পাবনায় রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চলছে, জমজমাট অবৈধ বিড়ি ব্যবসা
আর কে আকাশ, পাবনা, বিশেষ প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
পাবনা জেলার বিভিন্ন এলাকায় সরকারি শুল্ক ও কর ফাঁকি দিয়ে পুনঃব্যবহৃত ব্যান্ডরোল ও জাল ব্যান্ডরোল লাগিয়ে বিড়ির ব্যবসা জমজমাটভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। পাবনার বিভিন্ন হাটবাজার ও দোকানে নকল ব্যান্ডরোল ও ব্যান্ডরোলবিহীন এমন কি নিবন্ধনবিহীন বিড়িতে সয়লাব হয়ে গেছে। পুনঃব্যবহৃত ব্যান্ডরোল ও জাল ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে ১০-১৫ টি ব্রান্ডের বিড়ি পাবনা জেলার বিভিন্ন স্থানে কম মূল্যে বিপুল পরিমাণ অবৈধ বিড়ি বাজারজাত করা হচ্ছে। প্রশাসন কে হাত করে এবং তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে অসাধু বিড়ি ব্যবসায়ী ও কোম্পানি এসব অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করে লুটে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকার সরকারি রাজস্ব। এসব অসাধু বিড়ি ব্যবসায়ী ও কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ধরণের যথাযোথ পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না কোন প্রশাসন। একদিকে সরকার যেমন বছরে বিপুল পরিমান রাজস্ব হারাচ্ছে আর অন্যদিকে প্রকৃত রাজস্ব প্রদানকারী বিড়ি শিল্প মালিকরা চরম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে সিহাব বিড়ি, নুরজাহান বিড়ি, মধু বিড়ি, চাষী বিড়ি, স্পেশাল রাজা বিড়ি, নুরমহল বিড়ি, জামাল বিড়ি, রজনী বিড়ি, নাহিদ বিড়ি, মুরাদ বিড়ি, নিউ সাথী, রাজা বিড়ি ব্রান্ডের বিড়ি কোম্পানিগুলো পুনঃব্যবহৃত ও জাল ব্যান্ডরোল লাগিয়ে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে। এছাড়াও মন্টু বিড়ি, মাসুদ বিড়ি, বাবু বিড়ি, নিবন্ধনহীন বিড়িও রয়েছে এই তালিকায়। তারা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সরকারের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে পাবনাসহ বিভিন্ন জেলায় বিড়ি বাজারজাত করে আসছে দিনের পর দিন ধরে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুনঃব্যবহৃত ও জাল ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে ২৫ শলাকার প্রতি প্যাকেট ৫-৮ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ সর্বোচ্চ ১০ টাকা মূল্যে বিড়ি বিক্রয় করছে। অথচ ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট অনুযায়ী ২৫ শলাকার প্রতি প্যাকেট বিড়ির সরকার নির্ধারিত মূল্য ১৮ টাকা। এরমধ্যে রাজস্ব বাবদ (ব্যান্ডরোলের মূল্য ৮.১০ টাকা, অগ্রীম আয়কর ০.৮১ টাকা এবং স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ ০.১৮ টাকা সর্বমোট ৯.০৯ টাকা) সরকারকে ৯.০৯ টাকা দিতে হয়। এছাড়া বিড়ি শ্রমিকদের পারিশ্রমিক, বিড়ি তৈরির কাগজ ক্রয় এবং তামাক ক্রয়সহ আরও অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় উৎপাদন খরচ রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক বিড়ি ব্যবসায়ী জানান, আসল ব্যান্ডরোল লাগিয়ে বিড়ি বিক্রি করলে তেমন লাভ হয় না, বেশির ভাগই লস হয়। তাই নকল ব্যান্ডরোল লাগিয়ে সিংহভাগ বিড়ি ব্যবসায়ী বিড়ি বাজারজাত করে। তবে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এই কাজ অতি সহজেই তারা বরাবরই করে আসছেন বলে তিনি জানান।
জেলা বিড়ি শিল্প মালিক সমিতির এক প্রতিনিধি জানান, আমরা সরকারের বিভিন্ন শুল্ক ও কর পরিশোধ করা সত্ত্বেও রাজস্ব কর্মকর্তাদের বিভিন্ন অসহযোগীতা ও হয়রানির শিকার হই। অথচ মূলত কিছু অসাধু রাজস্ব কর্মকর্তার যোগসাজোসে এমন অপকর্ম চালিয়ে এই সকল অসাধু বিড়ি ব্যবসায়ীরা আজ বিড়ি শিল্প কে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে। আর এভাবে চলতে থাকলে পাবনার বিড়ি শিল্প লোকসানের মুখে ধ্বংস হয়ে যাবে, অসংখ্যা মালিক ও শ্রমিক পরিবার পথে বসবে। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপরে উচিত সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবং জাল-নকল ও ব্যবহৃত ব্যান্ডরোল দিয়ে তৈরিকৃত উপরোক্ত বিড়ি কোম্পানী ও মালিকদের রিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
এ বিষয়ে পাবনা জেলা বিড়ি শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মো. শাহাদৎ হোসেন বলেন, পাবনাসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি জেলার বিভিন্ন স্থানে অসাধু বিড়ি ব্যবসায়ী ও কোম্পানী পুনঃব্যবহৃত ও জাল ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক কম মূল্যে বিভিন্ন ব্রান্ডের বিড়ি বাজারজাত করছে আমাদের জেলাতেও। এতে সরকার বছরে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে আর আমরা প্রকৃত রাজস্ব প্রদানকারী বিড়ি শিল্প মালিকরা চরম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। আবার এরা লে-আউট লিবন্ধিত কারখানার বাইরে নিজেদের সুবিধাজনক স্থানে বিড়ি উৎপাদন ও ব্যান্ডরোল হিসাবের চালান ও রেজিষ্টার নির্ধারিত অফিসে না রাখার কারণে কারা রাজস্ব প্রদানে প্রবৃদ্ধি দিচ্ছে বা কারা ঘাটতি রেখেই ব্যবসা করছে তা আমরা বুঝতে পারছিনা। কারণ সরকারি নিয়মানুযায়ী বিড়ি ব্যবসায়ীকে প্রতি বছর অন্তত ১৩ শতাংশ রাজস্বের প্রবৃদ্ধি পরিশোধ করতে হয়। আর এই তথ্য জেলা বিড়ি শিল্প মালিক সমিতির কাছে অজানা থাকায় তারা ওই সকল বিড়ি ব্যবসায়ীর বাস্তবিক বিক্রয়ের চিত্র জানা শর্তেও যেমন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না, তেমনি কাস্টমস্ সহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকেও কোন প্রকার সহযোগিতা করতে পারছে না। তাই অসাধু এই ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাজশাহী বিভাগের কমিশনার, কাস্টমস্ এক্সাইজ ও ভ্যাটকমিশনারেট বিভাগ বরাবর আমরা আবেদন করেছি।