আলাদা হচ্ছে শিশু আদালত
আইনের খসড়া প্রস্তুত করেছে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়। আগামী ১৬ জানুয়ারি খসড়াটিতে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়, নারী সংগঠন, বেসরকারি সংস্থা (এনজিও), ইউনিসেফ, বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিসহ সংশ্লিষ্ট সবার অভিমত চাওয়া হয়েছে। সব পক্ষের অভিমত পাওয়ার পর খসড়াটি চূড়ান্ত করা হবে। এরপর মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে অনুমোদনের জন্য।
সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (আইন ও সংস্থার অধিশাখা) মৃত্যঞ্জয় সাহা বলেন, ‘হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী আইনটি সংশোধন করা হচ্ছে। বিদ্যমান আইনে যে অস্পষ্টতা রয়েছে, তা স্পষ্ট করে খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও বিশেষজ্ঞদের অভিমত পাওয়া গেলে চূড়ান্ত করা হবে। এরপর মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে খসড়াটি অনুমোদনের জন্য।
শিশু আদালত নির্ধারণ করার বিষয়ে ২০১৩ সালে শিশু আইন ১৬ ধারায় ১ উপ-ধারায় ‘ক’ সংযোজন সংশোধন খসড়ায় বলা হয়, ‘শিশু আদালত’ সার্বক্ষণিক আদালত হিসেবে গণ্য হবে। অবকাশকালীন, সরকারি ছুটি বা অন্যকোনও বন্ধের দিন সংশ্লিষ্ট জেলা ও দায়রা জজ অথবা মহানগর দায়রা জজ, অতিরিক্ত দায়রা জজ পদমর্যাদার একজন বিচারক শিশু আদালতের দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত থাকবেন।
এ প্রসঙ্গে উপসচিব মৃত্যুঞ্জয় সাহা বলেন, ‘বিদ্যমান আইনে শিশুদের অপরাধ বিচারে এভাবে পৃথক আদালত ছিল না। দায়রা জজের আদালতই ছিলেন শিশু আদালত। নারী ও শিশু নির্যাতন বিশেষ ট্রাইব্যুানালের বিচরক শিশু আদালতের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন।’
২০১৩ সালের শিশু আইনের ১৩ ধারার ১ উপধারার শেষে শর্তে বলা হয়েছে, ধারা ৫৪-এর উপধারা (২)-এর শর্ত প্রতিপালনের উদ্দেশ্যে প্রতি থানায় একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তার পদায়ন নিশ্চিত করতে হবে। বিদ্যমান আইনের সংশ্লিষ্ট ধারার শর্তে বলা রয়েছে, নারী সাব-ইনস্পেক্টর কর্মরত থাকলে ওই ডেস্কের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
বিদ্যমান আইনের ৯ ধারায় ২ উপধারা সংযোজন করে ‘শহর শিশুকল্যাণ বোর্ড’ গঠন করার কথা বলা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের আওতাধীন শহর এলাকায় এক বা একাধিক বোর্ড গঠিত করতে হবে। বিদ্যমান আইনে জাতীয়, জেলা ও উপজেলা শিশুকল্যাণ বোর্ড গঠন করার বিধান রয়েছে। শহর পর্যায়ে এ কার্যক্রম বাস্তবায়নে বোর্ড গঠন করতে এই সংযোজন করা হয় প্রস্তাবিত খসড়ায়।
বিদ্যমান আইনের ৫ ধারার উপধারা ১ ও ২ সংশোধন করে খসড়ায় বলা হয়, শিশু অধিকার সুরক্ষাবিষয়ক কার্যক্রম তদারকি, পরিবীক্ষণে অধিদফতরের সদর কার্যালয় ও বিভাগীয় পর্যায়ে শিশু অধিকার সুরক্ষা অধিশাখা গঠনসহ প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করতে হবে।
বিদ্যমান আইনের ১৫ ধারা সংশোধন করে খসড়ায় বলা হয়েছে, বিচার কাজ শুরুর আগে তদন্তকালে শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা প্রাথমিকভাবে শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কের জন্য আলাদা দু’টি নথি খুলবেন। প্রাপ্তবয়স্কের নথি সংশ্লিষ্ট আদালতে এবং শিশুসংশ্লিষ্ট নথি শিশু আদালতে দাখিল করতে হবে।
শিশুদের বয়স নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনের ১৪ (গ) ধারা সংশোধন করে খসড়ায় বলা হয়, জন্ম সময়ের হাসপাতালের ছাড়পত্র, টিকা গ্রহণের কার্ড, পাবলিক পরীক্ষার নিবন্ধন সনদ, পাসপোর্ট ইত্যাদি পর্যালোচনা করা হচ্ছে কিনা, সে বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে।
আইনের ৪৬ ধারা সংশোধন করে মামলা তদন্তের জন্য তিন মাস সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে কোনও কারণে তদন্ত শেষ না হলে পরবর্তী সময়ে আরও ৩০ দিন পাবেন তদন্ত কর্মকর্তা। আর ১২০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ না হলে শিশু আদালত অভিযুক্ত শিশুকে জামিন দিতে পারবেন।
শিশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা, শিশুকে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত, শিশুর কাছ থেকে কোনও দ্রব্য বন্ধক বা কেনা ও শিশুকে অসৎ পথে পরিচালনা বা উৎসাহ দেওয়া হলে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান করা হয়েছে। আইনের ৭০, ৭১, ৭৬ ও ৭৮ ধারা সংশোধন করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ২০০০ সালের আইনে ৮ ধারায় বিচার করার বিধান রাখা হয়েছে। ২০০০ সালের সংশ্লিষ্ট আইনের ধারায় অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা জাবজ্জীবন কারাদণ্ড।