোপন কমিউনিষ্ট পার্টি বঙ্গবন্ধুর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষে দৃড় অবস্থানগ্রহণ করলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সামরিক শাসকেরা প্রমাদগণে। তারা আপোষ আলোচনার নামে গোপনে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও হাজার হাজার সৈন্য পূর্ববাংলায় আনতে সুরু করে। অপরদিকে পূর্ব বাংলায় আন্দোলনরত মানুষদেরকে স্থানে স্থানে গুলি চারিয়ে হত্যাকরতে ও ভয় দেখাতে সুরু করে। বারংবার সংসদ অদিবেশনের তারিখও পাল্টাতে থাকে।
এহেন পরিস্থিতে সৃষ্ট জটিলতার মুখে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন তা বস্তুত: আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হিসেবেই বিবেচিত হয়। আজও ঐ ভাষণ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষণ।
বঙ্গবন্ধু বলেন, কিভাবে বাঙালীকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অমান্য করে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বাঙালীর উপর ঝাাঁপিয়ে পড়েছে। ১৭০ এর বিজয়কে নস্যাতৎ করে সামরিক শাসন অব্যাহত রাখার ও বাঙালী নিধনের পথ ধরে তারা অগ্রসর হচ্ছে।
বলিষ্ঠ কণ্ঠে বঙ্গবন্ধু জানান, “আর যদি একটা গুলি চলে আমার লোকের উপরে” বা “আমি যদি আর হুকুম দেবার নাও পারি বা “যার যা আছে তাই নিয়ে ” বা “আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না – বাংলার মানুষের অধিকার চাই” বা “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম -এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম” প্রভৃতি।
এই বক্তব্যের সাথে লাখো জনতার মুহুর্মুহু করতালি ও সমর্থনে কেঁপে ওঠে পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী আর স্বাধীনতায় লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হন সমগ্র বাঙালি জাতি। সর্বত্র প্রকাশ্যে ও গোপনে অস্ত্র প্রশিক্ষণ, অশ্রুপূর্ণ অসহাযোগ আন্দোলন প্রভৃতি নতুন মাত্রা অর্জন করে। শেষতক ২৫ মার্চ রাতে তারা চালায় আক্রমণ।
- প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। কাগজ২৪–এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য কাগজ২৪ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।