সেলিনা জাহান প্রিয়ার ছোট গল্প: লাভ অ্যাট ফাস্ট সাইট
লাভ অ্যাট ফাস্ট সাইট
———————সেলিনা জাহান প্রিয়া
কোন এক শীতের সকাল। ছেলেটা একটা শপিং কমপ্লেক্সের ভিতর এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি করতে থাকে। একসময় তার চোখ পড়ে যায় একা একটা মেয়ে কাকে জানি অনেকক্ষণ যাবত খুঁজছে। মেয়েটা সেল ফোন টা খুলে ব্যাটারি দিকে একটা মুখ ভেংচি কাটলো। মেয়ের হাসিটা ছিল অপূর্ব রকমের সুন্দর, ছেলেটা প্রথম দেখায় মেয়েটার প্রেমে পড়ে যায়। এটাই মনে হয়, Love At First Sight. ছেলেটা সামনে এগিয়ে বলল আমার ফোন থেকে কল করতে পারেন। মেয়েটা কোন কথা না বলে ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিল। মেয়ে বলল – আমার নাম্বার মনে নেই। আমার বান্ধবিদের সাথে এসেছি। এত বড় শপিং মল খুঁজে পাচ্ছি না।
— কত ক্ষণ যাবত।
– এই যে ৩০ মিনিট।
– এখন বলুন আমি একা মেয়ে মানুষ কি করি?
— আরে এটা কোন সমস্যা। ঐ ফোনের দোকানে চলুন। ওদের কাছে চার্জার আছে।
— আমার কাছে টাকা নেই চারজার কেনার।
– আরে কিনতে হবে না। চলুন আমার সাথে।
ছেলেটা মেয়েটা কে নিয়ে মোবাইলের দোকানে যায় সেল ফোন চার্জ দেয়।
ছেলেটা একটা চুইং গাম দেয়। মেয়েটা হাসি মুখে গ্রহন করে।
মেয়েটা ফোনের পর ফোন দেয়। কিন্তু যাকে ফোন দিচ্ছে সে ফোন রিসিভ করে না।
মেয়েটা কে একটা সি অ্যান জি ভাড়া করে দেয়। মেয়েটা শুধু বলে আমার বাসা উত্তরা রাজলক্ষির পিছনে।
ছেলেটা রোজ মটর সাইলে উত্তরা যায় কোন দিন সকালে। কোন দিন বিকালে, কোন দিন রাতে। আর মেয়েটা কে খুঁজে।
মেয়েটাও প্রায় আসে শপিং মলে মনে মনে ছেলেটাকে খুঁজে।
না কারো সাথে কারো দেখা হয় না।
ছেলেটা তার বোন কে নিয়ে বিশ্ববিদালেয়ে যায়। ঠিক মেয়েটা তার বড় ভাইয়ের সাথে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে। অবাক হয়ে দু জন দু জন কে দেখে। কিন্তু অজানা ভুলে কেউ কারো সাথে কথা বলে না। মেয়েটি ভাবে ওর গার্ল ফ্রেন্ড কষ্ট পাবে। ছেলেটা ভাবে না ওর বয় ফ্রেন্ড যদি মাইন্ড করে।
শুধু দুজন দুজনের দিকে চেয়ে থাকে। মেয়েটা যখন গাড়িতে চরে। ছেলেটা বোন বলে কি ব্যাপার ভাইয়া এই মেয়েটার দিকে কেন এভাবে চেয়ে আছো। ছেলেটা বলে
– আরে পাগল আমি তো রোজ এই মেয়েটাকে খুঁজি।
— তাহলে কথা বললে না কেন ওর সাথে।
–ওর সাথে তো দেখা যায় বয় ফ্রেন্ড।
— আমি তোমার কি হই?
— তুই আমার বোন।
— তাহলে তো ঐ মেয়েটার ভাই ও হতে পারে!
— ঠিক তো। তুই নাম মটর সাইকেল থেকে। এই নে গাড়ি ভাড়া করে যা।
ছেলেটা গাড়ি খুঁজতে থাকে। একটা সিগনালে মেয়েটাকে পায়। গাড়িতে চুপ করে বসে আছে। কিছু বলে না, শুধু হালকা ইশারা দেয়। ছেলেটা হাসে, মেয়েটা ও হাসে।
একসময় দেখে মেয়েটা নেমে গেল বাসার সামনে ও দূর থেকে দেখে। মেয়েটা ঘাড় ফিরিয়ে দেখে।
ছেলেটা গেইটের সামনে আসলেই দারোয়ান তাকে একটা কাগজ দেয় তাকে লিখা স্যাম টাইম স্যাম প্লেস।
ছেলেটা রাতে আর ঘুম যায় না বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ দেখে চাঁদ দেখে, গান শুনে। মেয়েটা ও তাই বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকে।
ছেলেটা খুব সকালে শপিং মলের সামনে চলে আসে তখন শপিং মল খুলে নাই। মেয়েটা আগেই চলে আসে, এসে দেখে ছেলেটা দাঁড়িয়ে, মেয়েটা হেসে ছেলেটা ও হাসে। মেয়েটা একটা চুইং গাম বের করে ছেলেটা কে দেয়।
[গল্পের এই পর্যায়ে এসে ছেলেটার আর মেয়েটার নামকরণ করা যাক। ধরা যাক ছেলেটার নাম অরন্য আর মেয়েটার নাম প্রিয়া।]
পরশুদিন বিকাল। এক ঘন্টা ধরে মেয়েটা কফিশপে অপেক্ষা করছে ছেলেটার জন্য। ছেলেটার অনুপস্থিতি দেখে একসময় মেয়েটা ডায়াল করে ছেলেটার ফোন নাম্বার। ছেলেটার বোন ফোন রিসিভ করে।
– হ্যালো
— অরন্য আছে? ওকে একটু দেওয়া যাবে?”
– কে বলছো তুমি?”
— আমি প্রিয়া”
– প্রিয়া, তুমি কি জান না ‘ গতরাতে ভাইয়া রোড অ্যাক্সিডেন্টে করেছে।
— ও এখন কোথায়
— হাসপাতালে।
প্রিয়া তারা তারি হাসপাতালে আসে। অরন্যের জ্ঞান ফিরে নাই। প্রিয়া অরন্যের কাছে আসে। অরন্যের হাতে হাত রাখে। কিছু সময় পড়ে অরন্য তার হাতের ছোঁয়ায় আস্তে আস্তে চোখ মেলে। এক জন অন্য জনের হাত ধরে রাখে। অরন্য তার পকেট থেকে একটা চুইং গাম বের করে দেয় কিন্তু চুইং গাম খুলে দেখে একটা কাগজ। তাতে লেখা আছে, “কেন জানি তোমাকে আমার অসম্ভব রকমের ভালো লেগে গেছে। আমরা কি কোন একদিন এক সাথে একটা সেলফি ছবি তুলতে পারি।