বন্যায় সরকারি সহায়তার তৎপরতা চোখে পড়ার মতো নয়
বন্যায় সরকারি সহায়তার তৎপরতা চোখে পড়ার মতো নয়
-মাহবুব এইচ শাহীন
দেশের বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ। দরকার প্রচুর পরিমাণ ত্রান সহায়তা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় তথ্য অনুযায়ী এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৩ লাখ মানুষ! মন্ত্রণালয়ের সচিবের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত প্রায় ৭ লাখ ৫২ হাজার পরিবার আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মারা গেছে ৩৭ জন। এখন পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১ হাজার ৫৯৯টি। এগুলোতে আশ্রয় নেওয়া মানুষের সংখ্যা ৪ লাখ ১১ হাজার।
এ বছরের বন্যায় সরকারি সহায়তার তৎপরতা চোখে পড়ার মতো নয়। সম্পদশালী বিনা প্রতিদ্বদ্বিতায় নির্বাচিত নেতাদের বানভাসি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এটাই সুযোগ।
কুড়িগ্রামে চলমান বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও এখনও অনেক বাড়িঘর থেকে পানি নামেনি। ফলে দুর্ভোগ থেকে সহসাই রেহাই মিলছে না কুড়িগ্রামের ৬টি উপজেলার ৪২টি ইউনিয়নের বন্যাদুর্গতদের। পরিবারের উপার্জনক্ষম লোকজন কর্মহীন হয়ে রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে তিনবেলা খাবার জোগাড় করতে তাদের পক্ষে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। বসতবাড়ির চারপাশে পানি জমে অধিকাংশ সবজি খেত পানিতে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় শিশুদের পুষ্টিকর খাদ্য জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে আক্রান্ত পরিবারগুলো। ফলে পুষ্টিকর খাবার তো দূরের কথা, সন্তানদের জন্য তিনবেলা খাবার জোগাড় করতেই হিমশিম খাচ্ছেন তারা। সরকারিভাবে সাধারনত শিশুদের জন্য আলাদা করে কোনও খাদ্যদ্রব্য বিতরণ করা হয়না।
ইতিমধ্যে আমরা ফেসবুক লাইভে চলচ্চিত্র নায়ক ওমর সানিকে দেখলাম, সিনিয়র শিল্পি থেকে শুরু করে সকল শিল্পিদেরকে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কে বানভাসি মানুষের পাশে দাড়াঁনোর আহবান জানাতে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে “মানবতা ও ধর্ম” এই দুই বিষয়ের মধ্যে কোনটাকে প্রাধান্য দিয়ে অর্থ ব্যয় করবে মানুষ? এ নিয়ে শুরু হয়েছে বিতণ্ডা।
অভিনেত্রী সোহানা সাবা তার নিজ ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কোরবানি ও বন্যার্তদের সহায়তা বিষয়ক একটি স্ট্যাটাসে লিখেছেন- ‘কোরবানি ঈদ সবার জন্যেই খুব আনন্দের। আমারও। নিজের অর্জিত টাকার কিছু অংশ দিয়ে গরু, খাসি, উট কোরবানি দিয়ে গরিবদের মাঝে বিলিয়ে দেই সেই মাংস। সত্যিই আনন্দের এই বণ্টনে শরিক হতে পারাটা। কিন্তু এবার ভাবুন তো- বন্যা কবলিত মানুষদের কি পরিমাণ সহায়তা প্রয়োজন? আমরা কি এক বেলার মাংসের স্বাদ না দিয়ে বন্যার ত্রাণ নিয়ে তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারি না? একবার ভেবে দেখুন তো’।
অভিনেতা আদনান ফারুক হিল্লোল তার নিজ ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন- ‘এবার সকলের কোরবানির টাকা ত্রাণ তহবিলে প্রদান বাধ্যতামূলক করা বড় জরুরী মনে হচ্ছে’।
অভিনেত্রী শামীমা তুষ্টি ফেসবুকে লিখেছেন- ‘সামনে কোরবানির ঈদ। কোরবানি আপনারা অনেকেই দেবেন। কোরবানিও ত্যাগ, এটাও। আচ্ছা, কোরবানি না দিয়ে সে টাকাটা দুর্গতদের জন্য ব্যবহার করা যায় না? এবং এই ত্যাগ যার দেখার কথা, তিনি নিশ্চয় সেটা দেখবেন ও আমলে নেবেন। আর, যারা কোরবানি দেবেনই, তারাও অন্যান্য খরচ বাঁচিয়ে আপনার তরফ থেকে সহায়তার হাত প্রশস্ত রাখুন। মানুষের পাশে থাকুন। এদিকে বন্যার ভয়াবহ তাণ্ডব। সম্ভবত স্মরণকালের সবচেয়ে নির্মম বন্যা আমরা দেখতে যাচ্ছি। একবার তাদের কথা ভাবুন, যারা সরাসরি আক্রান্ত হবেন। আমরা যখন ঈদের আনন্দে, তখন অসংখ্য মানুষ থাকবে পানিবন্দি, দীর্ঘ অনাহারে’।
কিন্তু ইসলামি মতে, কোরবানি ইসলামের একটি ওয়াজিব বিধান। যার ওপর কোরবানি ওয়াজিব তাকে অবশ্যই কোরবানি দিতে হবে। ওয়াজিব বিধান বাদ দিয়ে সেই টাকা বন্যাগ্রস্ত মানুষ বা কোনো অভাবী-অসহায় কে দান করলে এটি ইসলামি হুকুম পরিপন্থী হবে। ওয়াজিব বিধান আদায় না করে টাকাটা অভাবীকে দিয়ে দেন, তবে সেই দানের জন্য তিনি সওয়াব পাবেন কিন্তু কোরবানি করা বা ওয়াজিব বিধান পালন করা হবে না।
এই ক্ষেত্রে আপনার করণীয় হতে পারে- সর্বনিম্ন পরিমাণ অর্থ খরচ করে কোরবানির ওয়াজিব বিধান পালন করুন আর আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী বন্যাগ্রস্ত বা অভাবী মানুষকে সহযোগিতা করুন।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আপনি দুটি বা তিনটি গরু কোরবানি করতেন এবার একটি গরু কোরবানি করেন এবং বাকি টাকা দান করে দেন। আর যদি আপনার সামর্থ্য কম থাকে তবে কোরবানির ওয়াজিব বিধানটি সর্বনিম্ন টাকায় আদায় করে বাকি টাকাটা বন্যাগ্রস্ত মানুষকে দান করে দেন। আরো একটি কাজ করতে পারেন- আমরা যারা কোরবানি দেই সবাই তো কোরবানির মাংস দান করি। এবার আমরা কোরবানির মাংস বন্যাগ্রস্ত মানুষের মাঝে বেশি পরিমাণে দান করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি।
লেখক-মাহবুব এইচ শাহীন/প্রকাশক ও সম্পাদক/কাগজ২৪