৩১ করিডর খুলে দেওয়ায় পালে পালে গরু আসছে ভারত সীমান্ত দিয়ে
অনলাইন ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
সমঝোতার ভিত্তিতে ভারত সীমান্তের ৩১ করিডর খুলে দেওয়া হয়েছে। এ পথগুলো দিয়ে বৈধ পথে আসছে গরু। এ ছাড়া সীমান্তের বিভিন্ন পথ দিয়ে অবৈধ পথেও ঢুকছে দেদার গরু। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে প্রতিদিন ভারত থেকে হাজার হাজার গরু ঢুকছে।
যশোরের পশ্চিম প্রান্তজুড়ে ভারত সীমান্ত। এ সীমান্তের বেশিরভাগ রয়েছে কাঁটাতারের বেড়া। তবে যেসব স্থানে বেড়া নেই, সেসব পথে অনায়াসে গরু চলে আসছে বাংলাদেশে। এ ছাড়া যেখানে কাঁটাতারের বেড়া রয়েছে, সেখানে নেওয়া হয় ভিন্ন কৌশল। গরু-ছাগল মাঠে চরানোর সময় সুযোগ বুঝে গেট দিয়ে পার করে দেওয়া হয়। এ জন্য বিজিবি ও বিএসএফকে দিতে হয় অর্থ। বৈধ পথে গরু, ছাগল ও ভেড়া আনার জন্য বেনাপোলে কয়েকটি খাটালের (পথের) অনুমোদন দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পুটখালী, অগ্রভুলট, দৌলতপুর ও গোগা এই চারটি খাটাল দিয়ে সীমিতসংখ্যক গরু আসছে। তার পরও অবৈধ পথেই বেশি গরু আসছে এ সীমান্ত দিয়ে। শুধু যশোরই নয়, বেশিরভাগ সীমান্তেই বৈধ পথের চেয়ে অবৈধ পথে গরু আসছে বেশি।
সারা বছরই ভারত থেকে বৈধ ও অবৈধ দুভাবেই গরু আসে। কোরবানি ঈদের সময় গরু আসার পরিমাণ বেড়ে যায় কয়েক গুণ। চলতি বছর আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত থেকে বিনা বাধায় গরু আনার অনুমতি দিয়েছে বিজিবি। ভারতও গরু-মহিষ বিক্রির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তিন মাসের জন্য তুলে দিয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে ভারত থেকে গরু এলেও কাস্টমস কর্তৃক করিডরের ছাড়পত্রের কাগজ পেতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় ব্যবসায়ীদের। এ ছাড়া বৈধভাবে গরু এলে কয়েক দফা চাঁদা দিতে হয় ব্যবসায়ীদের। তাই বৈধভাবে গরু আনার তুলনায় অবৈধভাবে বেশি গরু প্রবেশ করছে।
ভারতে গবাদিপশু মাংসের জন্য গরু-মহিষ বিক্রিতে গত মাসে সরকার যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, তা তুলে দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিমকোর্ট। দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের কারণে তিন মাসের জন্য গোটা ভারতে আগের মতোই বাজারে গবাদিপশু কেনাবেচা হবে। এ কারণে কোরবানি ঈদে দেশটি থেকে বৈধ পথে গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।
বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন ২ জুলাই ভারত থেকে গরু আনার বিষয়ে বৈধ অনুমতি দেন। তিনি বলেন, ওখানে (ভারত) একটি সমস্যা আছে। গরু জবাই দিতে পারে না, ঘাসের সমস্যা। ওরা পাগল থাকে বাংলাদেশে গরু পাঠানোর জন্য। আমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গরু আসুক, গরু আসা কোনো সমস্যা নয়। করিডরে যেন কোনো রাখাল মারা না যায়। আমরা বলেছি, দুই দেশের রাখাল করিডর দিয়ে জিরোলাইন পর্যন্ত যাক। ওরা (ভারতীয়রা) জিরোলাইনে গরু দিয়ে যাক, এরা জিরোলাইন থেকে নিয়ে আসুক।
গরু ব্যবসায়ীরা জানান, এ বছর বৈধভাবে গরু আনার অনুমতি দেওয়ার কারণে গত বছরের তুলনায় এবার আমদানি ৪ থেকে ৫ গুণ বাড়বে। তবে এ খাতে বিটগুলোয় সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
সূত্র জানায়, বিট বা খাটালের নিয়মানুযায়ী সীমান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে ভারতীয় রাখালরা গরুর চালান বাংলাদেশি রাখালদের কাছে হস্তান্তর করেন। পরে সেই গরু বিটে রাখা হয়। এর পর সরকারি শুল্ক বাবদ গরুপ্রতি ৫০০ টাকা ও বিট কর্তৃপক্ষকে ৫০ টাকা পরিশোধ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান ব্যবসায়ীরা।
বিজিবির দেওয়া তথ্যমতে, চলতি বছর জুলাই পর্যন্ত বৈধ পথে ভারত থেকে চার লাখ ১৭ হাজার গরু এসেছে। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, গরু আসার পরিমাণ ততই বাড়ছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৭৭ হাজার ৪৪১ গরু, ফেব্রুয়ারিতে ৫৯ হাজার ২৭৫, মার্চে ৫০ হাজার ৭০০, এপ্রিলে ২৯ হাজার ৩৫৬, মে মাসে ৫১ হাজার ২২৬ ও জুনে ৯৬ হাজার ৯৭৭ গরু এসেছে।
তবে গরু ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারি হিসাবে সঠিক তথ্য নেই। বেসরকারি হিসাবে অবৈধ পথে গরু এসেছে বৈধ পথের অন্তত ১০ গুণ। তারা বলছেন, শুধু জুলাই মাসেই গরু এসেছে বছরের প্রথম ছয় মাসের সমান। একই সঙ্গে চলতি আগস্টে ভারত থেকে বৈধ ও অবৈধ পথে অন্তত ৪০ লাখ গরু আসবে বলে মনে করছেন তারা।
বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভারত থেকে অবৈধ পথে এসব গরু আসায় স্বল্পপরিমাণ টাকা শুল্ক জমা করলেও সব দিক ম্যানেজ করতে গরুপ্রতি প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা ব্যয় হয়ে যায়। এ ছাড়া গরুপ্রতি আরও প্রায় তিন হাজার টাকা দিতে হয়।
একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন সীমান্ত থেকে অবৈধভাবে গরু আনতে ইউপি চেয়ারম্যানের জন্য গরুপ্রতি রাখতে হয় ৪০০ টাকা, বিজিবির জন্য ২০০, যারা গরুগুলো সীমান্ত থেকে খোয়াড় পর্যন্ত আনে তাদের ১০০, যার জায়গা ব্যবহার করে হাট বসানো হয়েছে তাকে ১৫০, খোয়াড় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নকারীকে ৫০, যে ব্যক্তি করিডর করার জন্য যায় তাকে ১০০, বাকি দুই হাজার টাকা রাজনৈতিক নেতাদের দিতে হয়।
যশোরের নাভারণ পশু শুল্ক করিডর সূত্রে জানা যায়, ১ আগস্ট থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত এক সপ্তাহে বেনাপোলের বিভিন্ন করিডর দিয়ে বৈধ পথে এক হাজার ৬৭০ গরু ও ৩২০ ছাগল এসেছে। এ অফিসে দায়িত্বরত কাস্টমস পরিদর্শক সোমা মণি জানান, বেনাপোল সীমান্তের চারটি পশুহাট পুটখালী, অগ্রভুলট, দৌলতপুর ও গোগা দিয়ে যে পশু আসে নাভারণ করিডরে, তার ভ্যাট আদায় করা হয়। হিসাব করে দেখা গেছে, বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন ২০০-২৫০ ভারতীয় পশু দেশে আসছে। সূত্র- দৈনিক আমাদের সময়