রাখাইনের আকিয়াব ও ছিটুয়ে সেনা নির্যাতন শুরু। সীমান্তে ফের রোহিঙ্গা ঢল।
বিশেষ প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
মিয়ানমারের বাংলাদেশ সীমান্তে নতুন করে রোহিঙ্গাদের ঢল নেমেছে। মাঝে কয়েকদিন রোহিঙ্গা স্রোত কমলেও গত দু’দিনে হঠাৎ করেই বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের প্রবেশ বেড়েছে। নতুন করে রাখাইনের রাজধানী আকিয়াব ও ছিটুয়ে অঞ্চলে শুক্রবার থেকে তল্লাশির নামে রোহিঙ্গা নির্যাতন শুরু হওয়ায় ওই সব অঞ্চলের রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের উদ্দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। তাদের কেউ কেউ শনিবার রাতেই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। আবার কেউ কেউ সীমান্তে সুযোগের অপেক্ষা করছেন। টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্ত এবং এখানকার নোম্যান্স ল্যান্ডেও অবস্থান নিয়েছেন অনেকে। আন্তর্জাতিক নানা চাপ ও নিন্দা উপেক্ষা করে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া বা তাদের নির্যাতন বন্ধ করার পরিবর্তে নতুন এলাকায় নির্যাতন শুরু করেছে। সীমান্ত দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া ভেদ করে শনিবার ও রোববার রাতে ২২টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছেন। সীমান্ত পাড়ি দেয়ার জন্য নতুন করে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা পরিবার মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চলে জড়ো হয়েছে। রাখাইনের রাজধানী আকিয়াব ও ছিটুয়ে অঞ্চলের আশপাশের গ্রামগুলো এতদিন সেনাবাহিনীর নির্যাতনের বাইরে ছিল। কিন্তু নতুন করে সেখানে তল্লাশির নামে অভিযান শুরু করায় ওই অঞ্চলের লাখ লাখ রোহিঙ্গার মাঝে আতঙ্ক ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে আকিয়াবের আশপাশের এলাকার গ্রামগুলোর রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশের দিকে আসা শুরু করেছেন। সর্বশেষ আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এর আগে রাখাইন রাজ্যের মংডু, রাচিদং, বুচিদংসহ বিভিন্ন গ্রামে ২৫ আগস্ট সেনা অভিযানের নামে রোহিঙ্গা নিধন শুরু হয়। রাখাইন রাজ্যের ২১৪টি গ্রাম নিশ্চিহ্ন করা হয়। প্রাণ বাঁচাতে তাই রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ দলে দলে ২২টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। শেষের দিকে এসে রোহিঙ্গা ঢল কিছুটা কমলেও এক মাস না যেতেই আবারও নতুন এলাকা আক্রান্ত হওয়ায় সীমান্তে বাংলাদেশমুখীদের সংখ্যা হঠাৎ করেই বেড়েছে।
ইউএনএইচসিআরের হিসাব অনুযায়ী, এরই মধ্যে সাড়ে চার লাখ নির্যাতিত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। যাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে উখিয়া ও টেকনাফের অন্তত ১০টি নতুন-পুরনো ক্যাম্পে। সেনাবাহিনী এরই মধ্যে তাদের জন্য ১৪ হাজার শেড নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। যেখানে ঠাঁই পাবে ৮৪ হাজার পরিবার। খাদ্যাভাব সরকারি ও বেসরকারিভাবে পূরণ করতে প্রতিদিনই তাদের জন্য দেয়া হচ্ছে প্রচুর ত্রাণসামগ্রী। ত্রাণের সুষম বণ্টনের জন্যও সরকার সেনাবাহিনীকে মাঠে নামিয়েছে। রোববার থেকে ত্রাণ বিতরণ ও শেড নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু করেছে সেনাবাহিনী। রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনও শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় আশ্রিত রোহিঙ্গাদের একটি শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসার প্রস্তুতি যখন শেষ পর্যায়ে ঠিক তখনই আবার মিয়ানমারে নতুন এলাকায় সেনাবাহিনীর হামলা, তল্লাশির নামে নির্যাতন শুরু হয়েছে। এর জের ধরে নতুন করে রোহিঙ্গা ঢল নামতে শুরু করায় বাংলাদেশে নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কয়েকজন জানান, ওপারে মিয়ানমার সেনাবাহিনী কাঁটাতারের বেড়া আরও মজবুত করছে। চলাচলের পথে পুঁতছে মাইন। কাঁটাতারের বেড়ার সঙ্গে দিচ্ছে বৈদ্যুতিক সংযোগ। রোহিঙ্গারা যাতে পালাতে না পারে এবং পালানোর সময় মারা পড়ে সে জন্যই মিয়ানমার সেনাবাহিনী এমন মরণফাঁদ তৈরি করছে।
টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি জানান, রাখাইনে সহিংসতার এক মাস পেরিয়ে গেলেও রোহিঙ্গাদের আসা থামছে না। আগের মতো দলে দলে না এলেও প্রতি রাতেই নাফ নদী পেরিয়ে আসছেন শত শত রোহিঙ্গা। সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গারা আগের মতো স্রোতের মতো না এলেও দিন-রাতে প্রায় কয়েক হাজার রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা এপারে আশ্রয় নিতে পালিয়ে আসছেন। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানান, রাখাইন এখনও অশান্ত, উত্তপ্ত ও জনমানব শূন্য, সেখানে শুধু ধ্বংসস্তূপ আর পোড়া গন্ধ।। তাই মৃত্যু ভয়ে তারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছেন।