সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সন্ত্রাসী হামলা, ১০ সাংবাদিক আহত
অনলাইন ডেক্স । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে শতাধিক সন্ত্রাসীর হামলায় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সম্পাদকসহ অন্তত ১০ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
আহতদের মধ্যে রয়েছেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি দৈনিক কালের চিত্র পত্রিকার সম্পাদক অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক সময় টিভির জেলা প্রতিনিধি মমতাজ আহমেদ বাপী, সাবেক সভাপতি চ্যানেল আইয়ের জেলা প্রতিনিধি আবুল কালাম আজাদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল বারী, প্রথম আলোর স্টাফ রিপোর্টার কল্যাণ ব্যানার্জি ও মোহনা টিভির জেলা প্রতিনিধি আবদুল জলিল। আহত সাংবাদিকদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকরা জানান, দুপুরে শতাধিক সন্ত্রাসী প্রেসক্লাব ভবনে ঢুকে হৈ-হুল্লোড় করতে করতে প্রথমেই সিসিটিভি ক্যামেরার কানেকশন টেনে ছিড়ে ফেলে। এর পরই তারা লাঠিসোঁটা ও লোহার রড নিয়ে হামলা চালিয়ে সাংবাদিকদের মারধর করতে থাকে। ওই সময় সাংবাদিকরা ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার করছিলেন।
সাংবাদিকরা জানান, বারবার টেলিফোন দেওয়ার পরও মাত্র ১০০ গজ দূরে থাকা সাতক্ষীরা থানা পুলিশ আসতে দেরি করে। ততক্ষণে রক্তাক্ত অবস্থায় সাংবাদিকরা আহাজারি করতে থাকেন। এ নিয়ে সাংবাদিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকরা জানান, হামলার সময় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের বাইরে বহু দাগী সন্ত্রাসী, মাদকসেবী ও চোরাচালানিকে মহড়া দিতে দেখা যায়। এ ছাড়া সাতক্ষীরা সদর আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবির দুই ভাই মীর মাহমুদ হাসান লাকি ও মাহি আলমকেও ওই সন্ত্রাসীদের সঙ্গে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। ঘটনার সময় একটি এনজিওর প্রধান কে এম আনিসুর রহমান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমানের সামনে বসে এ হামলা মনিটরিং করছিলেন বলে জানিয়েছেন প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা।
এদিকে খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল, পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান, ওসি মোস্তাফিজুর রহমান ও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা প্রেসক্লাবে যান।
এ সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, একটি মহল সাতক্ষীরায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে চায়। তারাই নেপথ্যে থেকে ভাড়াটিয়া বাহিনী দিয়ে এ হামলা চালিয়েছে।
জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা ও পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান জানান, সাতক্ষীরার মতো শান্ত জেলাকে যারা অশান্ত করে ফায়দা লুটতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করা হবে। সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্য প্রেসক্লাবে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এ ছাড়া আক্রান্ত সাংবাদিকরা মামলা করলে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে শুধু সাধারণ ভোটার সদস্য ও সহযোগী সদস্য ছাড়া আর কেউ বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতে পারবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে পুলিশ।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এ হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির কর্মকর্তাসহ সব সাংবাদিক। তাঁরা জানান, ১৯৭৩ থেকে এ পর্যন্ত সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এই প্রথম রক্তপাতের ঘটনা ঘটল।
সাধারণ সাংবাদিকরা হামলাকারী ও হামলার নেপথ্যে গডফাদারদের চিহ্নিত করেছেন দাবি করে জানান, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে যেসব সাংবাদিক এ হামলার সঙ্গে জড়িত, তাঁরা রক্ষা পাবেন না বলেও জানানো হয়।
আগামীকাল শুক্রবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এই সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে প্রেসক্লাব।
গত ২০ মার্চ অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণে সাতক্ষীরা সদর আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব। এ ঘটনার আড়াই মাস পর বুধবার ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়। এর কয়েক ঘণ্টা পরই সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটল।