সেলিনা জাহান প্রিয়ার রহস্য অণু গল্প- রাজ প্রসাদের সেই নুপুর

রাজ প্রসাদের সেই নুপুর

—————————– সেলিনা জাহান প্রিয়া

 

সজল ঘুম থেকে উঠে অবাক হল বাসায় কেউ নেই । ভাবতে লাগলো মা হয়ত অন্য ফ্ল্যাটে গেছে । বাবা অফিসে চলে গেছে হয়ত । ছোট বোন লিলি কি তাহালে স্কুলে ?
অল্প সময়ে মধ্য সব চিন্তা করে নীল । কিন্তু অবাক হল যখন দেখল যে অন্য কোন বাসায় । তাঁর চোখ গেল খাটে এটা তাঁর না। সকল ফার্নিচার ভিন্ন । বিশাল বড় একটা বাড়ি । জানালায় চোখ যেতেই সে আরও অবাক এটা যেন কোন রাজ বাড়ি ।
তাহালে কি সে স্বপ্ন দেখছে । স্বপ্নের মধ্য তো স্বপ্ন মনে করা সম্ভব না। ঘর থেকে বের হয়ে সে বারান্দায় এলো । জীবনে এত সুন্দর বাড়ি আগে সে কোন দিন দেখে নাই । একটু ভয় পেল কোন মানুষ নেই কেন । কিন্তু একটা ঘর থেকে তবলার শব্দ আসছে । সেই শব্দ শুনে সে খুঁজতে লাগলো কোন ঘর থেকে সেই শব্দ আসছে তা বের করার জন্য । এত বড় বাড়ি কোন কিছুই সে চিনে না। এমন সময় দেখল একজন তাকে দেখে সালাম দিয়ে দূরে সরে দাঁড়ালো । সজল বলল
– কে আপনি ।
— হুজুর আমি আপনার গোলাম আছি ।
— গোলাম !
— মাথা নিচু করে কেন !
— হুজুর আপনি মনিব আছেন । মনিবের সামনে মাথা উচু করা পাপ হবে ।
— ওকে ঠিক আছে । কিন্তু তবলার শব্দ আসছে কোন ঘর থেকে । আমাকে নিয়ে চল। বাড়িতে আর কি কোন মানুষ নেই ?
— হুজুর আপনি অন্ধর মহলে । এখানে সবার আসতে পারে না।
— ঠিক আছে ।
— আমি কে ?
— হুজুর আপনি কি বলেন ? আপনি আমাদের রাজার পুত্র আছেন ।
— আপনার হতে এটা কি ?
— হুজুর আপনার পায়ের জুতা । আপনি খালি পায়ে আছেন ।
অবাক হল সত্যি তো !! ও যেই জুতা নিয়ে নিয়ে আসছে খুব সুন্দর । জুতা গুলো পায়ে দিয়ে বলল সুন্দর । তা নিয়ে চল আমাকে যেই ঘর থেকে শব্দ হচ্ছে ।
— জি হুজুর চলেন । খুব আদবের সহিত সজল কে নিয়ে সে হাটতে লাগলো । সজল অবাক হয়ে শুধু দেখছে অনেক নারী বিষের ধরনের শাড়ী পরা । সবাই কোন না কোন কাজ করছে । তাকে দেখা মাত্র সবাই সরে দাঁড়াচ্ছে । যে ঘর থেকে তবলার শব্দ আসছিল সে সেই ঘরে প্রবেশ করতেই তবলা বাজানো থেমে গেল । উঠে সবাই সালাম দিল । প্রায় দশ জন মানুষ । একটা মেয়ে সামনে আর ঐ মেয়ের পিছনে বেশ কিছু মেয়ে । সবাই হাঁটু ঘেরে বসা । সবাই চুপ । সজল বলল- এই মেয়ে উঠে দাড়াও ।
মেয়েটা সালামের সহিত উঠে দাঁড়ালো । সজল সবার দিকেই তাকাতেই সবাই মাথা নিচু করে সালাম দিয়ে ঘরের বাহিরে চলে গেল । মেয়েটা চোখে দিকে তাকিয়ে অবাক হল । তাঁর গায়ের অলঙ্কার পায়ের ঝুমকা নুপুর । বেণী করা চুল । লেহেঙ্গা পরা । কিন্তু তাঁর চোখ দিয়ে পানি ঝরছিল ।
— কি ব্যাপার কান্না করছেন কেন ?
— কে আপনি ?
— মেয়েটা আবার মাথা নিচু করে বলল- হুজুর আমি একজন নারী ।
— তা তো দেখে বুঝতে পারছি ।
— তাহালে হে নারী আপনি বলুন আমি কে ?
— হুজুর আমাকে কেন লজ্জা দিচ্ছেন । আমি এই আপনার বাবার কেনা একজন বাদি তবে আমাকে নর্তকী হিসাবে নাচ শিক্ষা দেয়া হচ্ছে ।
— অহ । তবে চোখে জল কেন ।
— কাঁদতে কাঁদতে বলল হুজুর । আমি একজন বাঞ্জারান নারী । আমাকে আমাদের দলের এক লোক আপনারদের নিকট বিক্রয় করে দিয়েছে । আমার পিতা মাতা আমার জন্য কাঁদতে কাঁদতে অন্ধ হবার পথে । কিন্তু এ রাজ বাড়ি থেকে আমার মুক্তি নেই । আজ দু বছর হল । আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি যদি আপনি আমাকে মুক্তি দেন । আমি যদি আমার বৃদ্ধা পিতা মাতার নিকট যেতে পারি । তবে কথা দিলাম এই বাদি । আমার পিতা মাতার মৃত্যুর পর বাকি জীবন আমি আপনার দাসী হিসাবে থাকব । আমি ছারা আমার পিতা মাতার কেউ নেই ।
আর প্রতি রাতে আমি আপনার সাক্ষাৎ পাওয়ার জন্য প্রভুর নিকট অনেক কেঁদেছি । হয়ত প্রভু আমার ডাক শুনেছে ।
— সজল ঘরে দরজার দিকে তাকাতেই । একজন প্রহরী এসে সালাম দিল । সজল বলল – ওকে তাঁর দলের নিকট পৌছে দেয়া হউক ।। মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে সজলের পায়ের নিকট এসে বসল । দু হাতে সজলের পা ছুয়ে বলল- আমি নিজেকে আপনার নিকট অর্পণ করলাম । আমি বাঞ্জারান মেয়ে আমার নাম মোহিনী । মেয়েটি তাঁর পা থেকে একটা নুপুর খুলে সজলের পায়ে কাছে রাখল । এর মধ্য একজন সালাম দিয়ে বলল হুজুর পালকি এসে গেছে । মেয়েটি চোখের পানি মুছে সালাম দিয়ে নিয়ে চলে গেল । যাবার সময় বার বার সজলের দিকে ভেজা চোখে তাকিয়ে কাঁদছিল ।
সজল সেই ঘর থেকে বের হয়ে দেখল অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে । একজন ভয়ে বলল – হুজুর আপনি আপনার ঘরে জান । রাজা মহাশয় খুব ক্ষিপ্ত হয়েছেন আজ আপনার উপর । কেন আপনি মোহিনী কে মুক্তি দিয়েছেন । রানি মা খুব চিন্তায় আছে । একজন সজল কে তাঁর ঘরে নিয়ে গেল । হাতে মেয়েটির পায়ের সেই নুপুর । ঘরে এসে দেখে তাঁর খাবার নিয়ে অনেক নারী দাঁড়িয়ে । সবার দিকে তাকাতেই খাবার রেখে সবাই সালাম দিয়ে বাহিরে গেল । সজল পায়ের জুতা পরে সজল খাটে শুয়ে পড়লো । নুপুর টা বালিশের নিচে রাখল । ভাবতে লাগলো এটা কোথায় এলাম । আমি কাউকে চিনি না সবাই আমাকে চিনে । আসলে মনে হয় আমি স্বপ্ন দেখছি । ভাবতে ভাবতে সজলের ঘুম চলে আসে ।
হাঁটৎ একটা ডাকে সজলের ঘুম ভাঙল । সজলের মা কি রে পায়ে জুতা পরে বিছানায় কেউ ঘুমায় ।
ভার্সিটিতে যাবি না ? সজল ছানা ভরা চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে । আরে সত্যি ই তো তাঁর পায়ে সেই জুতা । তারা তারি বালিশের নিচে হাত দেয় । অবাক ও ভয়ে গা কাঁটা দিয়ে উঠে । দেখে সেই একটা ঝুমকা নুপুর । সজলের মা বলল – লিলি কে তোমার আব্বু স্কুলে নিয়ে গেছে । এত বেলা করে কেউ ঘুম থেকে উঠে এখন সকাল !! সজল নাস্তা করে নুপুর টা পকেটে নিল । ভাবতে লাগলো এটা কি করে সম্ভব । কাউকে বললে তাকে পাগল বলবে । এর মধ্য আবার তবলার শব্দ । কে তবলা বাজায় ? আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে একটা মেয়ে এসেছ । উনাদের ভাগ্নি হয় । রাজশাহী থেকে শিল্পকলা একাডেমীতে কি জানি নাচের প্রতিযোগিতা আছে ঐ খানে সেও প্রতিযোগী । সজল শুনে খুব অবাক হয় । দরজা খুলে পাশের ফ্ল্যাটে কলিংবেল বাজায় । দরজা খুলে কাজের মেয়ে । সজল তবলার সাথে তাল মিলয়ে পা ফেলে আসতে আসতে মেয়েটার রুমে দিকে যায় । মেয়েটা নাচছে তো নাচছে । সজল মেয়েটা দিকে তাকায় কি সুন্দর মেয়ে সেই বেণী করা চুল । সজল মেয়েটা পায়ের দিকে তাকায় । অবাক হয়ে দেখে পকেটের নুপুরের মত তাঁর পায়ের নুপুর । মেয়েটা সজলের দিকে তাকিয়ে নাচ থামায় । সজল পকেট থেকে নুপুর টা বের করে। মেয়েটি অবাক হয়ে নুপুরে দিকে তাকিয়ে থাকে।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!