লাইলি মজনু
প্রেম কাহিনী অথবা রোমান্টিক জুটির কথা উঠলে আমাদের দেশে সবার আগে যাদের নাম উচ্চারিত হয় তারা হলেন লাইলি-মজনু।
মধ্যযুগীয় ইরানি কবি Nizami of Zanje নামে যিনি পরিচিত, তিনি আরবীয় সামাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে রচনা করেন, Layla and Majnun is a tragic tale abot nattainable love । প্রেমের ইতিহাসে, বিশেষ করে এই উপমহাদেশীয় মুসলিম সমাজে কালজয়ী হয়ে ওঠে দুটি চরিত্র লাইলী ও মজনু। স্বর্গীয় প্রেমের প্রতীক মানা হয় এই জুটিকে। অধরা প্রেমের এক বিয়োগন্ত গাঁথা এ কাব্য। কাব্য লিখিত হওয়ার আগে শতাব্দী থেকে শতাব্দীতে এই মিথ আরবে প্রচলিত ছিল। পাণ্ডুলিপি এবং সিরামিকে মূর্ত চিত্রে জীবন্ত হয়ে ছিল এই মিথ।
লাইলি ও মজনু আমাদের দেশে সবচেয়ে আলোচিত প্রেম কাহিনী। যদিও কালজয়ী এই প্রেমের কাহিনীর সত্যাসত্য নিরূপণ করা এখন অনেকটাই কষ্টসাধ্য। সময়ের বিবর্তনে নানা জাতি আর নানা দেশের মানুষের মুখে মুখে লাইলি-মজনুর গল্প বিবর্তিত হয়েছে নানাভাবে। এই অসাধারণ প্রেমকাহিনীর আছে অসংখ্য সংস্করণ। তবে মূল কাহিনী প্রায় সব জায়গাতেই এক। ভিন্নতা শুধু কাহিনীর উপাদানে। কাহিনীর সব সংস্করণেই নায়ক-নায়িকার মাঝে দুস্তর ফারাক এবং বেশির ভাগ কাহিনীতে নায়ক রাজপুত্র এবং নায়িকা এক বেদুইন সর্দারের মেয়ে। আর লক্ষ্য করার মতো বিষয়টি হচ্ছে, মজনু তার ‘মজনু’ নামে যুগে যুগে দুনিয়াজুড়ে আলোচিত হলেও অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন ‘মজনু’ তার আসল নাম নয়। কয়েস (কায়েস) বিন ওমর নামের প্রাচীন আরবের বিখ্যাত এক কবি তিনি। তার জীবনের প্রেমকাহিনীর ছায়া থেকেই এর জন্ম। যাই হোক, লায়লির প্রেমে উন্মাদ হয়েছিলেন বলেই তার আরেক নাম মজনু (মজনু বা মাজনুন নামের অর্থটাও কিন্তু তাই- প্রেমন্মাদ)। এমনকি নির্ভরযোগ্য বেশ কিছু সংস্করণে নায়কের নাম ‘কয়েস’ই রাখা হয়েছে। উমাইয়া শাসন আমলে অর্থাৎ ৭ শতকের এ প্রেম কাহিনী সাহিত্যে স্থান পায় ১২ শতকে মহাকবি নেজামির ‘লাইলি মজনু’ সাহিত্যকর্মে।
স্বর্গীয় প্রেমের প্রতীক লাইলি-মজনু জুটি, বিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে লাইলী এবং কায়েস একে-অন্যের প্রেমে পড়েন। তাদের প্রেম সমাজের নজরে এলে দুজনের মধ্যে দেখা-সাক্ষাৎ বন্ধ হয়ে যায়। কথিত আছে, লায়লির পিতা মজনুকে আহত করলে লায়লিও আহত হতো, এমননি ছিল তাঁদের সেই স্বর্গীয় প্রেম। নিঃসঙ্গ কায়েস মরুপ্রান্তরে নির্বাসনে যান। বিরহকাতর কায়েসের ক্ষ্যাপাটে আচরণের জন্য তাকে ডাকা হতো মজনু (পাগল) নামে। মরুভূমিতে এক বৃদ্ধ বেদুইন লড়াই করে লাইলীকে পাওয়ার জন্য কায়েসকে প্রেরণা দেন। লাইলীর গোত্র ক্ষমতাচ্যুত হয়, কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে যায়। লাইলীকে তার পিতা জোর করে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর লাইলী মজনুর কাছে ফিরে আসে, কিন্তু প্রচণ্ড দুঃখ আর অনাহারে মজনু মারা যায়। লাইলীও তার ভালোবাসা মজনুর পথ অনুসরণ করে।
মৃত্যুর পর তাদের পাশাপাশি সমাধিস্থ করা হয়। স্বর্গে গিয়েও ভালোবাসার মানুষকে চাওয়ার তৃষ্ণার্ত হৃদয়ের আকুতি এই কাহিনীকে অমর করে রেখেছে। ‘দুই দেহ এক আত্দা’ নামক বহুল প্রচলিত কথা এই যুগলের অনুপ্রেরণায় পাওয়া।