নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে ৩ হাজার সদস্যর দুই কোটি টাকা উধাও “বনি’

 

সনৎ কুমার রায়, নীলফামারী প্রতিনিধি  । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় বনি ইনভেষ্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের খপ্পরে পড়ে  প্রায় ৩ হাজার নারী ও পুরুষ ২ কোটি টাকা খুইয়েছেন। এ নিয়ে গোটা উপজেলায় তোলপাড় চলছে। গত ২৭ এপ্রিল ওই কোম্পানির নিয়োগকৃত পুটিমারী ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থানীয় এক ফিল্ড অফিসারকে আটক করে  ভেড়ভেড়ি ঘোনপাড়া সমিতির সদস্যরা ।পরে সদস্যদের টাকা ফেরৎ দিবে মর্মে মুচলেকা নিয়ে তাঁকে  ছেড়ে দেন পুটিমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সায়েম লিটন। ছাড়া পেয়ে ওই দিন রাতেই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান ওই ফিল্ট অফিসার।
ওই কোম্পানির সদস্যদের কাছ থেকে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ থানার পুর্বপাশ্বে মকবুল হোসেন নামের এক ব্যাক্তির কাছে বাড়ি ভাড়া নিয়ে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত বনি ইনভেষ্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড কিশোরগঞ্জ উপজেলা শাখা সাইনবোর্ড লাগিয়ে অফিসের কার্যক্রম শুরু করে। গর্ভঃ রেজি নং-সি ৬৯৩৯০(১৯০১)/০৭। কোম্পানির ম্যানেজার ও পুটিমারী ইউনিয়নের কাচারীপাড়া গ্রামের নারিয়া মামুদের ছেলে আমিনুর রহমান প্রতিটি ইউনিয়নে সমিতি গঠনের লক্ষ্যে  ফিল্ড সুপারভাইজার নিয়োগ দিয়ে ৯ টি ইউনিয়নে ৪৫ সমিতি গঠন করে। প্রতিটি সমিতির সদস্য সংখ্যা ৩০ থেকে ১০০ জন করে। ম্যানেজার ও ফিল্ড সুপারভাইজারগন স্থানীয় বাসিন্দা  হওয়ায় গ্রামের সহজ সরল নারী ও পুরুষেরা তাদের কথা অনুযায়ী ও  বিশ্বাস করে জমানো টাকার দ্বিগুন ও মোটা অংকের লোন পাওয়ার আশায় সমিতিতে অন্তরভুক্ত হয়ে প্রতি সপ্তাহে ১০০ টাকা থেকে ১০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত  টাকা জমা করে আসছিল। সদস্যরা জানায়, কোম্পানির শর্ত অনুযায়ী ৮ বছরের আগে কেউ টাকা তুলতে বা লোন নিতে পারবেনা। প্রতিজন সদস্য  ১৫/৮/২০০৮ সাল থেকে টাকা জমা শুরু করে।  কোম্পানির হিসাব অনুযায়ী ১৫/৭/২০১৬ সালে জমাকৃত টাকা উত্তোলন ও মোটা অংকের লোন পাওয়ার কথা ছিল সদস্যদের । কিন্তু নির্ধারিত সময়ের ৮ মাস  পেড়িয়ে গেলেও সদস্যগন তাদের জমানো টাকার দ্বিগুন কিংবা মোটা অংকের টাকা  লোন না পাওয়ায় কোম্পানির ম্যানেজার আমিনুর  ইসলামকে চাপ দিতে থাকে।  আমিনুল সদস্যদের টাকা দিব, দিচ্ছি বলে সময় ক্ষেপন করে রাতারাতি অফিস গুটিয়ে পালিয়ে যায়। সমিতির সদস্যদের পাশ বইয়ের জমানো টাকার হিসাব অনুযায়ী প্রতি সদস্যর ১০ হাজার টাকা থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত জমানো টাকার পরিমান প্রায় ২ কোটি টাকা।
নিতাই ইউনিয়নের পানিয়াল পুকুর গ্রামের মোশাররফ হোসেনের ছেলে সার ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন সদস্য নম্বর ১৮৭ বলেন, আমার গ্রামের মৃত মতিয়ার মুন্সির ছেলে মাজেদুল ইসলাম ওই কোম্পানির ফিল্ড অফিসার। তার কথামতো আমি প্রতিমাসে ৮০০ টাকা করে জমা রেখেছিলাম। গত ৮ বছরে আমার জমানো টাকার পরিমান দাড়ায় ৭৬ হাজার ৮০০ টাকা। আমি কত কষ্ঠ করে খেয়ে না খেয়ে প্রতিমাসে টাকা জমা দিয়েছি। কিন্তু হঠাৎ জানতে পারলাম তারা পালিয়ে গেছে। আমার সমিতিতে মোট সদস্য ১০০জন। আমাদের মোট টাকার পরিমান ১৬ লক্ষ টাকা।
পুটিমারী ইউনিয়নের  ঘোনপাড়া সমিতির দলনেত্রী  লাভলী বেগম বলেন, আমার সমিতির  ২৭ জন সদস্য গত ৮ বছরে ওই কোম্পানিতে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা জমা দিয়েছে। নির্ধারিত সময়ের ৮ মাস অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পরও টাকা উত্তোলন করতে না পেরে আমরা সবাই মিলে ফিল্ড অফিসার মাজেদুলকে আটক করে নিয়ে আসি । কিন্তু তার বউ রোকসানা বেগম চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করে আমাদের টাকা ফেরত দিবে মর্মে ষ্টামে মুচলেখা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে যান। কিন্ত ওই দিন রাতেই মাজেদুল স্বপরিবারে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে। এরকম সদস্য মফুজা বেগম, আব্দুল করিম, মাছুদা বেগম, গোলাপজন সহ সকলেই জানান, আমরা অনেক কষ্ট করে খেয়ে না খেয়ে মাজেদুলের কথা শুনে টাকা জমা দিয়েছি।
পুটিমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সায়েম লিটন বলেন , আমার ইউনিয়নের সমিতির সদস্যরা মাজেদুলকে আটক করে আমার কাছে নিয়ে এসেছিল। সে গরীব সদস্যদের জমানো  টাকা ফেরত  দিবে মর্মে মুচলেকা দেয়ায় আমি তাঁকে ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু ওনদিন রাতেই জানতে পাই সে স্বপরিবারে পালিয়ে গেছে।
কোম্পানির ম্যানেজার আমিনুর ইসলাম ও ফিল্ড অফিসার মাজেদুলের সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বজলুর রশিদ বলেন, এখনো কেহ আমার কাছে কোন অভিযোগ নিয়ে আসেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!