বর্ষশেষেও জঙ্গি হামলা কাশ্মীরে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
বছরের শেষ দিনেও সন্ত্রাস পিছু ছাড়ল না কাশ্মীরের। ভোরের আলো ফোটার আগেই দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামার লেথপোরায় জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে জঙ্গিরা। নিহত হয়েছেন পাঁচ জওয়ান। খতম হয়েছে তিন জঙ্গিও। ঘটনার দায় স্বীকার করেছে জইশ ই মহম্মদ।
কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ শ্রীনগর-জম্মু সড়কের কাছেই লেথপোরার এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। ওই এলাকায় রয়েছে প্রচুর জাফরানের খেতও। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের কম্যান্ডো ও অন্য বাহিনীর জওয়ানদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এই কেন্দ্রে। শিবিরটি পাহারা দেওয়ার দায়িত্বে রয়েছে সিআরপিএফ।
রাত আড়াইটে নাগাদ ওই কেন্দ্রের মূল ফটকে হামলা চালায় সেনার পোশাক পরা কয়েক জন জঙ্গি। রক্ষীদের লক্ষ করে রাইফেল ও হ্যান্ড গ্রেনেড ছো়ড়ে তারা। তাতে নিহত হন এক সিআরপিএফ জওয়ান। আহত হন দু’জন। তার পরেই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মধ্যে ঢুকে পড়ে হামলাকারীরা। আশ্রয় নেয় একটি ভবনে। পরিস্থিতি সামলাতে ডাক পড়ে সেনা ও জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের স্পেশ্যাল অপারেশনস গ্রুপের। পরে প্রাণ গিয়েছে আরও চার সিআরপিএফ জওয়ানের। সিআরপিএফের আইজি রবিদীপ সহায় জানিয়েছেন, শিবিরের যে ভবনে জঙ্গিরা আশ্রয় নিয়েছিল সেখানে আটকে পড়েছিলেন বেশ কয়েক জন জওয়ান। তাঁদের বের করে আনার সময়ে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে এক জওয়ানের। বাকিরা লড়াইয়ে নিহত হয়েছেন। সিআরপিএফ জানিয়েছে, নিহত জওয়ানদের নাম শরিফুদ্দিন গনাই, কুলদীপ রয়, তৌফিল আহমেদ, রাজেন্দ্র নয়ন, প্রদীপকুমার পাণ্ডা। নরেন্দ্র কুমার, মামলাম সামাধান ও মালা রাম নামে তিন জওয়ান আহত হয়েছেন। এখনও পর্যন্ত তিন জঙ্গির দেহ উদ্ধার হয়েছে। তাদের মধ্যে দু’জন স্থানীয় যুবক বলে জানিয়েছে সেনা। মনজুর আহমেদ বাবার বাড়ি পুলওয়ামার দ্রাবগামে। ফারদিন আহমেদ খান্ডে ত্রালের নাজিনপোরার বাসিন্দা। তৃতীয় জনের পরিচয় এখনও জানা যায়নি। দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ লড়াই শেষ হয়। সম্প্রতি বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের জেরে কাশ্মীরে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে জঙ্গিরা। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, জঙ্গিদের মনোবল ফেরাতে তাই জইশ ও লস্করের নেতৃত্ব এবং পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের কর্তারা কাশ্মীরে বড় হামলার ছক কষছিলেন। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের ডিজি এস পি বৈদ্যের কথায়, ‘‘গত তিন সপ্তাহ ধরে আমরা জানতাম, জঙ্গিরা বড় হামলার ছক কষছে। তবে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। পাকিস্তান জঙ্গি পাঠানো বন্ধ না করলে দুর্ভোগ চলতেই থাকবে।’’
কাশ্মীরের কয়েকটি সংবাদ সংস্থাকে ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে এই হামলার দায় নিয়েছে জইশ। তাদের মুখপাত্রের কথায়, ‘‘ভারতীয় সেনার অপারেশন অল আউটে যে কোনও কাজ হয়নি তা নিশ্চয়ই বোঝা যাচ্ছে।’’
জইশের দাবি উড়িয়ে দিয়ে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের ডিজি এস পি বৈদ্যের বক্তব্য, ‘‘কাশ্মীরি যুবকদের মধ্যে জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেওয়ার প্রবণতা কমে গিয়েছে। অপারেশন অল আউটে কেবল খতম করা হচ্ছে না। স্থানীয় যুবকদের মূলস্রোতে ফেরানোও এই অভিযানের অঙ্গ।’’ নরেন্দ্র মোদী সরকারকে নিশানা করেছে কংগ্রেস। দলীয় মুখপাত্র সুস্মিতা দেবের কথায়, ‘‘এই হামলা প্রধানমন্ত্রীর বিদেশনীতির ব্যর্থতা।’’তথ্য-আনন্দবাজার।