এবারের সেরা করদাতারা
অনলাইন ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত ১০ বছর ধরে চিকিৎসকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কর দিয়ে সেরা করদাতা হন। এবার তাঁকে টপকে চিকিৎসকদের মধ্যে সেরা করদাতা হয়েছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারির অধ্যাপক ডা. এ কে এম ফজলুল হক।
অভিনেতা-অভিনেত্রী ক্যাটাগরিতে গতবার সেরা করদাতা হয়েছিলেন সুবর্ণা মুস্তাফা, এবার তিনি জায়গা হারিয়েছেন প্রয়াত সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনের কাছে। কণ্ঠশিল্পীদের মধ্যে এবার সেরা করদাতা নির্বাচিত হয়েছেন রুনা লায়লা। গতবার ছিলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। গতবারের চেয়ে বেশি আয়কর দিয়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে পেছনে ফেলেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।
বিভিন্ন পেশাজীবীদের মধ্য থেকে সেরা করদাতাদের চিহ্নিত করে গত সোমবার গেজেট জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সেরা করদাতাদের ট্যাক্সকার্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। পেশার বাইরে বিশেষ শ্রেণি ও বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সেরা করদাতা প্রতিষ্ঠানও জায়গা পেয়েছে তাতে। করদাতাদের উৎসাহিত করতে এভাবে সুনির্দিষ্টভাবে সেরা করদাতা চিহ্নিত করে তাঁদের ট্যাক্সকার্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। ব্যক্তি পর্যায়ে ৭৬ জন, কম্পানি পর্যায়ে ৫৫টি প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য ১০টিসহ মোট ১৪১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ট্যাক্সকার্ড দেবে এনবিআর।
প্রতিষ্ঠানটির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘রাজস্ববান্ধব সংস্কৃতি বিকাশের অংশ হিসেবে এনবিআর কাজ করছে। আমরা সব সময়ই প্রকৃত করদাতাদের উৎসাহিত করছি। বিভিন্ন পেশাজীবী, বিশেষ শ্রেণির ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান যাতে কর দিতে আরো আগ্রহী হয়, সে জন্যই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা আশাবাদী, এর ফলে করদাতারা রাষ্ট্রকে সঠিক পরিমাণে কর দেবে। ’
এনবিআরের জারি করা গেজেট অনুযায়ী, চিকিৎসকদের মধ্যে এবার সেরা করদাতা হয়েছেন ডা. এ কে এম ফজলুল হক। পরের স্থানগুলোতে রয়েছেন অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ডা. জাহাঙ্গীর কবির, ধানমণ্ডির ডা. মো. আব্দুল মবিন খান এবং ইউনাইটেড হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. এন এ এম মোমেনুজ্জামান।
অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত গতকাল বলেন, ‘সেরা করদাতা নির্বাচিত হলে খুবই ভালো লাগে, তৃপ্তি আসে। এতে ভবিষ্যতেও সততার সঙ্গে কর দেওয়ার আগ্রহ বাড়ে। আমি ১০ বছর ধরে সেরা করদাতা নির্বাচিত হয়ে আসছি। এবার আপনাদের কাছে জানলাম যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ করদাতা হয়েছি। যিনি সেরা হয়েছেন, তাঁর সঙ্গে আমার দেওয়া করের পার্থক্য কত, তা আমি জানি না। আত্মার শুদ্ধি ও অর্থের শুদ্ধির জন্য আমি সততার সঙ্গে আয় অনুযায়ী কর দিয়ে যাব। ’
আইনজীবীদের মধ্যে গতবারের মতো এবারও সেরা করদাতা সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এই শ্রেণিতে অন্য সেরা করদাতারা হলেন অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম, আহসানুল করিম, কাজী মোহাম্মদ তানজীবুল আলম ও মুহাম্মদ কবির উজ্জামান ইয়াকুব।
খেলোয়াড় ক্যাটাগরিতে তিনজন ক্রিকেটার সেরা করদাতা নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে সেরা করদাতা হয়েছেন তামিম ইকবাল খান। পরের অবস্থানে রয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা এবং বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।
গত বছর খেলোয়াড় ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ করদাতা নির্বাচিত হয়েছিলেন ক্রিকেটার তামিম ইকবাল। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন সাকিব আল হাসান। তিনি বাংলাদেশ দলে খেলা ছাড়াও আইপিএল, সিপিএল ও বিগব্যাস খেলে থাকেন। আর তৃতীয় অবস্থানে ছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা।
সাংবাদিকদের মধ্যে সেরা করদাতা নির্বাচিত হয়েছেন ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম। পরের অবস্থানে রয়েছেন চট্টগ্রামের সাংবাদিক মোহাম্মদ আবদুল মালেক, দৈনিক প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, চ্যানেল আইয়ের বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ এবং দৈনিক সমকালের সম্পাদক গোলাম সারওয়ার।
অভিনেতা-অভিনেত্রী ক্যাটাগরিতে এ বছর সেরা করদাতা হয়েছেন অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন। দ্বিতীয় সেরা করদাতা হয়েছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা অভিনেতা শাকিব খান রানা। পরের অবস্থানে রয়েছেন অভিনেতা জাহিদ হাসান। গত বছর এই ক্যাটাগরিতে সেরা করদাতা হন সুবর্ণা মুস্তাফা, আফজাল হোসেন ও পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়।
গায়ক-গায়িকাদের মধ্যে এবার সেরা করদাতা হয়েছেন উপমহাদেশের বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা। পরের অবস্থানে রয়েছেন এস ডি রুবেল ও রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। গতবার রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, সুবীর নন্দী ও শাহিন সামাদ সেরা করদাতা হন।
সিনিয়র সিটিজেন : বিশেষ শ্রেণি হিসেবে সিনিয়র সিটিজেনদের মধ্য থেকে সেরা করদাতা হয়েছেন স্কয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান স্যামুয়েল এস চৌধুরী, নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী আলী হোসাইন আকবর আলী, স্যামসন এইচ চৌধুরীর স্ত্রী অনিতা চৌধুরী ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এম আনিস-উদ-দৌল্লা।
প্রতিবন্ধী : প্রতিবন্ধী ক্যাটাগরিতে সেরা করদাতা হয়েছেন আকরাম মাহমুদ, ডা. মো. মামুনুর রশিদ ও ডা. মো. জহিরুল ইসলাম।
মহিলা : মহিলা ক্যাটাগরিতে সেরা করদাতা হয়েছেন লায়লা হোসেন, হোসনে আরা হোসেন, বুলা চৌধুরী, নিশাত ফারজানা চৌধুরী ও পারভীন হাসান।
তরুণ করদাতা : ৪০ বছরের নিচের করদাতাদের তরুণ করদাতা হিসেবে চিহ্নিত করেছে এনবিআর। তাদের মধ্যে সেরা করদাতা হয়েছেন রাজধানীর শাহজাদপুরের কনফিডেন্স সেন্টারের নাফিস শিকদার। এ ছাড়া রূপগঞ্জের রূপসী এলাকার গাজী গোলাম মূর্তজা, ঢাকার মৌলভীবাজারের মো. শাহনেওয়াজ, সিলেটের এ কে এম আতাউল করিম এবং চট্টগ্রামের সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর।
ব্যবসায়ী : সেরা করদাতা হয়েছেন জর্দা ব্যবসায়ী হাজি মো. কাউছ মিয়া। পরের অবস্থানে রয়েছেন নরসিংদীর ব্যবসায়ী আব্দুল কাদির মোল্লা, গুলশানের খন্দকার বদরুল আহসান, মতিঝিলের কামরুল আশরাফ খান এবং চট্টগ্রামের মোহাম্মদ কামাল।
বেতনভুক : চাকরিজীবীদের মধ্যে সেরা করদাতা হয়েছেন ঢাকা সেনানিবাসের মোহাম্মদ ইউসুফ, রুবাইয়াত ফারজানা হোসেন, খাজা তাজমহল, উত্তরার এম এ হায়দার হোসেন এবং গুলশানের আব্দুল মুক্তাদির।
প্রকৌশলী : চট্টগ্রামের আবুল খায়ের স্টিল মিলসের শ্যামল কান্তি ঘোষ, ঢাকার তেজগাঁওয়ের মো. কবির আহমেদ ভূইয়া ও চট্টগ্রামের চট্টেশ্বরী সার্কেলের এস এম আবু সুফিয়ান।
স্থপতি : ঢাকার মোহাম্মদপুরের মো. রফিক আজম, মনিপুরীপাড়ার মো. ইকবাল হাবিব এবং গুলশানের এনামুল করিম নির্ঝর।
অ্যাকাউন্ট্যান্ট : বনানীর মো. মোক্তার হোসেন, মো. জয়নুল আবেদীন এবং লালবাগের মনজুর আলম।
নতুন করদাতা : গুলশানের সিলভানা সিনহা, তানিয়া কাদের সিনহা, দক্ষিণ শাহজাহানপুরের নাবিলা মির্জা, চট্টগ্রামের সৈয়দ মোহাম্মদ তাহমির, মৌলভীবাজারের ছয়ফুল মিয়া, সিলেটের মো. শাহরব মিয়া এবং যশোরের সুহিতা আসরাফি।
অন্যান্য : এমএস স্পিনিংয়ের এম সাহাবুদ্দিন আহমেদ, এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার এবং চট্টগ্রামের বাটালি হিলসের আবু মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন খান।
ব্যাংকিং খাত : ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন (এইচএসবিসি), ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক।
অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান : আইডিএলসি ফাইন্যান্স, বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ফান্ড, উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস ও ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কম্পানি।
টেলিকমিউনিকেশন : গ্রামীণফোন।
প্রকৌশল : বিএসআরএম স্টিলস, নাভানা ও পিএইচপি এবং কন্টিনিউয়াস গ্যালভানাইজিং মিলস।
খাদ্য ও আনুষঙ্গিক : নেসলে বাংলাদেশ, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ এবং স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ।
জ্বালানি ক্যাটাগরি : তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি, সিলেট গ্যাস ফিল্ড ও বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কম্পানি।
পাটশিল্প : জনতা জুট মিলস, সুপার জুট মিলস ও টিমেক্স জুট মিলস।
স্পিনিং ও টেক্সটাইল : কোটস বাংলাদেশ, স্কয়ার টেক্সটাইলস, অ্যাপেক্স টেক্সটাইলস প্রিন্টিং মিলস, এনভয় টেক্সটাইলস, জিএমএস কম্পোজিট নিটিং ইন্ডাস্ট্রিজ, বাদশা টেক্সটাইলস ও হামিদ উইভিং মিলস।
ওষুধ ও রসায়ন : ইউনিলিভার বাংলাদেশ, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কম্পানি, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস।
প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া : মিডিয়া স্টার, ট্রান্সক্রাফট, মিডিয়া ওয়ার্ল্ড ও ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ।
রিয়েল এস্টেট : বে ডেভেলপমেন্টস, স্পেস জিরো ও স্যানমার প্রপার্টিজ।
তৈরি পোশাক : দ্যাটস ইট স্পোর্টস ওয়্যার, রিফাত গার্মেন্টস, কেডিএস গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজ, অনন্ত অ্যাপারেলস, প্যাসিফিক জিন্স, রিং শাইন টেক্সটাইলস ও অ্যাপেক্স ল্যানজারি।
চামড়াশিল্প : বাটা শু কম্পানি (বাংলাদেশ), অ্যাপেক্স ট্যানারি ও লালমাই ফুটওয়্যার।
অন্যান্য : ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো বাংলাদেশ কম্পানি, আমেরিকান লাইফ ইনস্যুরেন্স কম্পানি, দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন ও এমজেএল বাংলাদেশ।
ফার্ম : ওয়ালটন মাইক্রোটেক করপোরেশন, ওয়ালটন প্লাজা, মাস্টারমাইন্ড ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও মেসার্স এএসবিএস।
ব্যক্তি ও সংঘ : আশা, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি।
অন্যান্য : ব্যুরো বাংলাদেশ, গ্রামসিকো, কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (কোডেক) ও ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন।