জামালপুরের পাঁচ গ্রামে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই
মারুফ রহমান, বিশেষ প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
জামালপুর বকশীগঞ্জ উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের ভারতীয় সিমান্তবর্তি পাহাড়ে ঘেরা বালুঝুরি, গাড়ামারা, সংনাথপাড়া, টিলাপাড়া, হাতিবেরকোনা, দিগলকোনা গ্রামে প্রায় ২৩০টি আদিবাসী পরিবারের শিশুদের জন্য একটি মিশনারি স্কুল ব্যতীত সরকারি কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শিক্ষা চাহিদা। কেননা শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। অথচ বকশীগঞ্জ কামালপুর ইউনিয়নের এই পাঁচটি গ্রামের শিশুরা একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভাবে আজ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত।
কামালপুর ইউনিয়নের বালুঝুড়ি গ্রামে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি বি,ডি,বি স্কুলের ভবন পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে এবং যে বয়সে ছোট ছেলে-মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার কথা, তখন তারা খেলাধুলায় মগ্ন।
এ বিষয়ে স্থানীয় ট্রাইভেল ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশন চেয়ারম্যান ও আদিবাসী প্রতিনিধি হসিও ম্রং জানান, বালুঝুরি বাজার সংলগ্ন একটি বি,ডি,বি প্রাইমারী স্কুল ছিল। আর এটিই ছিল এই গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার একমাত্র প্রতিষ্ঠান। প্রায় দুই বছর আগে স্কুলটির মেয়াদ উত্তীর্ণ ও পরবর্তীতে স্কুলের জমির মালিকানা বিরুধের জের ধরে বন্ধ হয়ে যায় সেটি। মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় একই সাথে বন্ধ হয়ে যায় বি,ডি,বি আওতাধীন খামার গেদরা, ডুমুর তলা,লাউচাপরা ও কণে কান্দার চারটি স্কুল। বর্তমানে এই গ্রামের ছেলেমেয়েদের কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। এছাড়া বালুঝুরি গ্রাম থেকে যদুরচর গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থান দূরে হওয়ায় ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে অভিভাবকরা বিন্দুমাত্র আগ্রহি নয়।
গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আদিবাসী ও বাঙ্গালীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বি,ডি,বি স্কুলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুই বছর যাবৎ এই গ্রামের শিশুরা স্কুলে যায় না। কামালপুর ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের মানুষের প্রধান কাজ কৃষি। আর তাই তারা তাদের সন্তানদের নিয়ে শিক্ষার অভাবে ভবিষৎ কৃষক ব্যাতিত অন্য কোন স্বপ্ন দেখে না।
কামালপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল তার ঐ পাঁচ গ্রামে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকার বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি গ্রাম গুলোতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়তে অনেক বার উপজেলা শিক্ষা অফিসে গিয়েছিলাম কিন্তু কোন সাড়া পায়নি।’
এবিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আফতাব হোসেন জানান, পাঁচ গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকার বিষয়টি সম্পর্কে তার কোন কিছু জানা নেই।
তবে সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে এই পাঁচটি হতদরিদ্রদের গ্রামে আমাদের দেশের প্রথম সারির কয়েকটি এন,জি,ও ব্র্যাক, আশা ও গ্রামীণ ব্যাংক তাদের ঋণ দান কর্মসূচি চালু রাখলেও গ্রামের শিশুদের লেখাপড়ার জন্য তারা কোন সেবা মূলক পদক্ষেপ নেয়নি। অথচ যেসব এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মত কিন্ডার গার্ডেন স্কুল মাথা তুলে আছে, সেই সব এলাকা গুলোতে তাদের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চোখে পড়ে।