বিপিএলে ছয় দলের সম্ভাবনা ও শক্তির যত খুটিনাটি
স্পোর্টস ডেস্কঃ ছয়ের মধ্যে ছয় নম্বর! আইকন ক্রিকেটারদের দলে ভেড়ানোর লটারি-ভাগ্যে ঢাকা ডিনামাইটসের এমনই পোড়া কপাল! অথচ এ নিয়ে মোটেও হাপিত্যেশ নেই তাদের। বরং ‘প্লেয়ার্স বাই চয়েজ’-এর পালা শেষে নিজেদের দল নিয়ে খালেদ মাহমুদ মোটা দাগে সন্তুষ্ট। সেটি এমন মাত্রার যে, ঢাকা ডিনামাইটস দলকে ‘অন্যতম সেরা এবং বোলিং বিবেচনায় সবচেয়ে সেরা’ বলতেও অকপট ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে থাকা জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) তৃতীয় আসরের খেলোয়াড় দলে টানার প্রাথমিক প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে সম্প্রতি । নির্ধারিত কোটার ২৫ ক্রিকেটার নিশ্চিত করেনি কোনো দল। তবে মোটের ওপর দল গোছানো সারা। এখন চলছে শক্তি-দুর্বলতা বিশ্লেষণ। তাতে ছয় ফ্র্যাঞ্চাইজির মধ্যে কাউকে আলোকবর্ষ এগিয়ে রাখার উপায় নেই। আবার এলেবেলে দল হিসেবে কারো সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়াও সম্ভব না। সম্ভাবনার নিক্তিতে প্রতিটি দলকেই রাখতে হচ্ছে গোনার ভেতর।
লটারি-ভাগ্যের কথা বললে রংপুর রাইডার্সকে এগিয়ে রাখতেই হবে। পরশু দিনের প্রথম লটারি-ভাগ্যেই ওঠে তাদের নাম। তাতে সৌম্য সরকারকে ডেকে নেয় চটজলদি। আবার আইকন ক্রিকেটারদের শেষ লটারিতেও রংপুরের ভাগ্য খুললে সাকিব আল হাসানকে ডেকে নিতে দেরি করেনি তারা। চ্যাম্পিয়ন এই অলরাউন্ডারের উপস্থিতি যেকোনো দলের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয় অনেকগুণ।
এমনিতেও অবশ্য রংপুর রাইডার্সের স্কোয়াড মন্দ হয়নি। সাকিব-সৌম্যের সঙ্গে ব্যাটিংয়ে হাল ধরার জন্য রয়েছেন বাংলাদেশের জার্সি গায়ে ওঠা মোহাম্মদ মিঠুন ও জহুরুল ইসলাম। সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের লেন্ডল সিমন্স, ড্যারেন সামি, শ্রীলঙ্কান থিসারা পেরেরা ও আফগানিস্তানের মোহাম্মদ নবী টি-টোয়েন্টির চাহিদা মেটানোর ব্যাটিং করতে পারেন। পেস বোলিংয়ে তাদের মূল ভরসা দুই বিদেশি- সামি এবং পাকিস্তানের ওয়াহাব রিয়াজ। স্পিনে সাকিবের সঙ্গী আরাফাত সানি, সাকলায়েন সজীব, সচিত্রা সেনানায়েকে। এই স্কোয়াড নিয়ে রংপুরের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখাটা তাই বাড়াবাড়ি নয়।
একই কথা বলা যায় ঢাকা ডিনামাইটস সম্পর্কেও। ব্যাটিংয়ে নাসির হোসেন, শামসুর রহমান, মোসাদ্দেক হোসেনরা থাকলেও তাদের মূল ভরসা বিদেশি। ‘কুমার সাঙ্গাকারা, রায়ান টেন ডেসকাট, নাসির জামশেদকে আমরা আগেই কনফার্ম করেছি। যে কারণে প্লেয়ার্স বাই চয়েজে বোলারদের দিকে নজর ছিল আমাদের’- বলেছেন মাহমুদ। আর সেই পরিকল্পনায় প্রথম সুযোগ পেয়েই দলে টেনে নেয় আলো ছড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পথচলা শুরু করা মুস্তাফিজুর রহমানকে। আরেক পেসার আবুল হাসানও ঢাকায়। সঙ্গে দুই পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ ইরফান ও সোহেল খান। স্পিনে লেগ স্পিনার ইয়াসির শাহর সঙ্গে অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার মোশাররফ হোসেন, নাবিল সামাদ। ইদানীং আবার তুখোড় অফ স্পিনার হয়ে ওঠা নাসিরও রয়েছেন। সব মিলিয়েই বোলিং শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করতে পারছেন ঢাকা ডিনামাইটসের খালেদ মাহমুদ, ‘আমাদের ব্যাটিং বেশ ভালো, আর বোলিং খুব ভালো। মুস্তাফিজ-মোশাররফ-আবুল হাসানদের সঙ্গে বিদেশি বোলারগুলো দেখুন। আমার মনে হয় ছয় ফ্র্যাঞ্চাইজির মধ্যে ঢাকার বোলিং সবচেয়ে শক্তিশালী। দল হিসেবেও আমরা অন্যতম সেরা। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো তো অবশ্যই।’
চিটাগাং ভাইকিংসের উপদেষ্টা আকরাম খান খুব খুশি তামিম ইকবালকে পাওয়ায়, ‘ওকে ধরেই আমরা দল তৈরি করেছি। তামিমকে না পেলে তাই দলের ভারসাম্য ঠিক থাকত না।’ আইকন ক্রিকেটারদের লটারিতে চার নম্বরে ওঠে চিটাগাংয়ের নাম। কিন্তু আগের তিন দল জাতীয় দলের এই ওপেনারকে না ডাকায় ঘরের ছেলেকে দলে টানার সুযোগ পায় চিটাগাং ভাইকিংস। সব মিলিয়ে প্লেয়ার্স বাই চয়েজের ফলাফলে অখুশি নন আকরাম, ‘লটারিতে আমাদের ভাগ্য খুব খারাপ ছিল না, আবার খুব ভালোও না। মাঝামাঝিতে থেকেই যেমন পরিকল্পনা নিয়ে গিয়েছিলাম, তেমন দলই গড়তে পেরেছি। এখন মাঠে সবাই পারফর্ম করতে পারলে হয়।’
পারফর্ম করার মতো ক্রিকেটার কিন্তু কম নেই চিটাগাং দলে। ব্যাটিংয়ে তামিমের সঙ্গে এনামুল হক, নাফিস ইকবাল, কামরান আকমল, উমর আকমল, চামারা কাপুগেদারারা রয়েছেন। ব্যাট হাতে বিস্ফোরণ ঘটানোর সামর্থ্য রয়েছে জিয়াউর রহমান, এলটন চিগুম্বুরা, জীবন মেন্ডিসদের। পেস বোলিংয়ে বাংলাদেশের তাসকিন আহমেদ ও পাকিস্তানের মোহাম্মদ আমের, স্পিনে সাঈদ আজমলের সঙ্গে এনামুল হক জুনিয়র, ইলিয়াস সানিরা মিলে বেশ শক্তিশালী চিটাগাং ভাইকিংস।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের সবচেয়ে বড় শক্তি নিঃসন্দেহে মাশরাফি বিন মর্তুজা। সেটি ক্রিকেটার হিসেবে যতটা, এর চেয়ে কম নয় অনুপ্রেরণাদায়ী হিসেবে। সতীর্থদের সেরা বের করে আনায় যে জুড়ি নেই জাতীয় দলের ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের!
মাশরাফির দলে ব্যাটিংয়ে আছেন লিটন দাশ, ইমরুল কায়েস, মারলন স্যামুয়েলস, লাহিরু থিরিমান্নে, আহমেদ শেহজাদ, শোয়েব মালিকরারা। ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে ম্যাচের রং পাল্টে দিতে পারেন আন্দ্রে রাসেল। পেস বোলিংয়ে মাশরাফির সঙ্গী নুয়ান কুলাসেকারা, ক্রিসমার সান্টোকি, আন্দ্রে রাসেল, ড্যারেন স্টিভেন্সরা। স্পিন-শক্তি বহুগুণ বেড়ে গেছে সুনীল নারিনকে দলে ভিড়িয়ে। সানজামুল ইসলাম, নাঈম ইসলাম জুনিয়ররাও রয়েছেন।
সিলেট সুপারস্টারস খুব খুশি আইকন ক্রিকেটার হিসেবে মুশফিকুর রহিমকে পেয়ে। বিদেশি খেলোয়াড় হিসেবে আছেন শহীদ আফ্রিদি। এ দুজনের সঙ্গে ব্যাটিংয়ে ভরসা দেওয়ার জন্য আছেন মমিনুল হক, জুনায়েদ সিদ্দিকী, রবি বোপারা, ব্র্যাড হজ, জসুয়া কব। বোলিংয়ে জাতীয় দলের দুই পেসার রুবেল হোসেন ও মোহাম্মদ শহীদের সঙ্গে পাকিস্তানের সোহেল তানভীর ও ইংল্যান্ডের ক্রিস জর্ডান। স্পিনে এর চেয়ে কম শক্তিশালী নয় তারা। আফ্রিদির সঙ্গে আছেন অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার আবদুর রাজ্জাক ও শ্রীলঙ্কার রহস্য-বোলার অজন্তা মেন্ডিস।
বরিশাল বুলসে রয়েছে বিশ্ব ক্রিকেটে টি-টোয়েন্টির সবচেয়ে বড় পোস্টার-বয় ক্রিস গেইল। তাঁর সঙ্গে ব্যাটিং বিভাগ সামলাবেন ব্রেন্ডন টেলর, সাব্বির রহমান, রনি তালুকদার, নাদিফ চৌধুরীরা। পেস বোলিংয়ে পাকিস্তানের অভিজ্ঞ মোহাম্মদ সামি ও বাংলাদেশের আল-আমিন হোসেন। পেসের চেয়ে বরিশালের স্পিন বিভাগ শক্তিশালী। তাইজুল ইসলাম, সোহাগ গাজী, সেকুগে প্রসন্ন, ইমাদ ওয়াসিমরা রয়েছেন যে!
প্লেয়ার্স বাই চয়েজের লটারি-ভাগ্যে তাই রংপুর রাইডার্স বিজয়ী হলে কী হবে, স্কোয়াডের শক্তি-দুর্বলতা বিবেচনায় ছয় ফ্র্যাঞ্চাইজির মধ্যে কাউকেই যে এগিয়ে-পিছিয়ে রাখা যাচ্ছে না।
বিপিএলের আয়োজন নিয়ে এরকম আরও কিছু ফিচারঃ-
এক নজরে দেখে নিন বিপিএলে কে কোন দলের কোচ হচ্ছেন
বিপিএল এর আয়োজন যত টাকার ঝনঝনানি
এবার বিপিএলে সবচেয়ে শক্তিশালী বোলিং নিয়ে আসছে ঢাকা