উপমহাদেশের জীবন্ত কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন-এর শুভ জন্মদিন

সেলিনা জাহান প্রিয়াঃ- তিনি বাংলা গানের পাখি। উপমহাদেশের জীবন্ত কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী। তার কণ্ঠে অসংখ্য গান শ্রোতাপ্রিয়তা পেয়েছে, কালজয়ী হয়েছে। অডিও এবং চলচ্চিত্র- দুই ভুবনের গানেই তার গ্রহণযোগ্যতা আকাশ ছোঁয়া। তবে চলচ্চিত্রের প্লেব্যাকে সাবিনা ইয়াসমিন বিস্ময়কর এক সফল নাম। আজ প্রিয় এই শিল্পীর জন্মদিন।

১৯৫৪ সালের এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। দিনটিকে উপলক্ষ করে সাবিনা ইয়াসমিনের পরিবার, বন্ধু-স্বজনেরা তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সংগীতাঙ্গনের মানুষেরা। সেইসঙ্গে ফেসবুকের মতো জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাবিনার ভক্ত-অনুরাগীরা তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে স্ট্যাটাস-ছবি পোস্ট করেছেন। এদিকে জানা গেছে, জন্মদিনকে ঘিরে তেমন কোনো আয়োজন নেই সাবিনা ইয়াসমিনের। তবে দেশের সংগীত জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্রের জন্মদিনটি বিশেষভাবে উদযাপনের উদ্যোগ নিয়েছে চ্যানেল আই পরিবার। আজ রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে ‘তারকা কথন’ অনুষ্ঠানে অংশ নিবেন সাবিনা ইয়াসমিন। অনুষ্ঠানে তার সঙ্গে অংশ নেবেন ডিসট্রেস চিলড্রেন অ্যান্ড ইনফ্যান্ট ইন্টারন্যাশনালের (ডিসিআইআই) সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা। গত তিন বছর ধরে তিনি ডিসিআইআই’র শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কাজ করছেন।

জন্মদিন উপলক্ষে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা সাবিনা ইয়াসমিনকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাবে, গান গেয়ে শোনাবে, নাচবে এবং ছবি আঁকবে। পাশাপাশি সাবিনা ইয়াসমিন ফোনেও অংশগ্রহণ করবেন তার প্রিয় মানুষদের সঙ্গে। এ আয়োজনটি সাবিনা ইয়াসমিনের বাসা থেকে সরাসরি প্রচার করবে চ্যানেল আই। জন্মদিন প্রসঙ্গে সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘জন্মদিনটা সব সময়ই আমার কাছে খুব ভালো লাগার। কিন্তু বয়স বাড়ছে এ বিষয়টি যখন মনে পড়ে তখন মন খারাপ হয়ে যায়। তারপরও এখনো বেশ ভালো আছি, সুস্থ আছি এটাই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। আল্লাহ সবাইকে ভালো রাখুন, সুস্থ রাখুন। আমার জন্য দোয়া করবেন।’ প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে সাবিনা ইয়াসমিন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা ও দোয়ায় তিনি আবার সুস্থ হয়ে সবার মাঝে ফিরে আসেন। সাবিনা ইয়াসমিন সাতক্ষীরার সন্তান। বাবার নাম লুতফর রহমান ও মা বেগম মৌলুদা খাতুন। তার ৫ বোনের মাঝে ৪ বোনই গান করেছেন। তারা হলেন ফরিদা ইয়াসমিন, ফওজিয়া খান, নীলুফার ইয়াসমিন এবং সাবিনা ইয়াসমিন। দাম্পত্য জীবনে সাবিনা ইয়াসমিন এক কন্যা ফাইরুজ ইয়াসমিন ও এক পুত্র শ্রাবণের জননী।

বড় বোন প্রয়াত ফরিদা ইয়াসমিন যখন গান দুর্গাপ্রসাদ রায়ের কাছে তখন ছোট্ট সাবিনাও উপস্থিত থাকতেন। পরবর্তীতে ওস্তাদ পি সি গোমেজের কাছে একটানা ১৩ বছর তালিম নিয়েছেন। মাত্র ৭ বছর বয়সে স্টেজ প্রোগ্রামে অংশ নেন। ছোটদের সংগঠন খেলাঘরের সদস্য হিসেবে রেডিও ও টেলিভিশনে গান গান নিয়মিত। প্রয়াত বরেণ্য সুরকার-সংগীত পরিচালক রবিন ঘোষের সংগীত পরিচালনায় এহতেশাম পরিচালিত ‘নতুন সুর’ সিনেমাতে ১৯৬২ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে প্রথম গান করেন। তবে ১৯৬৭ সালে আমজাদ হোসেন ও নূরুল হক বাচ্চু পরিচালিত ‘আগুন নিয়ে খেলা’ সিনেমাতে আলতাফ মাহমুদের সংগীত পরিচালনায় ‘মধু জোছনা দীপালি’ গানটি গাওয়ার মধ্য দিয়ে প্লেব্যাক গায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। বরেণ্য এই সংগীত শিল্পী ১৯৮৪ সালে একুশেপদক, ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতা পদকসহ সর্বোচ্চ ১৩ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৭৫ সালে প্রমোদকার (খান আতাউর রহমানের ছদ্ম নাম) পরিচালিত ‘সুজন সখী’ সিনেমাতে গান গাওয়ার জন্য প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে আমজাদ হোসেনের ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’, চাষী নজরুল ইসলামের ‘চন্দ্রনাথ’, মইনুল হোসেনের ‘প্রেমিক’, বুলবুল আহমেদ’র ‘রাজলক্ষী শ্রীকান্ত’ , আমজাদ হোসেনের ‘দুই জীবন’, কাজী হায়াৎ’র ‘দাঙ্গা’, মতিন রহমানের ‘রাধা কৃষ্ণ’, মোহাম্মদ হোসেন’র ‘আজ গায়ে হলুদ’ ও চাষী নজরুল ইসলামের ‘দেবদাস’ চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক করার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। দীর্ঘ সংগীত জীবনে ১৬ হাজারেরও বেশি গান গেয়েছেন বাংলা গানের এই নক্ষত্র!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!