শীর্ষ মেধাবী শিক্ষক নিবন্ধিতরা এনটিআরসিএ’র খামখেয়ালিপনায় বঞ্চিত
ভূপেন্দ্র নাথ রায়, দিনাজপুর প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কতৃপক্ষ তার ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগের গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এই বিজ্ঞপ্তিতে বাদ পড়েছে পয়ত্রিশোর্ধ শিক্ষক নিবন্ধিতরা। দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার নাজমা আহমেদ নূরী দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় দিনাজপুর জেলায় প্রথম স্থান এবং ভূপেন্দ্র নাথ রায় জাতীয় সম্মিলিত মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান লাভ করেও চলতি গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করার সুযোগ পাচ্ছে না। এ বিষয়ে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান একটি নোটিশের মাধ্যমে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। নোটিশে তিনি হাইকোর্টের আদেশ পালন করার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি এও বলেছেন যে, বয়স নির্ধারণে এনটিআরসিএ এবং সরকারের হাত নেই।
ভূপেন্দ্র নাথ সপ্তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। সে ইংরেজি বিষয়ে সম্মান সহ ¯œাতকোত্তর লাভ করে এবং নিজের পড়ালেখার খরচ চালাতে অধ্যয়নকাল থেকে শিক্ষকতার সাথে জড়িত। ঘুষ দিয়ে কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেয়া তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। সে এরপরও মনে করে যে, দেশের যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সে মেধায় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাবে। ভূপেন্দ্র নাথের সাথে হলে সে জানায়, স¤িলিত§ জাতীয় মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান লাভ করেও এনটিআরসিএ’র গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করার সুযোগ পাচ্ছিনা এর চেয়ে হতাশা এবং দূর্ভাগ্য আর হতে পারে না।
এদিকে খানসামা উপজেলার মৃত আফাজ উদ্দীন শাহ (সাবেক শ্ক্ষিক) এর মেয়ে নাজমা আহমেদ নূরী বলেন, আমি ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ে ¯œাতক এবং ¯œাতকোত্তর পাশ করি। আমার এসএসসি থেকে ¯œাতকোত্তর পর্যন্ত ফলাফলে প্রথম বিভাগ/শ্রেণি অর্জন করি। দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শিক্ষক নিবন্ধনে সমগ্র দিনাজপুরে প্রথম স্থান লাভ করে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাইনি। আমরা এনটিআরসিএ’র দিকে চেয়ে আছি শুধুমাত্র ন্যায়সংগত একটি নিয়োগের প্রত্যাশায়। মহামান্য হাইকোর্ট গত ১৪ ডিসেম্বর/১৮ তার রায়ে রীট পিটিশনারদের নিয়োগ দেয়ার আদেশ দেয়। এনটিআরসিএ উক্ত রায়কে থোড়াই কেয়ার করে আমাদের নিয়োগের ব্যাপারে উদাসিনতা দেখাচ্ছে। বেসরকারি শিক্ষক নীতিমালা/১৮ এর আলোকে বয়স চ্যালেঞ্জ করে আমাদের করা দুটি রীটে গত ১৮ ডিসেম্বর মঙ্গলবার মহামান্য আদালত পয়ত্রিশোর্ধ শিক্ষক নিবন্ধিতদের কেন নিয়োগ দেয়া হবে না এই মর্মে রুল জারি করেন। বরং প্রতিষ্ঠানটি তাড়াহুড়ো করে ঠিক নির্বাচনকালীন এবং কোর্ট অবকাশকালিন সময়ে গনবিজ্ঞপ্তি দেয়। এনটিআরসিএ’র গণবিজ্ঞপ্তিতে পয়ত্রিশোর্ধ নিবন্ধিতরা বাদ পড়ায় আমরা মর্মাহত।
এখানে উল্লেখ্য যে, ১৬৬ টি রিটের চুড়ান্ত রায়ের এক নম্বর পয়েন্টে নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত সনদের মেয়াদ বহাল থাকার কথা লিখা আছে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্ধারিত কোন বয়স উল্লেখ না থাকায় মহামান্য হাইকোর্ট রায়ের সাত নম্বর পয়েন্টে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগে (এন্ট্রি প্রসেসে) বয়স নির্ধারণ করার কথা বলেন। পয়ত্রিশোর্ধ মেধাবী শিক্ষক নিবন্ধিতরা এনটিআরসিএ’র বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্টের দেয়া রায়ের অবমাননার অভিযোগ তুলেছেন। তারা আরো অভিযোগ করেন যে, রায়ে ৭টি নির্দেশনা দেয়া আছে। কিন্তু এনটিআরসিএ মেধাতালিকা এবং বয়স নির্ধারণ ছাড়া আর বাকি নির্দেশনাগুলো পালন করার প্রয়োজনীয়তা মনে করেনি। রায়ের ১নং নির্দেশনায় চাকরি না হওয়া পর্যন্ত সনদের মেয়াদ আজীবনের কথা বলেছে মহামান্য হাইকোর্ট। আবার ৫নং নির্দেশনায় রিট পিটিশনার এবং প্রত্যাশিত আবেদনকারিদের নিয়োগ সুপারিশের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া ১২তম এবং ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধিতদের উপজেলাভিত্তিক একক নিয়োগের চুড়ান্ত রায় দিয়েছেন। তাদের একক নিয়োগের রায় কার্যকর করলে গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করা বেআইনি না আইনসম্মত তা ব্যাখ্যা দেয়া আবশ্যক। তাদের মাঝে অনেক ৩৫ উর্ধ নিবন্ধিত আছে। রায় অনুসারে সবাই নিয়োগ পাওয়ার যোগ্য। তাহলে অযথা বয়সের বেড়াজালে আবদ্ধ করে বেসরকারি শিক্ষাপ্রাতষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগ বিলম্বিতকরন হয়রানি ছাড়া কিছু হতে পারে না। পয়ত্রিশোর্ধ শিক্ষক নিবন্ধিতরা ছেড়ে কথা বলার নয়। জানা গেছে ইতিমধ্যে তারা বয়সের বেড়াজাল ছিন্ন করতে আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে প্রস্তুত হয়ে আছে। অনেকে অবকাশকালিন হাইকোর্টে নিযোগ স্টে করার জন্য ধরনা দিচ্ছেন। আবার ২ বছরের জন্য বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ স্থগিত হলে এর দায়ভার কে নেবে? স্বভাবতই অনেক প্রতিষ্ঠান বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক সংকটে ভুগছে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। সেই সাথে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অভাবনীয় ক্ষতি হবে। শিক্ষামন্ত্রনালয় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভিভাবক। একারণে উক্ত মন্ত্রনালয়কেই উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। নয়তো বঙ্গবন্ধু তনয়া গণতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাধলাদেশ গড়ার স্বপ্ন আরো ৩০ বছর পিছিয়ে যাবে। মেধাবী ও কর্মঠ অর্ধেক জনসংখ্যাকে বেকার রেখে কোন উন্নয়ন টেকসই হতে পারে না। তাইবেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেধাবীদের সুযোগদানে পয়ত্রিশোর্ধ শিক্ষক নিবন্ধিতরা এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।