অ্যাসপারাগাস
অ্যাসপারাগাস নাম শুনেই ভাবনায় চলে এসেছে এটা আবার কি ? সবুজ চিকন ডাঁটার মতো এবং ছোট পাতার আবরণের এ্যাসপ্যারাগাস সবজি। অ্যাসপারাগাস লিলি গোত্রের বহু বর্ষজীবী গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। উন্নত বিশ্বে বহুল ব্যবহৃত বিলাসী সবজি। আমাদের দেশে এর ব্যবহার নতুন হলেও ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা ও পশ্চিম এশিয়ায় ব্যাপক চাষ ও ফলন হলেও এর বাজার বিশ্ব-বিস্তৃত। ফলে বাংলাদেশেও পাওয়া যাচ্ছে অ্যাসপারাগাস। উন্নত বিশ্বে প্রতি বেলার খাবার মেনুতে অ্যাসপারাগাস খুবই কমন তবে পরিবেশন পদ্ধতিতে ভিন্নতা রয়েছে।
ওষুধি গুণের জন্য পশ্চিমা দেশগুলোতে অ্যাসপারাগাস বহুল সমাদৃত। অ্যাসপারাগাস মূলত, প্রোটিনসহ ভিটামিন B6, A, C, E, I, K, থায়ামিন, রিভোফ্লাভিন, রুটিন, নায়াসিন, ফলিক এসিড, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, কপার ও ম্যাঙ্গানিজসমৃদ্ধ। অ্যাসপারাগাসে প্রচুর পরিমাণে প্লান্টপ্রোটিন হিস্টোন এবং গ্লটাথিয়ন থাকে, যা এন্টিঅক্সিডেণ্ট হিসেবে দেহের ক্ষতিকারক ফ্রিরেডিক্যালের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত কাজ করে। যা ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে এবং দেহের টনিক হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া ফলিক এসিড থাকার কারণে অ্যাসপারাগাস হার্টে ব্লক সৃষ্টিতে সরাসরি বাঁধা দেয়।এজন্য হৃদরোগীদের জন্য আ্যাসপ্যারাগাস বেশ উপকারী। উচ্চতর গবেষণায় প্রতিয়মান হয়েছে যে, মানব দেহের ত্বক ও ফুসফুসের ক্যান্সারসহ কিডনি ইনফেকশান ও পিত্ত্ব থলিতে পাথর প্রতিরোধেও অ্যাসপারাগাস উল্লেখযোগ্য কাজ করে। প্রতিদিন ২বার সকাল সন্ধ্যায় ২-৩টি অ্যাসপারাগাস স্টিক খেলে ৩-৪ সপ্তাহের মাধ্যেই এসব রোগের উপশম হয়।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে অ্যাসপারাগাসের বাংলাদেশে উৎপাদন উপযোগিতা, উৎপাদন পদ্ধতি ও পুষ্টিমান নিয়ে গবেষণা চলছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে চাষযোগ্য ৩টি লাইন সাউ অ্যাসপারাগাস-১ (মেরী ওয়াশিংটন), সাউ অ্যাসপারাগাস-২ (গ্রীন বাংলা) ও সাউ অ্যাসপারাগাস-৩ (ওয়েলকাম ঢাকা) উৎপাদন শুরু হয়েছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্যানতত্ত্ব খামারে।
অ্যাসপারাগাস আমাদের দেশে খুবই অপ্রচলিত হলেও এর পুষ্টিগুনের জন্যে এর প্রসার খুবই জরুরী। অ্যাসপারাগাস এখন উত্তরাঞ্চলেই চাষ হচ্ছে। বিশেষ করে বগুড়া অঞ্চলে এই সবজির আবাদ হচ্ছে বেশি। সেই এলাকার গৃহস্থ ও কৃষক বাড়িতে তা দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। রাজধানী ঢাকায় পাঁচ তারকা হোটেলগুলোতে এই সবজি আসছে বগুড়া থেকে। চাহিদা অনুযায়ী অ্যাসপারাগাস সরবরাহ করা এখনও সম্ভব হচ্ছে না। তবে আশার কথা, এক জনের দেখাদেখি অন্যরা এই সবজি আবাদ করায় শীঘ্রই চাহিদা পূরণ করে এ্যাসপ্যারাগাস বিদেশেও যাবে।