রোহিঙ্গা বালক জসিম এর পালিয়ে আসার গল্প ও বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান

 

 

 

অনলাইন ডেস্ক  কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর অত্যাচার, নিপীড়ন থেকে বাঁচতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান সীমান্ত পাড় হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। অনেকে এখনো আছে সীমান্তের বিভিন্ন স্থানে, পাহাড়ে, বন-জঙ্গলে লুকিয়ে। সীমাহীন কষ্ট করে যারা বাংলাদেশে আসতে পেরেছেন তারা এখানে নিজেদেরকে নিরাপদ মনে করছেন। এদেরই একজন ১২ বছরের স্কুলছাত্র জসিম। আল-জাজিরাকে জানিয়েছে সে সেখানে তাদের উপর অত্যাচার ও তাদের পালিয়ে আসার গল্প।

রাখাইন থেকে ১৩ দিন ধরে কষ্টকর পথচলার পর মায়ের সাথে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে জসিম। ইংরেজিতে কিছুটা পারদর্শী জসিম বিশ্ববাসীকে তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে।

জসিমের ভাষায়, ‘আমার নাম জসিম। আমার বয়স ১২ বছর। সহিংসতা শুরু হওয়ার আগে আমি স্কুলে পড়ছিলাম। আমার প্রিয় বিষয় ছিল ইংরেজি। কারণ আমি ভাবতাম, যদি আমি ইংরেজি বলতে পারি তাহলে আমি বিশ্বের বিভিন্ন জনগণের সাথে যোগাযোগ করতে পারব। তাদের কাছে তুলে ধরতে পারব আমার মতামত। আশা করি আমি শিগগিরই আবার আমার লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারব। কারণ আমি একজন শিক্ষক হতে চাই।’

‘যখন সেনাবাহিনী আমাদের গ্রামে ঢুকলো, তখন আমরা দৌড়ে পালালাম। আমি দেখলাম অনেক সৈন্য; ১০০ থেকে ২০০ হবে। তারা আমাদেরকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়লো এবং আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিল। আমি খুবই ভয় পেয়েছিলাম’, বলছিল জসিম।

‘আমরা একটি জঙ্গলে লুকিয়ে পড়ি এবং পরে বাংলাদেশের দিকে হাঁটতে থাকি। ১৩টি দিন আমাদেরকে বন জঙ্গলে কাটাতে হয়েছে।

এটি ছিল খুবই কঠিন একটি ভ্রমণ। আমাদেরকে হেঁটে অতিক্রম করতে হয়েছে বড় বড় পাহাড় ও কিছু ছোট নদী। আমি সব সময়ই ভীত ছিলাম যে, সেনাবাহিনী আমাদেরকে বাংলাদেশে প্রবেশের আগেই না ঘিরে ফেলে। এ পথে আমাদেরকে খুবই সতর্ক থাকতে হয়েছে। কারণ সেনাবাহিনী বিভিন্ন স্থানে মাটিতে ছোট ছোট বোমা পুঁতে রেখেছে।

আমি খুবই ব্যাথিত যে, আমার গ্রামটি আর সেখানে নেই। আমরা কিছুই আনতে পারি। তাই সবই হারালাম। আমি আমার মায়ের সাথে এসেছি। আমার বাবা এখনো রাখাইনে আছে। তিনি আমাদেরকে বলেছেন নিজেদের রক্ষা করতে এবং তিনি পরে আমাদের কাছে আসবেন। কিন্তু আমরা জানি না তিনি কোথায়, কেমন আছেন। তার কোনো খবরও পাওয়া যাচ্ছে না।

আমি উদ্বিগ্ন যে, সেনাবাহিনী তাকে ধরে বোমা মেরে হত্যা করেছে। আমরা নিরাপদ এজন্য আনন্দিত কিন্তু এখানে বসবাস করাও খুব কঠিন। কারণ এখানে বসবাস করার মতো কোনো ঘর নেই। আমাদেরকে ভেজা মাটিতে ঘুমাতে হচ্ছে।

বিশ্ববাসীর প্রতি আমার বার্তা, আমরা মিয়ানমারের নাগরিক। যদি তারা আমাদেরকে নাগরিক ঘোষণা করতো তাহলে আমরা ভালো থাকতে পারতাম। এটাই আমাদের চাওয়া।’

চট্টগ্রামের একটি ক্যাম্প থেকে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আল-জাজিরার সাংবাদিক কেটি আরনল্ড।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!