মেয়র আইভি অসুস্থ, আনা হচ্ছে ঢাকায়
অনলাইনডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
নারায়ণগঞ্জের সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে চারটায় তাকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে আনা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এর আগে হকার বসানো ও উচ্ছেদ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমান ও আইভীপন্থীদের মধ্যে মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) বিকেলে সংঘর্ষ হয়।
এতে মেয়র আইভী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের শহরের সভাপতি জুয়েল হোসেনসহ অর্ধশত আহত হয়। ওই সময়ে পুলিশ প্রচুর কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষের সময়ে শামীম ওসমান ও আইভী দু’জনই সড়কে ছিলেন।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ শহরের ফুটপাত হকারমুক্ত রাখতে কয়েক দিন ধরেই এমপি শামীম ওসমান ও আইভী সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। সবশেষ সোমবার (১৫ জানুয়ারি) বিকেলে সমাবেশ করে শামীম ওসমান। তিনি ঘোষণা দেন হকারদের পুনর্বাসনের আগে আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মঙ্গলবার বিকেল ৫টা হতে রাত ১০টা পর্যন্ত হকার বসবে। কিন্তু ওই সময়ে আইভী এও ঘোষণা দেন কোনোভাবেই হকার বসতে দেয়া হবে না।
ওই ঘোষণার প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার বিকেল ৪ টা ১৮ মিনিটে নগর ভবনের সামনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও কাউন্সিলরদের নিয়ে অবস্থান নেন মেয়র আইভী। ওখান থেকে অনুগামী নেতাকর্মীদের নিয়ে আইভী মিছিল নিয়ে ফুটপাতের উপর দিয়ে চাষাঢ়ার দিকে আসতে থাকে। অপরদিকে চাষাঢ়া শহীদ মিনারে হকারদের কয়েকটি গ্রুপ বিকেল সোয়া ৪টার দিকে অবস্থান নেয়। বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে ৫টায় আইভীর নেতৃত্বে মিছিল চাষাঢ়া সায়াম প্লাজার সামনে আসে। সেখানে কয়েকজন হকারকে ফুটপাত থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে তাদের মধ্যে ব্যাপক বাকবিতন্ডা ঘটে। এছাড়া আইভীর মিছিলটি পুলিশ আটকে দেয়। তখন বাধা উপেক্ষা করে মিছিল সামনের দিয়ে অগ্রসর হতে চাইল পুলিশের সঙ্গে বাকবিতন্ডা ঘটে।
ওই সময়ে একজন হকারকে মারধর করা হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তখন শামীম ওসমানের অনুগামী হিসেবে পরিচিত চাষাঢ়া এলাকার নিয়াজুল সেখানে গেলে তাকে মারধর করা হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুয়েল হোসেন গেলে তাকেও মারধর করা হয়।
এ খবর চাষাঢ়ায় ছড়িয়ে গেলে সেখানে থাকা আওয়ামী লীগের মহানগর কমিটির যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, শহর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনুসহ অন্যরা ঘটনাস্থলে এগিয়ে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।
তখন আওয়ামী লীগের লোকজনদের পক্ষে হকাররাও অবস্থান নেন। ওই সময়ে সায়াম প্লাজার সামনে লোকজন ব্যারিকেডে দিয়ে আইভীকে রক্ষা করেন। এসময় আইভী পায়ে আঘাত পান। পরে লোকজন এসে আইভীকে উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে নিয়ে যায়।
দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সময়ে উভয় পক্ষের মিছিল থেকে প্রচুর গুলির শব্দ পাওয়া গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষের সময়ে উভয় পক্ষের লোকজন একে অন্যকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এতে পুরো শহরে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় বঙ্গবন্ধু শহরে যান চলাচল ও আশেপাশের সকল দোকানপাট।
এদিকে বিকেল ৫টায় চাষাঢ়া গোলচত্বর এলাকাতে আওয়ামী লীগের লোকজন জড়ো হলে পুলিশ মিছিলে বাধা দেয়। তখন আওয়ামী লীগের লোকজনদের পুলিশ ধাওয়া করলে বিকেল ৫টা ৫ মিনিটে রাইফেল ক্লাব থেকে বেরিয়ে আসেন সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। তখন পুলিশ সরে গেলে শামীম ওসমান লোকজন নিয়ে চাষাঢ়ায় হক প্লাজার সামনে অবস্থান নেন। তখন হকার ও লোকজন ঘটনা নিয়ে শামীম ওসমানকে একের পর এক নালিশ দিতে থাকে। শামীম ওসমান তখন বলেন, আমি এর বিচার আল্লাহকে দিব। আমাদের নেতাকর্মীদের উপর লক্ষ্য করে গুলি করা হয়েছে। আমাদের প্রচুর লোকজনদের মেরে আহত করা হয়েছে। আমরা আইন নিজের হাতে তুলে নেইনি।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আইভী বলেন, আমি কারো কাছে সাহায্য চেয়ে পাইনি। আমি ডিসি ও এসপির প্রত্যাহার চাইছি। আমরা শান্ত নারায়ণগঞ্জ চাই।
আইভী বলেন, আমি শান্তিপূর্ণভাবে লোকজনদের নিয়ে ফুটপাত দিয়ে চাষাঢ়া আসছি। কিন্তু সেখানে বিনা উস্কানীতে আমাদের উপর হামলা করা হয়েছে। নিরীহ লোকজনদের মারধর করা হয়েছে। শামীম ওসমান রাইফেল ক্লাবে থেকে গুলির নির্দেশ দিয়েছেন। তার লোকজন একের পর এক গুলি করেছে।
নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আহত ৩০ জনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। যার মধ্যে ৫ থেকে ৬ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শরফুদ্দিন বলেন, মেয়র সমর্থকদের সঙ্গে হকারদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। তবে কয়জন আহত হয়েছে জানা নেই। পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে।