লিভ টুগেদার করে যা হলো রোজিনার

 

অনলাইন ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

লিভ টুগেদার থেকে অবিশ্বাস এবং এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে ঝগড়াঝাটিই কাল হয় শিউলি আক্তার ওরফে রোজিনার। গ্রেফতার মো. ফয়সাল (৩২) পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে একাধিক পুরুষের সঙ্গে মাগুরার মোহাম্মদপুর থানার ডুমরসিয়া সেনের চর গ্রামের রোজিনার সম্পর্ক থাকার অভিযোগ করে তাকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। সে জানায়, রোজিনার প্রতি অবিশ্বাস তাকে বিষিয়ে তোলে।

তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন, রোজিনার কথিত স্বামী ফয়সাল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন এবং আমরা সবকিছু গুছিয়ে এনেছি, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলেই চার্জশিট দেব। এই হত্যার কোনো ক্লু ছিল না।

তদন্ত কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ছদ্মবেশে ঘুরে আসামিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। এর স্বীকৃতি হিসেবে যাত্রাবাড়ী থানার কর্মকর্তা এসআই কেএম আজিজুল ইসলামকে গত শনিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ক্রাইম কনফারেন্সে শ্রেষ্ঠ তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়।

সূত্র জানায়, দীর্ঘ ৮ বছর ধরে ফয়সাল ও রোজিনার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। গত বছরের মাঝামাঝিতে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে রাজধানীর ২২৬/এ নম্বর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীতে একটি কক্ষ ভাড়া নেয় তারা। রোজিনা নিয়মিত ওই বাসায় থাকলেও ফয়সাল থাকতেন মিরপুরে। মাঝেমধ্যে তিনি এ বাসায় আসতেন। কিছুদিনের মধ্যেই রোজিনার সঙ্গে অন্য পুরুষের সম্পর্ক আছে বলে সন্দেহ করতে থাকেন ফয়সাল। এ নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো।

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ফয়সাল পুরো ঘটনাই খুলে বলে। সে জানায়, গত ২৭ নভেম্বর রাতে ফয়সাল যাত্রাবাড়ীর বাসায় এসে দেখেন রোজিনা রুমে নেই। নিজের কাছে থাকা চাবি দিয়ে রুমটি খুলে ভেতরে ঢোকেন। এর পর পরই রোজিনা রুমে আসেন। রাতে বাইরে থাকা নিয়ে দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ফয়সাল বাসার বাইরে যায় এবং কিছু কেনাকাটা শেষে এসে দেখেন রোজিনা কারও সঙ্গে মোবাইলে কথা বলছে। এতে ফয়সাল আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এ নিয়েও দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ফয়সাল রুমের স্যান্ডেল নিয়ে বাথরুমে গেলে- এ নিয়েও দু’জনের মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়। ঝগড়া শুনে বাড়িওয়ালার স্ত্রী ছুটে আসে এবং রোজিনার পক্ষ নিয়ে ফয়সালকে বকাঝকা করে। এতে ফয়সাল আরও ক্ষেপে যায়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফয়সালের স্বীকারোক্তিতে জানা যায়, ক্ষুব্ধ ফয়সাল দরজা বন্ধ করে রোজিনাকে মারধর করতে থাকে। একপর্যায়ে রোজিনার নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। রোজিনা মামলার ভয় দেখালে আরও ক্ষেপে গিয়ে সজোরে তলপেটে লাথি মারে। এ পর্যায়ে রোজিনা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। রোজিনাকে ওই অবস্থায় বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে চলে যান ফয়সাল। তিন দিন পর গত ৩০ নভেম্বর রাতে তালাবদ্ধ ওই রুম থেকে রোজিনার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

নিহতের ফুফু জাহানারা বেগম বাদী হয়ে গত ১ ডিসেম্বর ফয়সালকে আসামি করে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা করেন। জাহানারা বেগম যুগান্তরকে জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি মাগুরার মোহাম্মদপুর থানার ডুমরসিয়া সেনের চর গ্রামে। বাবার মৃত্যুর পর রোজিনার মা অন্যত্র বিয়ে করেন। এ কারণে রোজিনা তার কাছেই বড় হয়।

প্রায় ১০ বছর আগে রোজিনা চাকরির জন্য ঢাকায় আসেন। রোজিনা গার্মেন্টসে চাকরি করত বলেই জানতেন তিনি। পরিবারকে না জানিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে রোজিনা ও ফয়সাল দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর শেখ পাড়ায় অবস্থিত হযরত আলীর ৫ম তলাবিশিষ্ট বাড়ির দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষ ভাড়া নেয়।

৩০ নভেম্বর ওই রুম থেকে গন্ধ বের হলে আশপাশের লোকজন পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ দরজা ভেঙে রোজিনার লাশ উদ্ধার করে। খবর পেয়ে জাহানারা বেগম গ্রামের বাড়ি থেকে এসে মিটফোর্ড হাসপাতলে রোজিনার লাশ শনাক্ত করেন।

যাত্রাবাড়ী থানার ওসি আনিছুর রহমান বলেন, ফয়সাল খুবই ধূর্ত প্রকৃতির। তাকে গ্রেফতার করতে পুলিশকে নানা ধরনের কৌশল অবলম্বন করতে হয়েছে। সে মিরপুরে থাকত। মাঝেমধ্যে যাত্রাবাড়ীর ওই বাসায় আসত। কারওয়ান বাজারে কাঁচামালের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল সে। তাকে আইনের আওতায় আনতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই কেএম আজিজুল ইসলাম ১৭ দিন ছদ্মবেশে কারওয়ানবাজারে কাঁচামাল ব্যবসায়ী হিসেবে কাজ করেন।

তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত গত ১৮ ডিসেম্বর আসামিকে গ্রেফতার করা হয় এবং পরের দিন তাকে আদালতে সোপর্দ করা হলে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলেই আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে বলে তিনি জানান।

এসআই কেএম আজিজুল ইসলাম বলেন, গ্রেফতারের পর ফয়সাল লিভ টুগেদারের বিষয়টি স্বীকার করেছে। কীভাবে খুন করা হয়েছে তাও জানিয়েছে।

সে বলেছে, রোজিনাকে হত্যা করার ইচ্ছা তার ছিল না। একাধিক পুরুষের সঙ্গে রোজিনার সম্পর্কের বিষয়টি তিনি মেনে নিতে পারেননি। এ থেকেই মূলত সূত্রপাত। মারধরের একপর্যায়ে মামলার ভয় দেখানোর কারণে মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল। তাই সজোরে লাথি মেরেছে। সে ভেবেছিল জ্ঞান ফিরলে কারও না কারও সহযোগিতায় রোজিনা ঘর থেকে বের হতে পারবে।

যাত্রাবাড়ী থানার পরিদর্শক (অপারেশন) রাহাৎ খান ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া প্রসঙ্গে জানান, আশা করছি এ মাসের মধ্যে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া যাবে। প্রতিবেদন পেলেই চার্জশিট দেয়া হবে।-যুগান্তর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!