‘আমি খুব গরীব ঘরের ছেলে, বাবা কুলি, মুহূর্তেই কোটিপতি বনে যাব কখনো ভাবিনি’

 

 

স্পোর্টস ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

জীবন মানে ছিল লুকিয়ে লুকিয়ে টেনিস বলে বন্ধুদের সঙ্গে খেলা। কিন্তু গতকাল সোমবার পৃথিবীটাই পাল্টে গেল। লুকিয়ে লুকিয়ে তাকে আর খেলতে হবে না। বরং তার প্রতিটা ডেলিভারির সাক্ষী থাকতে পারে ক্রিকেট প্রেমীরা। বন্ধুদের জায়গায় ব্যাট হাতে থাকবে বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানরা।

সোমবার আইপিএল নিলাম যখন চলছিল, টিভির সামনে চোখ রেখে বসে ছিলেন বছর পঁচিশের এক বোলার। কয়েক মিনিটে তিনি দশ লক্ষ থেকে হয়ে উঠলেন তিন কোটির ক্রিকেটার। নিলামে তাকে এই দামে কিনে নেয় প্রিতি জিনতার কিংস এলিভেন পাঞ্জাব। আইপিএল গ্রহে গলি থেকে রাজপথে আসার নতুন কাহিনী। দশম আইপিএলের নিলামে সেরা চমক।

নিলাম শেষে নটরাজন আনন্দবাজারকে বলেন, আমি এখনও ভাবতেই পারছি না। আমার মাকে বলা মাত্র তো উনি কাঁদতে শুরু করে দিয়েছিলেন। বন্ধুরাও বলল, আজ ভাল কিছু খাওয়াতে হবে। তবে এত দাম দেওয়ায় এখন প্রত্যাশাও অনেক থাকবে। সেই চাপটা আমায় নিতে হবে।

বাঁ হাতি মিডিয়াম পেসার তিনি। ইয়র্কার দিতে ওস্তাদ। কিন্তু ক্রিকেটের এই উঠতি তারকা এক সময় ভেবেছিলেন বাবার মতোই তাকেও হয়তো কুলির কাজ করেই জীবন কাটাতে হবে।

তিনি বলেন, ক্রিকেটই আমাকে নতুন করে পথ দেখালো। আমি খুব গরীব ঘরের ছেলে। বাবা কুলি। মায়ের মুরগির মাংসের দোকান। আইপিএল তো দূরের কথা, রঞ্জি খেলতে পারব সেটাই এক সময় ভাবতে পারিনি।

ছোটবেলায় মা-বাবা পড়াশুনোর চাপ দিলেও সালেমের পাড়ায় লুকিয়ে লুকিয়ে টেনিস বলের টুর্নামেন্ট খেলতে চলে যেতেন নটরাজন। সেই প্রসঙ্গ উঠতেই হাসতে শুরু করেন। ‘‘ছ’বছর বয়স থেকেই টেনিস বল দিয়ে খেলতাম। পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে টেনিস বলের টুর্নামেন্টে খেলতে যেতাম।

তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগে ভাল পারফর্ম করার পর এবার আইপিএল-এর চোখধাঁধানো মঞ্চকে পাখির চোখ করছেন নটরাজন।

তামিলনাড়ুর সালেমে জন্মগ্রহণ করলেও তার প্রতিবেশী জয়প্রকাশের আবদারে চেন্নাইয়ে যান ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। সেখানে স্থানীয় এক ক্লাবের হয়ে খেলার পর টিএনপিএল (তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগের) স্কাউটদের নজরে আসেন। ‘‘টিএনপিএল আমার জন্য খুব বড় একটা মঞ্চ ছিল। সেখানে অনেক কিছু শিখেছি। নিজের ডেলিভারি আরও কী করে ভয়ঙ্কর করা যায়। ইয়র্কার আরও ভাল কী করে করা যায় সব কিছুই টিএনপিএলে শিখেছি। আইপিএলের ডেথ ওভারে আরও বেশি করে ইয়র্কার দিতে চাই,’’ বলেন নটরাজন।

তবে নটরাজন অনেক অন্ধকার দিনও দেখেছেন। সালেমের স্থানীয় কিছু ক্লাবের হয়ে খেলার পর ২০১৪-১৫ মরসুমে রঞ্জিতে ডাক পান। বাংলার বিরুদ্ধে অভিষেক হয় তার। কিন্তু তারপরই বাদ পড়েন দল থেকে।

এ বিষয়ে নটরাজন বলেন, খুব খারাপ সময় গিয়েছিল। প্রত্যেক দিন কাঁদতাম। ভাবতাম খেলতে পারব তো। টিএনপিএলে ভাল খেলার পর এ বার রঞ্জি খেললাম। নিশ্চয়ই ভাল খেলেছি বলেই আইপিএলে সুযোগ পেলাম।

সন্দেহজনক বোলিং অ্যাকশনের অভিযোগও উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। কিন্তু প্রচুর পরিশ্রম করে সেই অ্যাকশন শুধরে নেন নটরাজন। মিচেল জনসনের ভক্তের ফিনিক্সের মতো উত্থানের পিছনে নাম উঠে আসছে তার প্রতিবেশী জয়প্রকাশের।

এ বিষয়ে নটরাজন বলেন, জয়প্রকাশ স্যার আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। সব সময় উৎসাহ দিয়েছেন। এ বার আইপিএলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের সঙ্গে ড্রেসিংরুম ভাগ করে আরও শিখতে পারব।

উৎসঃ আনন্দবাজার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!