সন্তোষ জাহ্নবী হাই স্কুল
১৮৭০ সালে তৈরি ভবনটিতে কোনো জানালা নেই। একতলা ভবনটিতে সংকীর্ন জানালার পরিবর্তে তৈরি করা হয়েছিল ১০১টি দরজা। এখানে জ্ঞানের আলো আর সূর্যের আলো দুটোই প্রবেশ করে দরজা দিয়ে।
স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা জাহ্নবী চৌধুরানী মাত্র ১৩ বছর বয়সে স্বামী গোলকনাথ রায় চৌধুরীর মৃত্যুতে বিধবা হয়ে সন্তোষে ছয় আনী জমিদারির মালিকানা লাভ করেন। তিনি ১৮৭০ সালের ৩ জুন তৎকালীন বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার দ্বিতীয় ইংরেজি (এমই) বিদ্যালয় হিসেবে সন্তোষ জাহ্নবী হাইস্কুল স্থাপন করেন।
এই বিদ্যালয় থেকে ১৮৯৬ সালে মহিম চন্দ্র ঘোষ এন্ট্রান্স পরীক্ষায় প্রথম স্থান, ১৯২৬ সালে দেবেন্দ্র নাথ ঘোষ মেট্রিক পরীক্ষায় প্রথম স্থান, ১৯৬৫ সালে ঢাকা বোর্ড থেকে নিতাই দাস পাল এসএসসি পরীক্ষায় প্রথম স্থান এবং ১৯৬৯ সালে আশীষ কুমার পাল এসএসসি মানবিক বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেন।
প্রায় চার একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি প্রায় ৩শ ফুট দীর্ঘ ভবনটির দেয়াল ২২ ইঞ্চি পুরু। মেঝে থেকে ছাদের উচ্চতা প্রায় ২২ ফুট। আগে অবশ্য আরো দুই ফুট উচ্চতা বেশি ছিল। পরবর্তী সময়ে ছাদ পুনঃনির্মাণের সময় ছাদের উচ্চতা দুই ফুট কমিয়ে দেওয়া হয়। ভবনের ভেতরে প্রচুর আলো-বাতাসে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে পারে সেজন্যেই স্কুলে সংকীর্ন জানালার পরিবর্তে ১০১টি দরজা রেখেছিলেন। তবে এখন অনেকগুলো দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য এ কাজ করতে হয়েছে।
স্কুল এর সম্মুখভাগে রয়েছে বিশাল সাইজের মোট ২৪টি দরজা । পেছন দিকেও রয়েছে প্রায় সমসংখ্যক দরজা। দশটি শ্রেণিকক্ষের প্রতিটির ভেতরে আবার তিন থেকে চারটি করে দরজা রয়েছে। এসব দরজা দিয়ে একটি কক্ষ থেকে আরেকটি কক্ষে যাতায়াত করা যায়। অর্থাৎ ভবনের পূর্ব প্রান্তের শেষ কক্ষটির ভেতর দিয়ে পশ্চিম প্রান্তের শেষ কক্ষটিতে যাওয়া সম্ভব। ভবনের সামনে যে বিশাল দীঘিটি রয়েছে তার বয়সও একই সমান। শত বছরের পুরোনো সূর্য ঘড়িটি বহাল তবিয়তেই আছে।
প্রতিষ্ঠার পর স্কুলের নামে একটি ফান্ড করে কলকাতায় ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার শাখায় প্রায় তিন লাখ টাকা জমা ছিল। ওই টাকার লভ্যাংশ পাকিস্তান শাসনামলের প্রথম দিক পর্যন্ত স্কুল ফান্ডে জমা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে অজ্ঞাত কারণে ওই অর্থ আসা বন্ধ হয়ে যায়।
শশিভূষণ বিদ্যালঙ্কার তার ভারতীয় ঐতিহাসিক গ্রন্থের তৃতীয় খণ্ডের ২৪৯ পৃষ্ঠায় কিছু তথ্য যুক্ত করেছেন। তিনি লিখেছেন সন্তোষ জাহ্নবী হাই স্কুল টাঙ্গাইল জেলার মধ্যে প্রথম ইংরেজি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়ের সম্মুখে একটি সূর্যঘড়ি আছে যা এ উপমহাদেশে দ্বিতীয়টি নেই। ঘড়িটি বর্তমানেও সচল অবস্থায় বিদ্যমান। এ জেলার প্রথম আইসিএস মহিম চন্দ্র ঘোষ সন্তোষ জাহ্নবী হাই স্কুল থেকে ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত এন্টান্স পরীক্ষায় বাংলা বিহার উড়িষ্যা, আসাম এবং বার্মার মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন। এ বিদ্যালয় গৃহের অন্যতম বৈশিষ্ট এতে কোন জানালা নেই।