সিনেমাস্টাইলে তরুনীকে জিম্মি করে গনধর্ষণের অভিযোগে আটক ইউপি সদস্য
অনলাইন ডেক্স । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
সিনেমা স্টাইলে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলায় এক তরুণীকে (২০)পালাক্রমে গণধর্ষণের অভিযোগে এক ইউপি সদস্যকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত আরোও প্রায় ৮/১০ জন রয়েছে পলাতক। স্বামীর কাছ জোর করে আটকের পর তরুনীকে জিম্মি করে এই গনধর্ষণের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে পুরো এলাকাজুড়ে।
ঘটনার মুলহোতা গ্রেফতার ইউপি সদস্য হলো- উপজেলার ভানী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের নবীরুল ইসলাম নবী (৩০) ও সূর্যপুর গ্রামের মৃত মো. সামসুল হকের ছেলে।
প্রায় চারমাস আগে এ ঘটনা ঘটলেও গতকাল শুক্রবার দুপুরে দেবিদ্বার থানায় মামলা করেছেন ধর্ষণের শিকার তরুণী। মামলার পরই অভিযুক্ত ইউপি সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিলম্বে এই ঘটনায় মামলা করা নিয়েও তৈরি হয়েছে জনমনে নানা প্রশ্ন ।
ঘটনার শিকার ঐ তরুনীর জবানবন্দীতে জানা গেছে, মেম্বারসহ মোট ৯ জন ধর্ষণে জড়িত। তরুনী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমি তাদের মুখে একে অপরকে ডাকার নাম শুনে ২/৩ জনের নাম জানতে পেরেছি। বাকিদের নাম বলতে পারবো না। আমি চিৎকার করার চেষ্টা করলেও করতে পারেনি। তারা আমার হাত-মুখ চেপে ধরে রেখেছে। এর আগে আমার স্বামীর অনুপস্থিতেতে আমার হাতে কনডম দিয়ে আমাকে খারাপ মেয়ে বলে চালিয়ে দেয়ার জন্য মোবাইলে ভিডিও করা হয়।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ১৮ জানুয়ারি দুপুরে স্বামীকে নিয়ে ভানী ইউনিয়নের সূর্যপুরের রাস্তা দিয়ে স্বামীর বাড়ি মুরাদনগর উপজেলার প্রান্তি গ্রামে যাচ্ছিলেন তরুণী। পথে ইউপি সদস্য নবীরুল ইসলামের নেতৃত্বে শামিম, আকাশ, পাখিসহ অজ্ঞাত আরও ৮-৯ জন তাদের গতিরোধ করে। সেই সঙ্গে তরুণীর স্বামীর পরিচয় জানতে চায় তারা।
তারা দুইজন নিজেদের স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিলে ইউপি সদস্য নবীরুল তাদের বিয়ের কাবিননামা দেখতে চায়। পরে তরুণীর স্বামী বিয়ের কাগজপত্র দেখালে ইউপি সদস্য কাগজপত্র ভুয়া আখ্যায়িত করে বলে এসব কাগজপত্রে হবে না।
পরে ক্ষিপ্ত হয়ে নবীরুলের সঙ্গে থাকা আকাশ নামে এক যুবক ওই তরুণী ও তার স্বামীকে বেধড়ক মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে ইউপি সদস্য নবীরুল ইসলাম ২০ হাজার টাকা দিলে তা সমাধান করে দেবে বলে প্রস্তাব করে। পরে ওই তরুণীর স্বামী টাকার ব্যবস্থা করার জন্য স্ত্রীকে ইউপি সদস্য নবীরুলের হেফাজতে রেখে চলে যান।
ওইদিন সন্ধ্যায় টাকা নিয়ে আসেন তরুণীর স্বামী। ২০ হাজার টাকা নেয়ার পর স্ত্রীকে রেখে স্বামীকে নিজের বাড়ি প্রান্তি গ্রামে চলে যেতে বলেন ওই ইউপি সদস্য। তার হেফাজতে রেখে ওই তরুণীর বাড়ি কুমিল্লার ছোটরায় এলাকায় পৌঁছে দেবে বলেও জানায় ইউপি সদস্য। পরে স্বামী প্রাণভয়ে তার নিজের বাড়ি চলে গেলে ইউপি সদস্য নবীরুল ইসলাম শামিম, পাখি, আকাশসহ আরও কিছু অজ্ঞাত যুবকের হাতে ওই তরুণীকে তুলে দেয়। তারা তরুণীকে ওই রাতেই বাড়ি পৌঁছে দেয়ার কথা বলে ভানী ইউনিয়নের ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অজ্ঞাত একটি জঙ্গলে নিয়ে যায়।
পরে ইউপি সদস্য নবীরুল ইসলামের সঙ্গে ফোনে কথা বলে আকাশ। ফোনে তরুণীসহ তাদের অবস্থানের জায়গার নাম জানানো হয় ইউপি সদস্য নবীরুলকে। পরে ইউপি সদস্য নবীরুল জঙ্গলে এসে ওই তরুণীকে দুইবার ধর্ষণ করে। ধর্ষণ শেষে ইউপি সদস্য নবীরুল ভুক্তভোগী তরুণীকে পাখি, আকাশ ও শামীমদের হাতে তুলে দিয়ে বাড়ি চলে যায়। পরে ৭/৮ জন যুবক ওই তরুণীকে পুনরায় পালাক্রমে গণধর্ষণ করে। পালাক্রমে ধর্ষণ শেষে ওই তরুণীকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের এক পাশে ফেলে পালিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে ভানী ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. নুরুজ্জামান মুকুল জানান, ঘটনার প্রায় ৪ মাস পর জানতে পারলাম। নিশ্চয়ই এখানে কোনো চক্রান্ত লুকিয়ে আছে। ওই তরুণী এতদিন কেন কালক্ষেপণ করলেন? সত্যিকারে যদি এ কাজে জড়িতের প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে আইন অনুযায়ী তার বিচার হবে।
দেবিদ্বার থানা পুলিশের ওসি মো. জহিরুল আনোয়ার হোসেন জানান, ইউপি সদস্য নবীরুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ভুক্তভোগী তরুণীর মেডিকেল রিপোর্টের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার সত্যতা পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। সূত্র-সময়ের কণ্ঠস্বর।