যৌতুক মামলায় পাবনা পিটিআই সাবেক ইন্সট্রাক্টর সামসুজ্জোহা জেল হাজতে
আর কে আকাশ, পাবনা, বিশেষ প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
যৌতুক মামলায় হাজিরা দিতে এসে খুলনার জেলে হাজতবাস করছেন জয়পুরহাট পিটিআই ইন্সট্রাক্টর (সাধারণ) মো. সামসুজ্জোহা। সামসুজ্জোহা ২০১৯ সালের ২৬ জানুয়ারী পর্যন্ত পাবনা পিটিআইতে কর্মরত ছিলেন। ব্যাংক কর্মকর্তা স্ত্রী নিশাত সুলতানা স্বামীর বিরুদ্ধে খুলনা অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন আদালতে যৌতুক মামলা দায়ের করেন ২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর। গত ১৫ ডিসেম্বর মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে স্ত্রীর কাবিনের ও খোরপোষের টাকা দিয়ে টালবাহানা এবং মামলা ট্রায়াল করবে বলে কোর্টে অসৌজন্যমুলক আচরণের দায়ে বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
জানা যায়, জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল থানার আক্কেলপুর ইউনিয়নের দেওগ্রামের জাহেদুল ইসলাম সরকারের ছেলে মো. সামসুজ্জোহা এবং খুলনা জেলার লবনচরা (সাবেক বটিয়াঘাটা) থানার জলমা ওয়াজেদ নগর সাঁচিবুনিয়া গ্রামের বাদশা মিয়ার মেয়ে নিশাত সুলতানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের ব্যাচমেট ছিলেন। পরে সামসুজ্জোহা আই.ই.আর বিভাগে ভর্তি হন। শিক্ষাজীবন শেষে জনতা ব্যাংকে অফিসার পদে প্রথম চাকুরী নিয়ে ২০১৫ সালে খুলনায় যোগদান করেন নিশাত সুলতানা।
এদিকে ২০১৬ সালের ৩ মার্চ পাবনা পিটিআইতে ইন্সট্রাক্টর পদে যোগদান করেন সামসুজ্জোহা। বিশ্ববিদ্যালয়ে চেনাজানা ও বন্ধুত্বের সুত্র ধরেই সামসুজ্জোহা দু’জন মিলে সুখী জীবন সাজানোর প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে দেড় লক্ষ টাকা দেনমোহরে ২০১৬ সালের ২০ অক্টোবর পারিবারিকভাবে উভয়ের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে জামাইকে সোনার আংটি, চেইন, হাতঘড়ি, মোটর সাইকেল কেনার জন্য নগদ ১(এক) লক্ষ টাকা সহ অনেক দামী জিনিসপত্র প্রদান করেন কন্যার পরিবার।
স্বামী পাবনা পিটিআইতে কর্মরত থাকায় ব্যাংক কর্মকর্তা স্ত্রীও বিয়ের চার মাসের মধ্যে জনতা ব্যাংক এরিয়া অফিস পাবনায় বদলী হয়ে আসেন। এর পর থেকেই সুদর্শন চেহারার ভিতর থেকে কুৎসিত চরিত্র বেরিয়ে আসতে থাকে ইন্সট্রাক্টর সামসুজ্জোহার। নিজে অনেক ধার-দেনা আছে বলে স্ত্রীর বেতনের সমুদয় টাকা হাতিয়ে নিয়েও তিনি তৃপ্ত হয়নি। যৌতুকের জন্য নানা ভাবে চাপ দিতে থাকে স্ত্রীকে। স্ত্রীকে বাবার বাড়ী থেকে নানা উপঠোকন ও যৌতুকের টাকার জন্য শারীরিক ও মানুষিকভাবে অত্যাচার নিপীড়ন আরম্ভ করেন। এক পর্যায়ে পুত্রবধুর কাছে শ্বশুর মোবাইল করে বাড়ি নির্মাণের জন্য বিপুল পরিমান টাকার দাবী করে চাপ দেয়।
এদিকে অন্য মেয়েকে বিয়ে করলে বাড়ি গাড়ি সহ অনেক টাকা পেতাম এমন কথা বলে স্ত্রীর সাথে প্রায়ই বাক-বিতন্ডায় লিপ্ত হতো অর্থলোভী সামসুজ্জোহা। যৌতুকের টাকার দাবিতে স্ত্রীর সাথে অশান্তির মাত্রা দিনদিন বাড়তে থাকে। সামসুজ্জোহা পরিকল্পিতভাবে গর্ভের অনাগত সন্তানকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে ৭ মাসের অন্তঃসত্তা স্ত্রীকে মারপিট করে পেটে লাথি মারে। পেটের ব্যথায় দিন রাত ছটফট করলেও স্ত্রীকে হাসপাতালে নিতে তালবাহানায় সময়ক্ষেপণ করে।
পরবর্তীতে বাড়িওয়ালার হস্তক্ষেপে ২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বর ভোর রাতে হাসপাতালে নিয়ে গেলে স্ত্রীর মৃত সন্তান ভুমিষ্ট হয়। সন্তান হারানোর ব্যথা দুর না হতেই স্ত্রীকে দুরে সরানোর নীল নকশায় মেতে উঠে। সুচতুর সামসুজ্জোহা কৌশলে ২০১৯ সালের ২৬ জানুয়ারী পাবনা পিটিআই হতে জয়পুরহাট পিটিআইতে বদলী হয়। নিশাত বদলী হয়ে জয়পুরহাট যেতে চায়। কিন্তু ধুর্ত সামসুজ্জোহা ঠান্ডা মাথায় স্ত্রীকে বুঝায়, মায়ের কাছে গিয়ে ভাল থাকতে পারবে, সহযোগিতা পাবে। এমন নানা ছলছুতায় ২০১৯ সালের ৩ জুন স্ত্রীকে খুলনায় বদলীর করেন। পাবনা হতে খুলনায় আসার সময় কৌশলে স্ত্রীর টাকায় কেনা বাসার সমস্ত আসবাবপত্র ও পিতার দেওয়া সমস্ত সোনার গহনা রেখে দেন স্বামী। তার পর থেকেই সামসুজ্জোহার আসল রূপ প্রকাশ পেতে থাকে। স্ত্রীর সাথে যোগাযোগ না করে মোবাইলে যৌতুকের জন্য হুমকি দিতে থাকে। স্ত্রী মামলা করার প্রস্তুতি গ্রহন করছে এমনটি বুঝতে পেরে ২০১৯ সালের ৪ অক্টোবর খুলনায় শ্বশুড়ালয়ে এসে কথা বার্তার এক পর্যায়ে ৫(পাঁচ) লক্ষ টাকা যৌতুক দাবী করে স্বামী।
স্ত্রী নিশাত সুলতানা ও তার পিতা মাতা সামসুজ্জোহাকে অনেক বুঝালেও যৌতুক ছাড়া স্ত্রীর সাথে ঘর সংসার করবে না জানিয়ে চলে যায়। নিশাত সুলতানা সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য পাবনা পিটিআইয়ের স্বামীর সহকর্মী ও বন্ধু এবং জয়পুরহাট পিটিআই সুপারের কাছে আকুতি জানিয়েও বিন্দুমাত্র সহযোগিতা পায়নি। নিরুপায় হয়ে স্ত্রী নিশাত সুলতানা ২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর খুলনা অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন আদালতে যৌতুক মামলা দায়ের করেন। ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর মামলার প্রথম হাজিরা দিতে এসে কোর্টে দাড়িয়ে ভূল স্বীকার করে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেবার প্রতিশ্রুতি দিলে জামিন পায়। এরপর মিমাংসায় না বসে নানা টালবাহানা করে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে বলে জানায়। ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২০ তারিখে মিমাংসার কথা বলে ডেকে নিয়ে জোড়পূর্বক আপোস ও খোলা তালাক নামায় স্বাক্ষর করে নেন মো. সামসুজ্জোহা। দেনমোহরের দেড় লাখ এবং খোরপোষের অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি বাবদ ৫(পাাঁচ) লাখ টাকা ও জিনিসপত্র ফেরত দেবার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্ত সে তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করে ছলচাতুরীর আশ্রয় নেয়। গত ১৫ ডিসেম্বর খুলনা অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে টাকা দিতে অস্বীকার করে মামলা ট্রায়াল করবে বলে অসৌজন্যমুলক আচরন করে। বিজ্ঞ আদালত জয়পুরহাট পিটিআই ইন্সট্রাক্টর সামসুজ্জোহার জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।