হেফাজত আমির শফীকে হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের
অনলাইন ডেক্স । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
হেফাজতে ইসলামের সাবেক আমির প্রয়াত শাহ আহমদ শফীকে হত্যার অভিযোগে সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ ৩৬ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার সকল আসামিই বর্তমান আমির জুনায়েদ বাবুনগরীর অনুসারী। বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রামের তৃতীয় জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিপলু কুমার দে’র আদালতে মামলাটি দায়ের করেন আহমদ শফীর শ্যালক মোঃ মঈন উদ্দিন। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, মামলায় অভিযুক্তরা হলেন হেফাজত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব নাছির উদ্দিন মুনির ও মামুনুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদ্রিস ও হাবিব উল্লাহ, আহসান উল্লাহ, জাকারিয়া নোমান ফয়েজী, নুরুজ্জামান নোমানী, আবদুল মতিন, মোঃ শহীদ উল্লাহ, মোঃ রিজওয়ান আরমান, মোঃ নজরুল ইসলাম, হাসানুজ্জামান, এনামুল হাসান ফারুকী, মীর সাজেদ, জাফর আহমেদ, মীর জিয়াউদ্দিন, আহমেদ, মাহমুদ, আসাদুল্লাহ, জোবায়ের মাহমুদ, এইচএম জুনায়েদ, আনোয়ার শাহ, আহমদ কামাল, নাছির উদ্দিন, কামরুল ইসলাম কাশেমী, মোঃ হাসান, ওবায়দুল্লাহ ওবাইদ, জুবায়ের, মোঃ আমিনুল, রফিক সোহেল, মুবিনুল হক, নাঈম, হাফেজ সায়েমউল্লাহ ও হাছান জামিল। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ৮০-৯০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ৬ জনকে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী মামলাটিতে আনা অভিযোগ তদন্ত করে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
প্রসঙ্গত, হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমেদ শফী গত ১৮ সেপ্টেম্বর মারা যান। তিনি একইসঙ্গে হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল মাদ্রাসার মহাপরিচালকও ছিলেন। শতবর্ষী এই ধর্মীয় নেতা মৃত্যুর পূর্বে প্রায় ৩ দিন মাদ্রাসায় অবরুদ্ধ ছিলেন। জুনায়েদ বাবুনগরীর অনুসারীদের বিক্ষোভের মুখে আটক অবস্থায় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে ঢাকায় হাসপাতালে নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়। আহমদ শফীকে পরিকল্পিতভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে বলে তখনই অভিযোগ করেন তার অনুসারীরা।
মামলায় অভিযোগ আনা হয়, শাহ আহমদ শফির মৃত্যুর পূবে ১১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার বাবুনগর এলাকায় মামুনুল হকসহ আসামিরা বৈঠক করেছিলেন। সে বৈঠক থেকে শফিপুত্র আনাস মাদানীকে মাদ্রাসার শিক্ষা পরিচালক পদ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানানো হয়। শুধু তাই নয়, এ নিয়ে চাপ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত হয় আনাস মাদানীকে বহিষ্কার করা না হলে তার পিতা আহমেদ শফীকে চরম মূল্য দিতে হবে বলেও চরম হুমকি দেয়া হয়। হাটহাজারী বড় মাদ্রাসা হিসাবে পরিচিত দারুল উলুম মঈনুল মাদ্রাসায় শাহ আহমদ শফী এবং তার অনুসারীরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন ১৬ সেপ্টেম্বর। সেদিন একদল শিক্ষার্থীকে মাঠে নামানো হয়। তারা উগ্র ভাষায় স্লোগান ও গালাগাল করতে থাকে আনাস মাদানীর বিরুদ্ধে। একপর্যায়ে আসামি নাছির উদ্দিন মুনির দলের আমির আহমদ শফীর কার্যালয়ে প্রবেশ করে শাসিয়ে বলেন, ‘তুই হচ্ছিস বুড়ো শয়তান। তুই মরবি না, তুই সরকারের দালাল।’ ওই সময় শফীর কক্ষে প্রবেশ করে ৪০ থেকে ৫০ জন। তারা আনাস মাদানীকে বহিষ্কার করে ওই পদে হেফাজতের তৎকালীন মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীকে বসানোর দাবি করতে থাকেন। কিন্তু চাপের মুখেও শফী রাজি না হওয়ায় মামুনুল হকের মোবাইল ফোন থেকে নির্দেশনা আসে। এরপর নাসির উদ্দিন মুনীর তার দিকে তেড়ে যান এবং আমির আহমদ শফীর চেয়ারে লাথি মারেন। ক্ষুব্ধরা নাকের অক্সিজেন টান দিয়ে খুলে ফেললে অজ্ঞান হয়ে যান শফী। তখন মাইকে ঘোষণা করা হয় যে, আনাস মাদানীকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং আহমদ শফী দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন।
একই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অর্থ লুটের অভিযোগও আনা হয়। আর্জিতে বলা হয়, আসামিদের কয়েকজনের নেতৃত্বে উচ্ছৃঙ্খল ছাত্ররা ১৭ ডিসেম্বর আনাস মাদানীর কক্ষে ঢুকে নগদ ২৮ লাখ টাকা, স্ত্রী ও মেয়ের ২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুট করেছে। এছাড়া তারা মাওলানা ওমরের কক্ষ থেকে নগদ ৪০ লাখ টাকা এবং ওসমানের কক্ষ থেকে নগদ ৬০ হাজার টাকা ও মাওলানা দিদারের কক্ষ থেকে ৩০ হাজার টাকা লুট করে নেয়। সেদিন বিকেলে আহমদ শফীকে জিম্মি করে ফেলা হয়। আসামিরা আনাস মাদানীকে বহিষ্কার ও শফীর পদত্যাগের দাবিতে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে। একপর্যায়ে হেফাজত আমিরের কক্ষের বিদ্যুত সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। বিদ্যুত না থাকায় অক্সিজেন লাগাতে না পারায় তিনি কোমায় চলে যান। দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টাও ব্যাহত হয়। কারণ তাকে বহনকারী এ্যাম্বুলেন্সটিও বাধার মুখে পড়ে। অবশেষে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর কতব্যরত চিকিৎসক জানান যে, তিনি কোমায় চলে গেছেন। পরদিন ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে তাকে এয়ার এ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে। সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে চিকিৎসক আহমদ শফীকে মৃত ঘোষণা করেন।