পঞ্চগড়ে পুলিশের মিথ্যা মামলায় ৪ বছর পর সাংবাদিক বেকসুর খালাস
নাজমুস সাকিব মুন, পঞ্চগড় প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
দেশের সর্ব উত্তরের প্রান্তিক জেলা পঞ্চগড়ে অবৈধ ড্রিল ড্রেজার বা বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনের সংবাদ সংগ্রহ ও মেশিন বন্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে গত ৪ বছর আগে বিজিবির মালিক বিহিন ড্রেজার মেশিন আটক মামলায় চার্জ শিটে পুলিশ দুটি মামলায় জেলায় কর্মরত সাংবাদিক ডিজার হোসেন বাদশার নাম অন্তর্ভূক্ত করেন। এর পর চলে কোর্টে হাজিরা ও তারিখ দেখা। অবশেষে গত ৪ বছর পর সেই দুই মামলা থেকে আদালতের নির্দেশে মুক্তি লাভ করেন তিনি। বাদশা বর্তমানে বাংলা টিভি’র পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছেন।
বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) পঞ্চগড় সিনিয়র জুডিশিয়াল ২ আদালতের বিচারক কামরুল হাসান মামলা দুটি থেকে খালাস প্রদান করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অবৈধ ড্রেজার মেশিনে পাথর উত্তোলন বন্ধের প্রতিবাদ ও সংবাদ প্রকাশ করায়, বিজিবির আটককৃত ড্রেজার মেশিনের মালিক বিহিন দুটি মামলায় পুলিশ সাংবাদিক ডিজার হোসেন বাদশা ও তার বড় ভাই আনিছুর রহমানকে সেই মামলার চার্জশিটে নাম অন্তর্ভূক্ত করে। গত ৪ বছর তারিখের পর তারিখ শেষে দুটি মামলা থেকে বিচারক অবশেষে বেকসুর খালাস প্রদান করেন।
এই মামলায় সাংবাদিকের পক্ষে অ্যাডভোকেট আব্দু কুদ্দুস মামলা পরিচালনা করেন।
জানা যায়, পাথর রাজ্য হিসেবে খ্যাত প্রাকৃতিক কন্যা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় চলে পাথর খেকোদের তাণ্ডব। পরিবেশ রোক্ষার স্বার্থে অবৈধ ড্রিল ড্রেজার বা বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন বন্ধে সাংবাদিক ডিজার হোসেন বাদশার শুরু হয় সংবাদ প্রকাশ ও প্রতিবাদ করা। পাথর খেকোদের তাণ্ডবের ফলে যেমন নষ্ট হচ্ছে সৌন্দর্য কন্যা তেতুলিয়ার পরিবেশ তেমনি সরকার হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব। পাশাপাশি ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে তেঁতুলিয়া উপজেলাসহ পঞ্চগড়।
সরকারের কোনো নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে দীর্ঘদিন থেকে এসব ভুমি দস্যু, পাথর ব্যবসায়ী এ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলেন। গত ২০০৪ সাল থেকে পরিবেশ বিধ্বংসী ড্রেজার বা বোমা মেশিনের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ ও প্রতিবাদ করে আসছিলেন এই সাংবাদিক। গত ২০১৬ সালের জুলাই মাসে যমুনা টেলিভিশনে ড্রেজার মেশিন চলার বিরুদ্ধে স্থানীয় সাংবাদিক হিসেবে একটি বক্তব্য প্রচার হয়। এবং সে মাসের ২৭ জুলাই সাবেক তেঁতুলিয়া থানার ওসি সরেশ চন্দ্র এই সাংবাদিকের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে প্রকাশ্যে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। এরপর ২০১৬ সালের ৭ আগস্ট রবিবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বিশেষ মতবিনিময় সভায় তার সংগ্রহকৃত ড্রেজার মেশিনের ভিডিও ও বিভিন্ন তথ্যচিত্র সরবরাহ করে উপস্থাপন করে ও পুলিশি মিথ্যা মামলায় হয়রানি করার বিষয় উত্থাপন করেন।
ডিজার হোসেন বাদশা জানান, ২০১৬ সালের জুন মাসের ৮ তারিখে বিজিবি অভিযান পরিচালনা করে মালিক বিহিন ২টি ট্রাক্টর ও অবৈধ ৩টি বোমা মেশিন সরঞ্জামসহ আটক করে। এ অভিযানে আমি সাংবাদিকতা পেশা পালনে উপস্থিত থেকে সংবাদ সংগ্রহ করি। এবং পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী তেঁতুলিয়া থানার ওসি সরেশ চন্দ্র বিজিবির আটককৃত ট্রাক্টর ও বোমা মেশিনের মালিক বিহীন মামলায় গত ২০১৬ সালের অক্টোবরের ২ তারিখ চার্জশীটে ২ নাম্বার আসামি হিসেবে আমার নাম হয়রানি মূলক অন্তর্ভূক্ত করেন। এরপর ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারির ৪ তরিখ পঞ্চগড় জেলা প্রেসক্লাবে সভাপতি আনিছ প্রধান, সম্পাদক শাহজালাল ও পঞ্চগড় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এম.এ মুকুলসহ জেলায় কর্মরত প্রায় ৫০ জন সাংবাদিক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জন্য জেলা প্রশাসকের সম্মিলন কক্ষে সভায় জেলা প্রশাসকের প্রতি আহব্বান জানান। মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে জেলায় কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীদের পক্ষে পঞ্চগড় জেলা প্রেসক্লাব এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় মন্ত্রী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মাননীয় সংসদ সদস্য পঞ্চগড়-১ ও পঞ্চগড়-২ , মহা-পুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) ঢাকা, ডিআইজি রংপুর রেঞ্জ, পুলিশ সুপার পঞ্চগড়, সভাপতি/সম্পাদক জাতীয় প্রেসক্লাব ঢাকা, সভাপতি/সম্পাদক রিপোর্টাস ইউনিট ঢাকা বরাবর স্বারকলিপি প্রদান করা হয়। পরে চলমান মামলায় জামিন নিতে গিয়ে আদালত আমাকে জেল হাজতে প্রেরন করে। গত ২০১৭ সালের এপ্রিলের ১৯ তারিখ জামিনে মুক্তি পেয়ে আমি পুলিশের মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতির জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সু-দৃষ্টি কামনা করি।
এর পরেও বোমা মেশিন চলা অব্যাহত থাকায় পঞ্চগড় নাগরিক কল্যান পরিষদ এর আয়োজনে জেলার সকল সামাজিক ও রাজনৈতিক এবং সকল শ্রেণি পেশার মানুষ নিয়ে গত ২৬ এপ্রিল ২০১৭ ইং দায়ের কৃত মামলা থেকে প্রত্যাহার ও ড্রেজার মেশিন বন্ধের দাবীতে পঞ্চগড়ে এক বৃহৎ মানববন্ধন শেষে আবারো প্রধান মন্ত্রী বরাবর সারক লিপি প্রদান করা হয়। এর পরেও থেমে থাকেনি ড্রেজার মেশিন বন্ধের প্রতিবাদ।
সাম্প্রতিক পরিবেশ আন্দোলন পঞ্চগড়ের ব্যানারে আবারো এক মানবন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। চলমান মামলায় সকল সাক্ষী, বাদী আমার পক্ষে সাক্ষী প্রদান করে। সব কিছু বিবেচনা করে পঞ্চগড় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্টাট ২ এর বিচারক জনাব কামরুল হাসান এই মামলা থেকে সবাইকে খালাশ প্রদান করেন। মামলায় মোট ৭ জনকে আসামি করা হয়েছিল।
তারা হলেন, ১। বকুল হোসেন ২। ডিজার হোসেন বাদশা ৩। আনিছুর রহমান ৪। রুবেল হোসেন ৫। রফিকুল ইউপি সদস্য ৬। জাহেদুল ইসলাম ৭। নুর ইসলাম। আর মামলা নং ১৬/৫৫ ক এবং ১৬/৫৬ ক।