সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমন ও ন্যায়বিচার
সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমন ও ন্যায়বিচার
রণেশ মৈত্র
সভাপতিম-লীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ।
আমার প্রিয় পাঠক-পাঠিকাদের কাছে ক্ষমা চাইছি বেশ কিছুদিন যাবত
অনুপস্থিত হওয়াতে। লেখালেখি থেকে অনুপস্থিতি বিগত ২০ বছরের মধ্যে কদাপি ঘটেনি। তা দেশে বা বিদেশে যেখানে থাকাকালেই হোক না কেন? এবারে হলো তার কারণ দুটি।
এক, পাবনা জেলা ঐক্য ন্যাপের সম্মেলনের প্রস্তুতির কারণে সপ্তাহখানেক (অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বরের ৪ তারিখ পর্যন্ত) অতিশয় ব্যস্ততা এবং দুই, আমাদের মেজো মেয়ে মালবিকা (কুমকুম) কয়েকটি জটিলরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় একটি
প্রাইভেট হাসপাতালে তিন সপ্তাহ যাবত ভর্তি থাকায় এবং আজ ১৩ নভেম্বরেও আইসিইউ-তে থাকায় কাগজ কলম হাতে নেওয়ার মত মনের অবস্থা নেই। কিন্তু দেশটা তো আমাদের বাংলাদেশ। এখানকার গণতন্ত্র ভিন্নধর্মী, এখানকার ধর্ম নিরপেক্ষতাকে দিব্যি অভিহিত করা যেতে পারে “ইসলামী ধর্মনিরপেক্ষতা” বা “ইসলামিক সেক্যুলারিজম” হিসেবে। কার্যত: হয়েছেও তাই। নইলে সংবিধানের শুরুতে “বিসমিল্লাহ” যোগ হলো কেন? বঙ্গবন্ধুর বাহাত্তরের সংবিধানে তো তা ছিল না। তারা জিয়াউর রহমান ও বিএনপি-র সমালোচনায় উচ্চকণ্ঠ। জিয়া ও বিএনপি-র আমরাও কঠোর সমালোচক। কিন্তু অত কঠিনভাবে প্রতিদিন সরকারি দল যেভাবে জিয়া, বিএনপি-র ক্লান্তিহীন সমালোচনা করেন তাদের কুখ্যাত অবদান “বিসমিল্লাহ”-কে
তাঁরা কিভাবে সংযোজন করেন? জামায়াতে ইসলামীকেই বা কিভাবে সাংবিধানিক বৈধতা প্রদান করেন?
মর্তব্য, এগুলি সবই মৌলবাদকে তুষ্ট করে মাত্র। একইভাবে মুক্তিচেতনাকে ম্লান করে।
মুক্তিযোদ্ধাদেরকেও তাদের আদর্শিক ঐতিহ্য থেকে সরিয়ে আনে।
সংবিধানে আরো উল্লেখ করা হলো “রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম”। এটি সংযোজন করেন বেআইনী পন্থায় রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হওয়া অপর স্বৈরাচারী সামরিক শাসক হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ। তার বিরুদ্ধে সকল দল তিনটি জোটে মিলিত হয়ে প্রায় ১০ বছর আন্দোলন করতে হয়েছে অকালে … প্রাণ ঝরেছে। বহু পরিবার ধ্বংস হয়েছে। স্বৈরতন্ত্রী
এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের মূল শক্তি ছিল প্রধান জোট ১৫ দল এবং তার সেতু ছিল আওয়ামী লীগ। অথচ সেই এরশাদের রাষ্ট্রধর্ম ….সুপ্রিম কোর্ট বাতিল ঘোষণা করা সত্বেও পুনর্বহাল করলেন। অথচ, সবাই জানি, বাহাত্তরের মূল সংবিধান যা বঙ্গবন্ধু হত্যার পূর্ব মুহুর্তে পর্যন্ত চালু ছিল। তাতে না ছিল “বিসমিল্লাহ” না ছিল “জামায়াতে ইসলামী ও ধর্মাশ্রয়ী দলগুলির বৈধতা- না ছিল রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম।
একথাগুলি অপ্রাসঙ্গিক বলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার পরবর্তী বছরগুলিতে ধারাবাহিকভাবে যেভাবে সারাটি দেশজুড়ে কখনও এখানে, কখনও সেখানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটছে তার কারণ গভীরভাবে অনুসন্ধান করলে বুঝা যাবে যে ঐ তিনটি অপ্রয়োজনীয় কিন্তু ধর্মীয় স্পর্শকাতর বিষয় সংবিধানে বর্তমান সরকার কর্তৃক পুণস্থাপন করায় সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিবাদী শক্তিসমূহ নতুন উদ্দীপনা পেয়েছে তাদের মনে নিরাপত্তাবোধের সৃষ্টি হয়েছে কারণ আওয়ামী লীগ ধর্ম নিরপেক্ষ শক্তি হিসেবে দাবি করেও ঐগুলিকে সংবিধানের অন্তর্ভূক্ত করেছে।
তাই যখন দেখি রংপুরে নতুন করে মিথ্যা অজুহাতে, ইসলামের অবমাননা করার ভূয়া খবর দফায় দফায় প্রচার করে গঙ্গাচড়া ও সংলগড়ব তিনটি গ্রামের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের বাড়িঘর প্রকাশ্য দিবালোকে পুড়িয়ে দিয়ে পরিবারগুলিকে নিঃস্ব
করে দেওয়া হলো তখন পূর্ব বর্ণিত পটভূমির কথা স্মরণে না এসে পারে না।
মানতে দ্বিধা নেই যে এভাবে যখন মাইকে প্রচার শুনে নিকটবর্তী তিন থানার সংলগ্ন গ্রামগুলি থেকে হাজার হাজার মানুষ “ইসলাম অবমাননা” প্রতিরোধে লাঠি-বাঁশ-সড়কি নিয়ে তেড়ে আসে পুলিশ তাদেরকে প্রতিরোধ করতে তাৎক্ষনিকভাবে এগিয়ে আসে। ঠেকাতে না পেরে বাধ্য হয়ে সশস্ত্র পুলিশ গুলি চালাতেও বাধ্য হয়। যার ফলে দুই বা ততোধিক মানুষের মৃত্যু ঘটে। অনুমান করি পুলিশ এই পদক্ষেপটুকু না নিলে হয়তোবা শুধু বাড়িঘর পোড়ানোই নয়-তাতে বাস করা অনেককে ওরা মেরেও ফেলতো। সাদা কাগজে হয়তো বাড়িঘর সয়-সম্পক্তি ঐ সন্ত্রাসী গুন্ডরা লুট করেও নিত। এমন অভিজ্ঞতা অতীতে বহুবার প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে।
কিন্তু পুলিশকে একতরফাভাবে প্রশংসা করতে পারছি না। ঘটনার এক সপ্তাহ আগেই তাঁরা অবহিত হয়েছেন অমন একটি মিথ্যা পোস্ট ফেসবুকে দেওয়ার বিষয়টি।
এছাড়াও গোয়েন্দা ও অন্যান্য সূত্রেও তাদের জানবার কথা যে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে গ্রামে গ্রামে মারাত্মক কিছু একটা ঘটানোর। তৎক্ষণাৎ কেন এ ব্যাপারে উন্মুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হলো না। “Prevention is better than cure’’ কথাটি তাদের অজানা থাকার কথা নয়। তাই যে পুলিশ কর্মকর্তারা বিষয়টি জেনেও নিস্পৃহ থেকেছেন
তাঁরাও সেদিনের অগ্নিকান্ডের সে অপ্রকাশ্য সহযোগী হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত আইনের দৃষ্টিতে। আইন কদাপি কর্তব্যে অবহেলাকে প্রশ্রয় দেয় না।
পুলিশের কর্তব্যে অবহেলার সুযোগ নিয়ে রংপুরের গঙ্গাচড়া ঠাকুরপাড়ার ৮/১০ টি হিন্দু বাড়ি প্রকাশ্য দিবালোকে পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হলো। নিমেষেই অতগুলি নির্দোষ হিন্দু পরিবার পরিজন নিয়ে অসহায় গৃহহীন নাগরিকে পরিণত হলেন।
ঠাকুরপাড়া লোকজন নাকি নিস্পৃহ ছিলেন। তাঁরা অগিড়বসংযোগ করতে যাননি। যাননি গতিরোধ করতেও। বাইরের কয়েকটি সীমান্তবর্তী তিনটি উপজেলার সংলগ্ন গ্রামগুলি থেকে কয়েক হাজার মানুষ দিব্যি ছুটে এসে ঘটনাটি ঘটালেন।
পথিমধ্যে পুলিশ বা অন্য কেউ তাদেরকে বিরত করার বিন্দুমাত্র উদ্যোগ নেননি। ফলে ঐ অসহায় হিন্দুরা গৃহহীন, আশ্রয়হীনই শুধু হলেন না তাদের আশাবাদী মনটা হতাশায় ভেঙ্গে পড়লো। মুসলিমদের উপর আস্থাহীনতার সৃষ্টি হলো। সবচেয়ে ক্ষতি ঘটলো এই
আস্থাহীনতা সৃষ্টির ফলেই এবং সে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া বড়ই দুষ্কর।
ফলে যে দুটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ হাজার বছর ধরে, সম্প্রীতির মাঝে বসবাস করছিল রংপুরের ঐ প্রত্যন্ত গ্রামে মুহুর্তের মধ্যেই সেই সম্পর্কে চিড় ধরলো। সৃষ্টি হলো গভীর ক্ষতের। পরিণতিতে সৎ প্রতিবেশী হিসেবে ঐ এলাকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করতে পারবেন কিনা বলা দুষ্কর।
সত্য বটে, ক্ষতিগ্রস্থ হিন্দুদের বাড়িঘর নতুন করে নির্মান করে দেওয়া হয়েছে কিছু টাকা বা অপরাপর দ্রব্য সামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে কিন্তু যা সরবরাহ করা যায় না তা হলো পারস্পারিক আস্থা ।
তদুপরি এই ঘটনার উদ্ভব হিন্দু যুবকের বিরুদ্ধে ফেসবুক কাহিনীর মধ্যে সেই টিটু রায়ের জামিন মঞ্জুর হচ্ছে না। কারাগারে তাকে সন্দেহভাজন ইসলাম বিদ্বেষী বলে চিহ্নিত করে আটকে রাখা হয়েছে। আটকে রাখা হয়েছে ক্ষমতাসীন অন্তত দুজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী এই ঘটনাকে “ষড়যন্ত্র” বলে অভিহিত করা সত্বেও। এবং এই ষড়যন্ত্র
জামায়াত শিবির, হেফাজত কর্তৃক করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা সত্বেও। শুধুমাত্র রংপুরের ঠাকুরপাড়ায় ঘটনাই তো নয় তার আগে ও পরে বিভিনড়ব জেলায় বিভিন্ন এলাকায় অজস্র অনুরূপ ঘটেছে যেমন রামু, পাবনার বনগ্রামে, নাসিরনগর প্রভৃতি।
প্রথমোক্ত দুটি ক্ষেত্রে উত্তম বড়ুয়া ও আর একজন অভিযুক্তকে পুলিশ ধরতে পারেনি কারণ হয়তো তারা পুলিশের দৃষ্টি এড়িয়ে দেশত্যাগী হয়েছেন। তবে নাসিরনগরের রসরাস মন্ডল আজও আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন। মামলার ব্যাপারে দেশান্তরী হওয়াদেরও
রেহাই নেই। সকলের বিরুদ্ধেই আদালতে মামলা চলছে। অভিযুক্তদের তাদের অভিভাবকদের এ বাবদে বিস্তর টাকা পয়শাও খরচ করতে হচ্ছে বলে অনুমান করি।
কিন্তু জানি তো সবাই যে প্রত্যেক ঘটনার জন্যেই এক বা একাধিক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে এবং রংপুরের ঠাকুরপাড়ার ঘটনা বাদে বাকি সবগুলিরই তদন্ত রিপোর্টে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জোর প্রমান না পাওয়ায তাদেরকে নির্দোষ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবু মামলা প্রত্যাহার হয় না, আদালতে আসা যাওয়ার ঝামেলা থেকে নিরপরাধ আসামীদের মুক্তিও জোটে না।
বিষয়টি খোলাসা করে জানা যায় গত ২৫ নভেম্বরের ভোরের কাগজে প্রকাশিত “১ বছরেও চার্জশীট হয়নি” শীর্ষক নাসিরনগর ঘটনা নিয়ে এক সরেজমিন প্রতিবেদন পাঠে। প্রিয় পাঠক-পাঠিকাদের অবগতির জন্য ঐ প্রতিবেদনের অংশ বিশেষ তুলে ধরছি:
নাসিরনগরে হিন্দুদের উপর নারকীয় হামলার বছর পার হয়েছে ৩০ অক্টোবর।
এই এক বছরের মধ্যে আক্রান্তদের পুণর্বাসনে সরকার বহু সহযোগিতা করেছে।
সাহায্য করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ও নাসিরনগর উপজেলা প্রশাসন। তবে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত ও তাদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে ঐ কর্তৃপক্ষই উদাসীনতার আশ্রয় নিয়েছেন। ঐ ঘটনার ব্যাপারে দায়েরকৃত আটটি মামলার মধ্যে একটিরও চার্জশীট হয়নি বিগত একটি বছরে।
সর্বাধিক আশ্চর্যজনক বিষয়টি হলো গত ৩০ অক্টোবর নাসিরনগর সদরে একটি স্মরণ ও প্রতিবাদ সমাবেশ ও প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর দিতে চেয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ হিন্দুরা। কিন্তু নাসিরনগর পুলিশ স্থানীয় প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা জারী করায় নারকীয় ঐ ঘটনার প্রতিবাদ জানানো যা তার প্রতিকার দাবি করে স্মারকলিপি প্রদানে বাধায়ও সৃষ্টি করা হয়। ফলে নাসিরনগরের হিন্দু সম্প্রদায় মর্মাহত।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নাসিরনগর শহরের একজন জানান হামলার পর বিচার ও বর্ষপূর্তি উপলক্ষে কোন সমাবেশ না করার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হক তাঁর অনুসারীদের মাধ্যমে বাধা দিয়েছিলেন। সমাবেশ করার চেষ্টা দেখে মন্ত্রী ছায়েদুল হক নাসিরনগরের হিন্দুদের উপর ক্ষেপে আছেন যদিও তিনি দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে প্রায় তিন মাস যাবৎ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে আছেন। ফলে এই ঘটনার বিচার হবে কি হবে না এই প্রশ্নের হিন্দুদের মনে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে।
তবে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেছেন প্রকৃত অপরাধীরা যাতে উপযুক্ত শাস্তি পায় তার জন্যেই ভালভাবে তদন্ত করা হচ্ছে এবং তা বর্তমানে প্রায় শেষের পর্যায়ে। তাঁরা আশা প্রকাশ করেন, শীঘ্রই মামলাগুলির ব্যাপারে আদালতে উপযুক্ত
চার্জশীট দেওয়া হবে। তবে ঠিক কতদিন আরও লাগবে চার্জশীট দিতে তা নির্দিষ্ট করে জানা না যাওয়া হিন্দুরা হতাশ ও বিক্ষুব্ধ।
নাসিরনগরের ঘটনা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে দেশে ও বিদেশে। তাই হয়ত আজও মোকদ্দমাগুলি প্রত্যাহৃত হয়নি। ঘটনার সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের এক বা একাধিক অংশ প্রকাশ্যে পরোক্ষে জড়িত থাকায় অভিযোগ থাকা সত্বেও। কিন্তু অপরাপর অনুরূপ
ঘটনাগুলিরই যেগুলি নাসিরনগরের আইন বা পরে ঘটেছে। কোথাও কোনো মোকদ্দমা নেই। কোন অপরাধী সাম্প্রদায়িকতা বা হিন্দু নির্যাতনের অভিযোগে কারাগারে আটকও নেই। এযাবত একটি অপরাধীকে শাস্তিও দেওয়া হয়নি। সবচাইতে বড় উদাহরণ
২০০১ এর নির্বাচনের আগে ও পরে দেশ জোড়া সংগঠিতভাবে যে ব্যাপক সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটেছিল তার ব্যাপারে উচ্চ আদালত থেকে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিলে সাবেক বিচারপতি সাহাবুদ্দিন চুনড়বুর নেতৃত্বে গঠিত ঐ কমিশনে প্রায় ১০০০০ হাজার মারাত্মক ঘটনার সন্ধান পান। বিস্তারিত আলোচনা করে তিনি জানান এখনও কমপক্ষে ৩০০০ এরও বেশি ঘটনার ক্ষেত্রে উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমান বিদ্যমান থাকায় ঐ ঘটনাগুলির ব্যাপারে মামলা দায়ের করা উচিত। কমিশনের রিপোর্টে সরকারের কাছে দাখিল করা হয়েছিল আজ থেকে অন্তত: পাঁচ বছর আগে। অন্তত: দু’জন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পরপর প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছিলেন রিপোর্টও দীর্ঘ। তাই ওটা
পড়ে অবশ্যই মামলাগুলি দায়ের করা হবে। একজন অপরাধীও বিচারের আওতার বাইরে থাকতে পারবে না।
কিন্তু নিষ্ঠুর বাস্তবতা হলো একটি মামলাও এ যাবত দায়ের হয়নি। একজন অপরাধীকেও বিচারের আওতায় আনা হয়নি। সুতরাং একথা বললে কি ভুল বলা হবে যে হিন্দু বা ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু নির্যাতনকে সরকার কোন অপরাধ বলেই মনে করেন না।
ফলে গুঞ্জন আকারে হলেও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে যে রোহিঙ্গা মুসলিমরা মিয়ানমারের নাগরিক হওয়ায় মিয়ানমার সরকার তাদের ফিরিয়ে রাজী হয়ে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। এখন বাংলাদেশ সরকার কি যে কোটি কোটি হিন্দু নাগরিক ভাবতে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন তাঁদেরকে স্বদেশে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হবেন। উত্থাপিত সকল প্রশ্নের ব্যাপারে সরকারি বক্তব্য জানতে দেশবাসী প্রত্যাশী। কারণ স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে যে আইন সকলের জন্য সমানভাবে প্রয়োগ হচ্ছে না। প্রয়োগে চরম বৈষম্য বিদ্যমান থাকছে কেন তা দেশবাসী জানতে চায়।
- প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। কাগজ২৪-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য কাগজ২৪ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।
কাগজ টুয়েন্টিফোর বিডি ডটকম এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।