রণদা প্রসাদ হত্যা মামলায় মাহবুবুর রহমানের মৃত্যুদণ্ড
অনলাইন ডেক্স । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
মুক্তিযুদ্ধের সময় দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা ও তার ছেলেসহ সাতজনকে হত্যার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় টাঙ্গাইলের মো. মাহবুবুর রহমানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত। আসামি মাহবুবুর রহমানের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম।
এর আগে ২৪ এপ্রিল এ বিষয়ে রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রেখেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। পরে ২৬ জুন রায় ঘোষণার জন্য ২৭ জুন দিন ঠিক করেন ট্রাইব্যুনাল।
এ মামলার আসামি মাহবুবের বিরুদ্ধে অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন, হত্যা-গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ৭০ বছর বয়সী মাহবুব একাত্তরে মির্জাপুর শান্তি কমিটির সভাপতি বৈরাটিয়া পাড়ার আবদুল ওয়াদুদের ছেলে। তিনি ও তার ভাই আবদুল মান্নান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার বাহিনীতে ছিলেন।
অভিযোগপত্রের তথ্য অনুযায়ী, মাহবুব এক সময় জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক ছিলেন। তিনি তিনবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হলেও প্রতিবারই পরাজিত হন।
২০১৬ সালের ১৮ এপ্রিল মামলাটির তদন্ত শুরুর পর ট্রাইব্যুনাল থেকে পরোয়ানা জারি হলে ওই বছরের নভেম্বরে মাহবুবকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি এখন গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে আছেন।
ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা জানায়, আসামি মাহবুব ১৯৭১ সালের ৭ মে মধ্যরাতে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ২০-২৫ সদস্যকে নিয়ে রণদা প্রসাদ সাহার বাসায় হামলা চালান। তারা রণদা প্রসাদ সাহা, তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা, তাদের ঘনিষ্ঠ গৌর গোপাল সাহা, রাখাল মতলব ও বাসার দারোয়ানসহ সাতজনকে তুলে নিয়ে হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেন। তাদের লাশ আর পাওয়া যায়নি।
এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় আসামি মাহবুব মির্জাপুরের ভারতেশ্বরী হোমসের আশপাশের এলাকা, নারায়ণগঞ্জের খানপুরের কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ও তার আশপাশের এলাকা এবং টাঙ্গাইল সার্কিট হাউস এলাকায় বিভিন্ন অপরাধ সংগঠন করেন। গত বছর ১২ ফেব্রুয়ারি মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন। অভিযোগ আমলে নেওয়ার পর ২৮ মার্চ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে তার বিচার শুরু হয়।
মামলাটির যুক্তিতর্ক ও শুনানি শেষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি অভিযোগ এনেছিল প্রসিকিউশন। আমরা মনে করি, তিনটি অভিযোগই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। তদন্ত কর্মকর্তাসহ এ মামলায় ১৩ সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন।যেসব সাক্ষ্য-প্রমাণ আমরা উপস্থাপন করেছি তাতে আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়েছি।