সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে বিএনপি
অনলাইন ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
১২ নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে বিএনপি। এর আগে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে চিঠি দেয় দলটি।
বুধবার বিএনপি চেয়ারপরসন কার্যালয়ের মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান আরটিএনএনকে বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুমতির আশ্বাস পাওয়া গেছে তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো জানায়নি।
বিএনপি এরই মধ্যে দুদফা তারিখ পরিবর্তন করে নতুন তারিখ ১২ নভেম্বর নির্ধারণ করেছে। এ আগেও ৮ ও ১১ নভেম্বর সমাবেশ করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল বিএনপি। কিন্তু পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওইদিনগুলোতে আপত্তি থাকায় তারা ফের তারিখ পরিবর্তন করে ১২ নভেম্বর নির্ধারণ করেছে।
বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে, তবে এখনো আনুষ্ঠানিক অনুমতি পাওয়া যায়নি। তবে তারা আশা করছেন ওই দিন সমাবেশ করা সম্ভব হবে। আর সেভাবেই সমাবেশের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন উধর্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আসলে এ ধরনের সমাবেশের অনুমতি দিতে উপরের দিকনির্দেশনা প্রয়োজন। ফলে এখনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করা হচ্ছে।
খালেদা জিয়াকে সরকার জিয়ার মাজারে যেতে দেয়নি: মির্জা ফখরুল
এদিকে মঙ্গলবার নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ভোটবিহীন সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে শহীদ জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা জানাতে যেতে দেয়নি বলে জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানানোর কথা ছিল কিন্তু সরকারের অনুমতি না পাওয়ায় যাননি খালেদা জিয়া।
মির্জা ফখরুল বলেন, সমাবেশের অনুমতি এখনো পাইনি, আশা করছি অনুমতি পাবো। অন্যথায় প্রমাণিত হবে সরকার বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে।
জিয়ার আদর্শে বলীয়ান মানুষ দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষায় সংকল্পবদ্ধ: খালেদা
এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এক বিবৃতিতে বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শাহাদাতবরণ করলেও তার আদর্শে বলীয়ান মানুষ দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষায় এখনো দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। তিনি বলেন, বিদেশি শক্তির এ দেশীয় চররা ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াকে হত্যা করে। ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর উপলক্ষে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন।
বিবৃতিতে খালেদা বলেন, ‘ভোটারবিহীন সরকার জবরদস্তি করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। তারা গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াকু নেতাকর্মীদের বীভৎস নির্মমতায় দমন করছে, বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক অধিকারগুলোকে নির্দয় ফ্যাসিবাদী শাসনের যাঁতাকলে সিপাহী বিপ্লব ও সংহতি দিবসের পৈশাচিকভাবে পিষ্ট করছে।’
৭ নভেম্বরের প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘৭ নভেম্বর জীবনের এক ঐতিহাসিক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে সৈনিক-জনতা রাজপথে নেমে এসেছিল জাতীয় স্বাধীনতা সুরক্ষা ও হারানো গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবনের দৃঢ় প্রত্যয় বুকে নিয়ে।
তাই ৭ নভেম্বরের ঐতিহাসিক বিপ্লব অত্যন্ত তাৎপর্যমণ্ডিত। স্বাধীনতাত্তোর রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, তৎকালীন ক্ষমতাসীন মহল নিজ স্বার্থে জাতীয় স্বাধীনতাকে বিপন্ন করে আধিপত্যবাদের প্রসারিত ছায়ার নিচে দেশকে ঠেলে দেয়। আর এটি করা হয় শুধু নিজেদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য। আর সেজন্য মানুষের বাক-ব্যক্তি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে গলাটিপে হত্যার মাধ্যমে একদলীয় বাকশাল গঠন করে বিভীষিকাময় শাসন চালু করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘দেশের সব বিরোধী রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করে একটি মাত্র দল বাকশাল গঠন করা হয়। ফলে দেশে চরম অশান্তি ও হতাশা নেমে আসে। বাকশালী সরকার চরম অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী পন্থায় মানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকারগুলোকে হরণ করে। দেশমাতৃকার এই চরম সংকটকালের ৭৫ এর ৩ নভেম্বর কুচক্রীরা মহান স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে সপরিবারে ক্যান্টনমেন্টে বন্দী করে।’
খালেদা বলেন, ‘এই অরাজক পরিস্থিতিতে ৭ নভেম্বর স্বজাতির স্বাধীনতা রক্ষায় অকুতোভয় দেশপ্রেমিক সৈনিক এবং জনতার ঢলে রাজপথে এক অনন্য সংহতির স্ফুরণ ঘটে এবং জিয়াউর রহমান মুক্ত হন। এই পটপরিবর্তনে রাষ্ট্রপতি জিয়ার নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব প্রভাবমুক্ত হয়ে শক্তিশালী সত্তা লাভ করে। গণতন্ত্র অর্গলমুক্ত হয়ে অগ্রগতির পথে এগিয়ে যায়, এই দিন থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়। মানুষের মনে স্বস্তি ফিরে আসে।’
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের নতজানু নীতির কারণেই দেশের সার্বভৌমত্ব দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে। গোপন চুক্তি সম্পাদন করে আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে প্রভুত্ব কায়েমের বেপরোয়া কার্যক্রম অব্যাহত আছে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘বর্তমানে আবারো বিদেশি শক্তির ক্রীড়নকে পরিণত হওয়া শিখণ্ডি সরকার রাষ্ট্রক্ষমতাকে জোর করে আঁকড়ে ধরেছে। সরকারের নতজানু নীতির কারণেই দেশের সার্বভৌমত্বকে দিনের পর দিন দুর্বল হয়ে পড়েছে।’
খালেদা জিয়া এ অবস্থা থেকে উত্তোরণে ৭ নভেম্বরের চেতনায় সব জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্রকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।