প্রতিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্রের মদদে ৫৭ ধারার অপপ্রয়োগ , ক্ষুব্ধ সাংবাদিক সমাজ
স্টাফ রিপোর্টার । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় করা মামলায় জামিনে মুক্তি পেয়েছেন খুলনায় আটক সাংবাদিক আবদুল লতিফ মোড়ল। আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খুলনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২-এর বিচারক নুসরাত জাবিন ১০ হাজার টাকার বন্ড নিয়ে তাঁকে জামিন দেন। উল্লেখ্য মামলা হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মাথায় গত সোমবার রাত আড়াইটার দিকে ডুমুরিয়া উপজেলা সদরের বাসা থেকে আবদুল লতিফকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি খুলনার স্থানীয় দৈনিক প্রবাহের ডুমুরিয়া উপজেলা প্রতিনিধি। ডুমুরিয়া থানার পুলিশ বলেন, ওই দিন রাত নয়টার দিকে সুব্রত ফৌজদার নামের একজন সাংবাদিক লতিফের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় মামলাটি করেন। উল্লেখ্য মামলার বাদী সুব্রত ফৌজদার ডুমুরিয়াতে প্রতিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দের ঘনিষ্ট হিসেবে সর্বমহলে বিশেষভাবে পরিচিত। তবে লতিফের নামে মামলা ও তাকে গ্রেফতার নিয়ে প্রতিমন্ত্রী দায় এডিয়ে বিভিন্ন গনমাধ্যমে যাই বলুকনা কেন ঘটনার নেপথ্যে উঠে আসছে সরাসরি প্রতিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্রের নাম ।
জানাগেছে গত ২৯ জুলাই মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ তাঁর নিজ এলাকা ডুমুরিয়ায় কয়েকজন দুস্থ ব্যক্তির মাঝে সরকারি অর্থায়নে বেশকিছু হাঁস,মুরগি ও ছাগল বিতরণ করেন। ঐদিন রাতেই জুলফিকার আলী নামের এক ব্যক্তির পাওয়া ছাগলটি মারা যায় বলে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি প্রকাশের আগে সাংবাদিকরা সাংবাদিকতার নিয়ম কানন মেনে ছাগল বিতরন ও মারা যাওয়া বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্রের একটি বক্তব্য গ্রহন করেন এবং তাও প্রকাশিত সংবাদের মধ্যেই তুলে ধরেন । গোটা দেশে নিউজটি ব্যাপক প্রচার পায় । কিন্ত তারপরও এই খবরটি ফেসবুকে শেয়ার করার অভিযোগে সাংবাদিক লতিফের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় মামলা করেন সুব্রত। তা আবার যে সকল সংবাদমাধ্যম খবরটি প্রচার করল তাদের বাদ দিয়ে আসামী করা হল নিউজটি ফেসবুকে শেয়ার কাদরীকে । ঘটনাটি কি হাস্যকর -এ জেন মাছ না পেয়ে ছিপে কামড়ের মত অবস্থা !!
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে,প্রতিমন্ত্রীর বিতরণ করা ছাগল মারা যাওয়া সংক্রান্ত সংবাদ ফেসবুকে শেয়ার করেছেন লতিফ। এতে প্রতিমন্ত্রীর সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে। খবরটিতে ছাগল বিতরণ বা মৃত ছাগলের কোনো ছবি নেই। খবরে প্রতিমন্ত্রীর একটি পাসপোর্ট আকারের ছবি যুক্ত করা হয়েছে। এটা দেখে তাঁর (সুব্রত) মনে হয়েছে, প্রতিমন্ত্রীকে হেয়প্রতিপন্ন করতেই খবরটি ফেসবুকে শেয়ার করা হয়েছে। অবশ্য মামলার বাদী প্রকাশিত সংবাদে প্রতিমন্ত্রীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে মনে করলেও বিবিসি ও প্রথম আলোসহ একাধিক সংবাদমাধ্যমে প্রতিমন্ত্রী স্বয়ং জানিয়েছন ,” তিনি মনে করেন না যে তার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে”। তাহলে আগবাডিয়ে সুব্রত ফৌজদারের মামলা করাটা “মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশী” এমন হয়ে গেলনা ? সুব্রত মিডিয়ার সামনে আরও বলেছেন সাংবাদিক লতিফ প্রায়শই আওয়ামীলীগের বিপক্ষে নিউজ করেন । তাহলে কি তিনি এই মামলার মাধ্যমে পূর্বের রাগ শোধালেন? এখন প্রশ্ন থানা পুলিশ সুব্রতর অভিযোগকে এত গুরুত্বের সাথে আমলে নিলেন কেন ? এই ঘটনার পিছনে কি বৃহৎ কোন শক্তির মদদ ছিল ?
যদিও ৫৭ ধারায় সাংবাদিক লতিফের নামে মামলা ও তৎপরবর্তী বিশাল পুলিশবাহিনী নিয়ে তাকে আটক করার ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা নিয়ে প্রতিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে নিজের সম্পৃক্ততা ও দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন। তবে স্থানীয় সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ মনে করেন প্রতিমন্ত্রী কোন অবস্থাতেই এই ঘটনার দায় এড়াতে পারেননা । ডুমুরিয়া প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক সমকালের ডুমুরিয়া প্রতিনিধি এম এ এরশাদ আজ জানিয়েছন,মামলা করা থেকে সাংবাদিক লতিফকে আটক করা পর্যন্ত সবকিছুই হয়েছে প্রতিমন্ত্রীর সরাসরি নির্দেশে ও মদদে । এরশাদ বলেন ডুমুরিয়ায় থানায় এই মামলা দেওয়া ও লতিফকে আটকের সময় বাদী সুব্রত ফৌজদারের সাথে প্রতিমন্ত্রীর ঘনিষ্ট জেলা পরিষদ সদস্য সরদার আবু সালেহ, সদর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি খান নজরুল ইসলাম, সাধারন সম্পাদক আসফার হোসেন ও মন্ত্রীর দেহরক্ষিখ্যাত ইউপি সদস্য সিরাজ সরদার উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিক নেতা এরশাদ প্রশ্ন করেন সাংবাদিক লতিফ কি ভয়ানক অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, তাকে ধরতে বিশাল পুলিশ বাহিনী যেতে হবে কেন ?
এদিকে ৫৭ ধারা বাতিলের দাবী শুরু থেকেই। বর্তমান সরকারও এই আইনটির ব্যাপারে যথেষ্ট নমনীয় । আইমন্ত্রী তো বিভিন্ন সভা সমাবেশে ও সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন আইনটি সংশোধনের ব্যাপারে সরকার চিন্তাভাবনা করছে । এছাডাও সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত এই আইনটি প্রয়োগে না করতেও অনুরোধ করেছেন সরকারের দায়িত্বশীল কর্তা ব্যাক্তিরা। কিন্ত তারপরও হঠাৎ করে খুলনায় সরকারের একজন দায়িত্বশীল প্রতিমন্ত্রীর ঘনিষ্টজনের অতিউৎসাহি হয়ে এমন মামলা দেয়া এবং সল্পসময়ের মধ্যেই বিশাল পুলিশবাহিনী নিয়ে গভীররাতে সাংবাদিকের বাডীতে হানা দিয়ে তাকে গ্রেফতার করাটা কিসের আলামত ? প্রতিমন্ত্রী কি কোন অবস্থাতেই এই ঘটনার দায় এড়াতে পারেন ? আওয়ামীলীগ তথা বর্তমান সরকার যে এই ঘটনার কোন দায় নিবে না সেটা দলটির সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের প্রতিক্রিয়ায় স্পষ্ট । আজ প্রতিদিনকার মত রুটিন মাফিক রাজধানীর আগারগাঁও এ মেট্রো রেলের কাজের অগ্রগতি দেখতে গিয়ে তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে খুলনায় ৫৭ ধারায় সাংবাদিককে আটক করার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ” তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য কিছু ঘটনা ঘটল আর সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হলো, এটি ৫৭ ধারার অপপ্রয়োগ।
- কাগজ টুয়েন্টিফোর বিডি ডটকম এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।