প্রাথমিকের ৩৩ লাখ পাঠ্যবই এখনও দেশে আসেনি
অনলাইন ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডি.কম
ভারতের মুম্বাইয়ের মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান ‘শীর্ষাসাই’ সময়মতো পাঠ্যবই ছেপে সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে। চলতি শিক্ষাবর্ষে ৫৯ লাখ পাঠ্যবই মুদ্রণের কাজ পায় প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে মাত্র ২৬ লাখ বই সরবরাহ করেছে, তাও পাঠ্যপুস্তক দিবসের পরে। ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে এসব বই সরবরাহ করার কথা থাকলেও এখনও পারেনি। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী অঞ্চলের ১৯টি উপজেলার শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর। এসব এলাকার শিক্ষার্থীরা এখনও পুরো সেট বই হাতে পায়নি। একটি বা দুটি বই নিয়ে ক্লাস শুরু করতে হয়েছে তাদের।
দেশীয় মুদ্রাকররা বলছেন, মুদ্রণশিল্পে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও কেবল বিশ্বব্যাংকের শর্ত মানতে প্রাথমিকের বই ছাপাতে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করতে হচ্ছে। অথচ পুরো বইয়ের মুদ্রণ ব্যয়ের মাত্র ৮ শতাংশ অর্থ দেয় তারা। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও বলছেন, বই মুদ্রণের কাজটি পুরোপুরি দেশে করা গেলে তাদের পক্ষে মনিটর করা আরও সহজ হতো।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) থেকে জানা গেছে, চলতি বছর প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ের ৯৮ লটের মধ্যে ১৬ লটে এক কোটি ৮০ লাখ বই ছাপার কাজ পায় ভারতীয় তিনটি প্রতিষ্ঠান। বাকি বই দেশে ছাপা হয়। বর্তমানে ভারতে আটকে রয়েছে ৩৩ লাখ বই। একাধিক সূত্র জানায়, পাঠ্যবই সংকট কাটাতে বাফার স্টক (আপৎকালীন মজুদ) থেকে ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় চাহিদা অনুযায়ী বই পাঠালেও চট্টগ্রাম ও রংপুর বিভাগের অধিকাংশ এলাকায় বই সংকট দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় চলছে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান এনসিটিবিতে। এ কারণে বই উৎসবের পরপরই তড়িঘড়ি করে ভারত সফর করেছেন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা।
চলতি শিক্ষাবর্ষে চার কোটি ২৬ লাখ ৩৫ হাজার ৯২৯ শিক্ষার্থীর জন্য প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বিতরণের জন্য মোট ৩৬ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার ২৪৫টি বই ছাপানোর টেন্ডার করে এনসিটিবি। এর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপিয়েছেন দেশীয় মুদ্রাকররা। প্রাথমিক স্তরের ১১ কোটি ৫৫ লাখ ২৬ হাজার ৯৫২টি বই ছাপানো হয়েছে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে, দেশে-বিদেশে। দেশের পাশাপাশি এবার ভারত ও চীনে প্রাথমিক স্তরের বই ছাপানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মুদ্রণশিল্প সমিতির সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, “এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ এসে পেঁৗছেছে। পাঠ্যবইগুলো এখন খালাস হচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যে স্কুলে পেঁৗছে যাবে।” বন্দরে জাহাজ থাকার তথ্যটি সঠিক নয়। এনসিটিবির কর্মকর্তারা না চাইলেও চেয়ারম্যান নিজ আগ্রহে শীর্ষাসাইকে মুদ্রণ কাজ দিয়েছেন। অথচ প্রতিষ্ঠানটির এ দেশীয় প্রতিনিধি এর আগেও বই ছাপার কাজ নিয়ে যথাসময়ে সরবরাহে ব্যর্থ হয়েছেন। এর আগে সময়মতো বই না আসার কারণ হিসেবে এনসিটিবি চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম বন্দরে সাইক্লোনের কথা বলেছেন। অথচ গত দুই মাসে চট্টগ্রামে কোনো সাইক্লোন হয়নি। তিনি আরও বলেন, ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেশি সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরও তারা কেন সময়মতো বই দিতে পারল না এটা খতিয়ে দেখতে হবে।
প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই দেখভালকারী কর্মকর্তা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সলিমউল্লাহ বলেন, পাঠ্যবই দেশে ছাপা হলেই বেশি ভালো হতো। আমাদের মনিটরিংয়ের ঝক্কি কমে যেত। শিক্ষার্থীরাও সময়মতো বই পেত।