শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের ৫৬তম মৃত্যুবার্ষিকী
সম্পাদকীয় ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
জাতীয় নেতা শেরে বাংলা আবুল কাশেম (এ কে) ফজলুল হকের ৫৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ শুক্রবার। তিনি ১৯৬২ সালের ২৭ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর জন্ম ১৮৭৩ সালের ২৬ অক্টোবর বরিশাল জেলার রাজাপুর থানার সাতুরিয়া গ্রামে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কাজী মুহম্মদ ওয়াজেদ এবং সাইদুন্নেসা খাতুনের একমাত্র পুত্র ছিলেন।
এ. কে. ফজলুক হকের প্রাথমিক শিক্ষা বাড়িতেই শুরু হয়। পরে তিনি গ্রাম্য পাঠশালা ও গৃহ শিক্ষকের কাছে আরবি, ফার্সি এবং বাংলা ভাষা শিক্ষা লাভ করেন।১৮৮৬ সালে অষ্টম শ্রেণীতে তিনি বৃত্তি লাভ এবং ১৮৮৯ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় তৎকালীন ঢাকা বিভাগে মুসলমানদের মধ্যে প্রথম স্থান দখল করেন।১৮৯১ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফ.এ. পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এফ.এ. পাশ করার পর তিনি গণিত, রসায়ন ও পদার্থ বিদ্যায় অনার্সসহ একই কলেজে বি.এ. ক্লাসে ভর্তি হন। ১৮৯৩ সালে তিনি তিনটি বিষয়ে অনার্সসহ প্রথম শ্রেণীতে বি.এ. পাশ করেন। বি.এ. পাশ করার পর এম.এ. ক্লাসে প্রথমে ভর্তি হয়েছিলেন ইংরেজি ভাষায়। পরীক্ষার মাত্র ছয় মাস আগে তাকে এক বন্ধু ব্যঙ্গ করে বলেছিলেন যে, মুসলমান ছাত্ররা অঙ্ক নিয়ে পড়ে না, কারণ তারা মেধাবী নয়। এই কথা শুনে এ. কে. ফজলুক হকের জিদ চড়ে যায়। তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন যে, অঙ্কশাস্ত্রেই পরীক্ষা দেবেন। এরপর, মাত্র ছয় মাস অঙ্ক পড়েই তিনি প্রথম শ্রেণী লাভ করেন।
খেলাধুলার প্রতি ফজলুল হক খুবই আগ্রহী ছিলেন। তিনি প্রথম জীবনে নিজে বিভিন্ন খেলাধুলার সাথে জড়িত ছিলেন এবং পরবর্তীকালে বিভিন্ন খেলাধুলার পৃষ্ঠপোষক হিসেবেও তিনি পরিচিত ছিলেন। তিনি মোহামেডান ফুটবল ক্লাবের প্রতিষ্ঠার সময় থেকে জড়িত ছিলেন। এছাড়া তিনি দাবা, সাঁতার সহ বিভিন্ন খেলা পছন্দ করতেন।
বরিশাল পৌরসভার চেয়ারম্যান অশ্বিনীকুমার দত্ত এ. কে. ফজলুক হককে কমিশনার পদে প্রার্থী হবার আহবান জানান। এ. কে. ফজলুক হক পৌরসভা ও জেলা বোর্ডের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্ব্বিতা করেন এবং বিপুল ভোটের ব্যবধানে সদস্য নির্বাচিত হন। এর মাধ্যমেই এ. কে. ফজলুক হকের রাজনৈতিক জীবনে সূত্রপাত।
বাঙালি এই রাজনীতিবিদ বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ‘বাঙালি কূটনীতিক’ হিসেবে বেশ পরিচিত ছিলেন। রাজনৈতিক মহল এবং সাধারণ মানুষের নিকট শেরে বাংলা (বাংলার বাঘ) এবং ‘হক সাহেব’ নামে সমধিক পরিচিত ছিলেন। শেরে বাংলা ছিলেন উপমহাদেশের এক অসাধারণ প্রজ্ঞাবান রাজনীতিবিদ।
তিনি কলকাতার মেয়র (১৯৩৫), (১৯৫৪), পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী (১৯৫৪),পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী (১৯৫৫), পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর (১৯৫৬ – ১৯৫৮) যুক্তফ্রন্ট গঠনে প্রধান নেতাদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম।
এ. কে. ফজলুক হক এম.এ. পাশ করার পর দাম্পত্য জীবনে প্রবেশ করেন। এ সময় নবাব আবদুল লতিফ সি. আই. ই.-এর পৌত্রী খুরশিদ তালাত বেগমের সাথে তার বিয়ে হয়। খুরশিদ তালাত বেগম দুটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। খুরশিদ তালাত বেগমের অকাল মৃত্যুর পর তিনি হুগলী জেলার অধিবাসী এবং কলকাতা অবস্থানকারী ইবনে আহমদের কন্যা জিনাতুন্নেসা বেগমকে বিয়ে করেন। কিন্তু, জিনাতুন্নেসাও নিঃসন্তান অবস্থায় পরলোক গমন করেন এবং ১৯৪৩ সালে এ. কে. ফজলুক হক মীরাটের এক ভদ্র মহিলাকে পত্নীত্বে বরণ করেন। তাঁদের সন্তান এ. কে. ফাইজুল হক ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের পাট প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। তিনি ২০০৭ সালে মারা যান।
সম্পাদনায়-মাহবুব এইচ শাহীন/প্রকাশক ও সম্পাদক/কাগজ২৪