শিক্ষকদের নৈতিকতা
শিক্ষকদের নৈতিকতা
-মাহবুব এইচ শাহীন
শিক্ষকদের আমরা সম্মান করে থাকি। বাবা-মায়ের পরে শিক্ষকদের স্থান। শিক্ষকসমাজ একটি দেশের সামগ্রিক অবকাঠামো গঠনের প্রধান হাতিয়ার। ছাত্রছাত্রীদের লেখা-পড়ার পাশাপাশি সুশিক্ষা, সততা, নৈতিক চরিত্র গঠন, সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্র গঠনে শিক্ষকদের ভূমিকা অপরিসীম। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীকে আদর্শ মানুষরূপে গড়ে তুলবেন, এটিই জাতির প্রত্যাশা। অথচ অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই কিছু কিছু শিক্ষক বর্তমানে প্রশ্নফাঁস, কোচিং বাণিজ্য, নারী নির্যাতন এবং ধর্ষণে যুক্ত হচ্ছে। দৈনন্দিন পত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিকস মিডিয়াতে শিক্ষকদের অপকর্ম প্রকাশিত হচ্ছে।
মাদ্রাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যৌন হয়রানি আজ যেন নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজ বিভাগের ছাত্রীকে বেশি নাম্বার পাইয়ে দেবার প্রলোভন দেখিয়ে অনৈতিক কার্য সম্পাদন করা বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষকের যেন এখন নিত্যদিনের কাজে পরিণত হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, এসব অপরাধের জন্য তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। কখনও সেই তদন্ত কমিটি আলোর মুখ দেখে, কখনোবা দেখে না।
ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহারলাল নেহেরু বলেছিলেন, “একটি দেশ ভালো হয়, যদি সে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভালো হয়।” বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দেশের জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিকাশের কর্ণধার ভাবা হয়। কিন্তু কিছু সংখ্যক শিক্ষকের কর্মকাণ্ডে কেবল সেই স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্কিত করে না বরং তা পুরো শিক্ষকসমাজকে কলুষিত করে। মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষকতা পেশার মর্যাদায় এখন যেন পচন ধরেছে। অনেক সৎ ও নিষ্ঠাবান শিক্ষক রয়েছেন যারা কতিপয় শিক্ষকের কুকর্মে অপমানবোধ করেন।
কোচিং বন্ধ, গাইড বইয়ের ব্যবহার নিষিদ্ধ, নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টিতে সামাজিক আন্দোলন জরুরি। অভিভাবক, সুশীলসমাজ, শিক্ষাবিদ, শিক্ষক সংগঠনসহ সবাইকে নিয়ে এ আন্দোলন করতে হবে। নতুন প্রজন্মকে সততা, নিষ্ঠা, দায়বদ্ধতা, নৈতিক মূল্যবোধ ও দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করতে শিক্ষক সমাজের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, শিক্ষকদের সব ধরনের অনৈতিক কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে। কারণ তারা দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তোলার দায়িত্ব পালন করছেন।
রাজনৈতিক পরিচয়, অর্থ বিনিময়, পারিবারিক সম্পর্কে নিয়োগ পাওয়া স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই এধরনের ঘৃর্ণকাজে লিপ্ত হচ্ছেন বলে মনে করছি। তাই, শিক্ষক নিয়োগ এর ক্ষেত্রে সচ্ছতা প্রয়োজন এবং মহান এই পেশাকে কলংকমুক্ত করতে কঠোর আইন ও আইনের প্রয়োগ চালু করতে হবে। এজন্য সরকারের সুদৃষ্টি প্রয়োজন। তাই দেশে সরকার কর্তৃক প্রকাশিত বিভিন্ন নীতিমালার মতো শিক্ষকদেরও একটি নৈতিক আচরণ-বিধির নীতিমালা থাকা প্রয়োজন।
এবছরেও শিক্ষকদের নিয়ে কয়েকটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। তারমধ্যে নেতিবাচক খবরের পাশাপাশি ইতিবাচক খবরও আছে। গত ২৬ জানুয়ারিতে পত্রিকায় প্রকাশ- “বিদ্যালয়ে ইয়াবা সেবন করে হাতেনাতে ধরা প্রধান শিক্ষক”। ২৮ জানুয়ারিতে পত্রিকায় প্রকাশ-“গবেষণায় চৌর্যবৃত্তিতে সামিয়া রহমানসহ ঢাবির তিন শিক্ষকের পদাবনতি” । আবার, ২৫ জানুয়ারিতে পত্রিকায় প্রকাশ- “ছয় শিক্ষক পেলেন আদর্শ শিক্ষকের সম্মাননা”।
যেমন বাতির নিচে অন্ধকার, তেমন অন্ধকারের মাঝেও নিভু নিভু আলো দেখতে পাচ্ছি। তাই, এই কঠিন মুহুর্তে শিক্ষকদেরকেই দায়িত্ব নিতে হবে। কারন, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড ও উন্নতির পূর্বশর্ত।
লেখক-মাহবুব এইচ শাহীন/প্রকাশক ও সম্পাদক/কাগজ২৪