সিক্স প্যাক বডি তৈরি করার সহজ উপায়
হেল্থ ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
সুস্থ ও শক্তিশালী থাকাটাই আসল চাওয়া। তার উপর সিক্স প্যাক অ্যাব অধিকাংশ তরুণের কাছেই আকর্ষণীয়। নিজের চেহারা যাই থাকুক না কেনো, খুব মোটা কিংবা লিকলিকে রোগা টিনএজারদেরও টার্গেট কিন্তু ওই সিক্স প্যাক অ্যাবসের উপর। এটা নিয়ে বেশি হইচই শোনা যায় বিনোদন জগতে। এরই প্রভাব আমাদের মধ্যে কমবেশি অনেকেরই উপর পড়েছে। এই ব্যাপারে যারা স্বাস্থ্য সচেতন, সিক্স প্যাক বানাতে চান, সিক্স প্যাক বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যায়াম, খাদ্যাভাস ইত্যাদি নিয়েই আজকের এই লেখা।
খাবারের প্রতি সতর্ক হোন :
সুস্থ, সুন্দর ও শক্তিশালী বানানোটা আসলে খাবারের উপর নির্ভর করে না। তবে যারা মোটা অবস্থায় জিমে গিয়ে পেশি গঠন করতে চান, তাদের জন্য থাকে একধরনের খাবার তালিকা। আবার ওজন কম হলেও থাকে আলাদা খাবার তালিকা। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে প্রশিক্ষক আপনাকে পরীক্ষা করে নানা ধরনের ব্যায়াম ও খাবারের তালিকা দেবেন। এটি মেনে চলতে হবে।
তবে যাদের উচ্চতার তুলনায় ওজন বেশি, তারা অবশ্যই লাল মাংস, কোমল পানীয়, ফাস্টফুড, তেল বা চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলবেন। এছাড়া সকালে চিরতা ভেজানো পানি, বিকেলে পানির সঙ্গে লেবু চিবিয়ে এবং বেশি করে শসা খেতে পারেন। ডিম খেলে কুসুম ছাড়া খেতে হবে। মাছ, মাংশ, আপেল, ডালিম, লেবু, পেয়ারা বেশি করে খেতে হবে।
সিক্স প্যাক বডি বানাতে যা করতে হবে :
পেশি তৈরি করতে শুরুতেই যোগব্যায়াম করতে হয়। এরপর রয়েছে আরো ব্যায়াম। ডলফিন এক্সারসাইজ নামে পরিচিত একধরনের বিশেষ ব্যায়াম করতে হয়।
এক একজনের শরীরে একেক রকমের জেনেটিক ফ্যাক্টরের প্রভাব থাকে। সেই অনুযায়ী শরীরের গঠন তৈরি হয়। সিক্স প্যাক করতে চাইলে বেশ পরিশ্রম করতে হবে। এজন্য নিয়মিত দড়িখেলা, সাইকেল চালনা, সাইড বেলি, আপার-লোয়ারসহ পেটের ৮-১০ রকম ব্যায়াম করতে হয়।
আপনাকে নিয়িমিত জীম করতে হবে। আপনার বুকের পেশি বার্ন করার উপর নির্ভর করে। আপনার প্রচুর পেটের ব্যায়াম করতে হবে।
দৈনিক ৫০-১০০ বার করে বুক ডন দিতে হবে। চিত হয়ে সুয়ে পা চেপে ধরে মাথায় হাত দিয়ে উঠা নামা করতে হবে। পানিতে সাতার কাটতে হবে।
যারা হাতের পেশি বাড়াতে চান, তাদের জন্য দরকার হাতের নানা ব্যায়াম। এর ভেতর থাকছে নিয়মিত এক ঘণ্টা করে ডাম্বেল নিয়ে সাত-আট ধরনের কৌশল চর্চা করা। এতে সুন্দর হবে আপনার বাহু বা হাতের পেশির গঠন।
খেয়াল রাখুন ৫টি বিষয় :
১. শরীরের ফ্যাট:
সিক্স প্যাক দৃশ্যমান হবে কিনা তা নির্ভর করে একজন মানুষের শরীরের ফ্যাট এর উপর। ব্যক্তিভেদে মোটামোটি শরীরের ফ্যাট ১৫% এর নীচে থাকলে পেটের পেশী দৃশ্যমান হয়।
২. সকালে দৌড়ঝাঁপ:
আমরা খাদ্য থেকে যে ক্যালরি পাই রাতে ঘুমের মাঝে তার বেশিরভাগ পুড়ে যায়। তাই সকালে খালি পেটে ব্যায়াম করলে আমাদের দেহে যে অতিরিক্ত ক্যালরি চর্বি আকারে জমা থাকে, সেখান থেকে শক্তি সঞ্চারিত হয়। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠেই ৩০ মিনিট কারডিও যেমন, দৌঁড়/ সাইক্লিং/দড়ি লাফের ব্যায়াম, ইত্যাদি করলে বাড়তি চর্বি খুব তাড়াতাড়ি ঝরে যায়। দিনের অন্যান্য যেকোনো সময়ের তুলনায় সকাল হলো কারডিও করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।
৩. না খেয়ে থাকা যাবে না:
অনেকেই মনে করে মুটিয়ে গেলে কম খেতে হয়। তখন তারা না খেয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে দেহে আরো চর্বি জমতে থাকে, যাতে দেহ যখন খাদ্য থেকে বঞ্চিত থাকে, তখন চর্বি পুড়িয়ে প্রয়োজনীয় শক্তি সঞ্চারণ করতে পারে!
৪. আমিষ এবং শর্করার অনুপাত:
কথায় আছে, সিক্স প্যাক জিমে না, রান্নাঘরে তৈরি হয়। একজন সুস্থ স্বাভাবিক নারীর দিনে ৪৬ গ্রাম এবং পুরুষের ৫৬ গ্রাম আমিষ খাবার খাওয়া উচিত।
আমাদের প্রচলিত খাদ্যাভ্যাসে শর্করার পরিমাণ আমিষ এবং শাকসবজির তুলনায় অনেক বেশি থাকে, যা পরিহার করা উচিত।
সিক্স প্যাক তৈরির জন্য মাছ, মুরগির মাংস, দুধ, ডিম, পিনাট বাটার এবং প্রচুর পরিমানে ফল ও শাকসবজি খেতে হবে। এবং বাদাম, মাছের তেল ইত্যাদি খাবার থেকে প্রয়োজনীয় স্নেহ জাতীয় খাদ্যের চাহিদা মেটাতে হবে।
কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, অতিরিক্ত ভাজা-পোড়া খাবার একেবারেই খাওয়া যাবে না।
৫. সম্পূর্ণ দেহের ব্যায়াম ও পরিপূর্ণ ঘুম:
সিক্স প্যাক দৃশ্যমান করতে সম্পূর্ণ দেহের ব্যায়াম করতে হয়। এজন্য জিমে যাওয়া জরুরি। জিমে গিয়ে প্রশিক্ষক এর নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যায়াম করা উচিৎ। নাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে। এবং রাতে কমপক্ষে ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে।
সিক্স প্যাকস অ্যাবসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস :
১. কারো শরীরের গঠন মেদবহুল, স্থূলকায় বা এককথায় মোটা, এই ওবেস ক্যাটাগরির কেউ যদি সিক্স প্যাক অ্যাবসের স্বপ্ন দেখেন তবে সেটা একটু দুরূহ ব্যাপার হয়ে যাবে। হবে না এমন কিন্তু নয়, তবে ব্যাপারটা সময়সাপেক্ষ। এই ক্যাটাগরির ক্ষেত্রে প্রথমেই উচ্চতা অনুপাতে যে বডিওয়েট হওয়া দরকার, সেই ওজনে নিজেকে প্রথমে আনতে হবে।
এজন্য দরকার কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়াম। যেমন হাঁটা, জগিং, সুইমিং, সাইক্লিং কিংবা জিমে গিয়ে অ্যারোবিকাল এক্সারসাইজ— তার সঙ্গে প্রপার ব্যালেন্সড ডায়েট। প্রথম কর্তব্য শরীরের মেদ ঝরিয়ে টোনিং করা। মেদ ঝরিয়ে ঠিকঠাক টোনিং ব্যায়াম করলেই ফ্ল্যাট অ্যাবস হবে। তারপর আরো এক্সক্লুসিভ ব্যায়ামের মাধ্যমে সিক্স প্যাক অ্যাবের চেষ্টা করতে হবে। সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কারণ এটা জেনেটিক ফ্যাক্টর।
আবার অনেক টিনএজ ছেলেরাও জন্মগত খুব রোগা। খাওয়া-দাওয়া করেও গায়ে মাংস লাগে না। কোনো ব্যায়াম না করেই এদের অদ্ভুতভাবে সিক্স প্যাক অ্যাবস তৈরি হয়ে যায়। সবই জেনেটিক ফ্যাক্টর।
এক্ষেত্রে এসব ছেলেদের যদি উপযুক্ত গুরুর তত্ত্বাবধানে ঠিকঠাক ব্যায়াম করানো যায়, তাহলে এরা অচিরেই ছিপছিপে, ফিট, মেদহীন সিক্স প্যাক অ্যাবস সমেত অপূর্ব অ্যাথলেটিক ফিগারের অধিকারী হতে পারে, যেটা টিনএজারদের ড্রিম ফিগার।
তথ্য ও ছবি : ইন্টারনেট