আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন উন্নয়নের ধারাবাহিকতা থাকে-প্রধানমন্ত্রী
অনলাইন ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
রোববার বিকালে চাঁদপুর স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নৌকা মার্কা আপনাদের মার্কা। নৌকা উন্নয়নের মার্কা। নৌকা মানুষ, পশুপাখি সবাইকে রক্ষা করে। নূহ নবীর (আ.) সময়েও নৌকা সবাইকে বিপদ থেকে রক্ষা করেছিল। তাই উন্নয়ন ও ধারাবাহিকতা রক্ষায় সবাইকে আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নীত হয়েছে। বিশ্ব দরবারে আমাদের মাথা উঁচু হয়েছে। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন উন্নয়নের ধারাবাহিকতা থাকে। ২০১৪ সালে আমরা পুনর্নির্বাচিত হয়েছিলাম বলেই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে পেরেছি। তা যদি হয় তাহলে সরকারের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই দেশের মানুষের উন্নয়ন। আমরা যা যা ওয়াদা করেছি সব কিছু ঠিকমতো পালন করে যাচ্ছি। ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী, ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন ও ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করার অঙ্গীকার করেন।
জনসভায় বিএনপির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতিমদের জন্য টাকা এনে তারা সে টাকা মেরে দিয়েছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে টাকা পাচারের অভিযোগে বিদেশে মামলা হয়েছে। আমরা সে টাকা সেখান থেকে ফেরত এনেছি।
তিনি অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের সন্তান কোথায় যায়, কেন যায় সে বিষয়ে আপনারা লক্ষ্য রাখবেন। তরুণ প্রজন্মকে মাদক ও জঙ্গিবাদ থেকে দূরে রাখতে হবে। এজন্য অভিভাবকদের ভূমিকা রাখতে হবে।
তিনি সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য নৌকা মার্কায় ভোট চান। এজন্য উপস্থিত জনতাকে দুই হাত তুলে অঙ্গীকার করতে বললে জনতাও দুই হাত তুলে তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চাঁদপুরের উন্নয়নে আপনাদের কোনও দাবি করা লাগবে না। নৌকা মার্কায় ভোট দেন, আমরা নিজেরাই চাঁদপুরের সব উন্নয়ন করে দেবো। এখানে পর্যটনের প্রচুর সুযোগ আছে। বিশেষ করে পদ্মা ও মেঘনা যেখানে মিলেছে নৌভ্রমণের জন্য এ জায়গা সব থেকে সুন্দর। সেই জায়গাটা দেখতে দেশবাসীকে সুযোগ করে দেব চাঁদপুরে পর্যটন কেন্দ্র হবে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়ানো ডা. দীপুমনিকে দেখিয়ে বলেন, আপনাদের এই জন প্রতিনিধি একজন ডাক্তার। সে আমার কাছে আগেই চাঁদপুরে একটা মেডিকেল কলেজ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। কথা দিয়েছি, চাঁদপুরে মেডিক্যাল কলেজ করে দেবো।
তিনি বলেন, চাঁদপুরের হাইমচরে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। এখানে বিনিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়াও এখানে একটা নৌবন্দর করে দেব।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, জনগণের দোড়গোড়ায় আমরা চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিয়েছি। আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত, বাংলাদেশের একটা মানুষও গৃহহারা থাকবে না। যাদের ঘর নাই, বাড়ি নাই আমরা তাদের বাড়িঘর করে দিচ্ছি। আমরা চাই না দেশের মানুষ ভিক্ষা করে চলুক। এজন্য দেশকে ভিক্ষামুক্ত করার চেষ্টা করছি।
পদ্মা ও মেঘনা নদী তীরবর্তী জেলা চাঁদপুরের মৎস্যজীবী ও জেলেদের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সব মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। যখন ইলিশ শিকার বন্ধ থাকে তখন আমরা জেলেদের মাসে ৪০ কেজি করে চাল দেই।
চাঁদপুরের ৪৭ প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন-
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার চাঁদপুর সফরে এসে ৪৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।
এর মধ্যে ২৪টি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, ২৩টি উদ্বোধন। উদ্বোধনকৃত উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে : চাঁদপুর জেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের (৬ তলা ভিত বিশিষ্ট ৪ তলা পর্যন্ত) স্টাফ কোয়ার্টার, চাঁদপুর পৌরসভার পুরাণবাজার ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানি শোধনাগার, চাঁদপুর পৌরসভার নতুনবাজার ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানি শোধনাগার ও উচ্চ জলাধার, চাঁদপুর জেলার পুরাণবাজার ইব্রাহিমপুর সাখুয়া এলাকার মেঘনা নদীর ভাঙন হতে চাঁদপুর সেচ প্রকল্প সংরক্ষণ প্রকল্প (১ম সংশোধিত), মেঘনা নদীর ভাঙন হতে চাঁদপুর সেচ প্রকল্প এলাকা সংরক্ষণ (হাইমচর) এবং বাঞ্ছারামপুর উপজেলার বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্প (১ম সংশোধিত), চাঁদপুর সরকারি কলেজের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী নিবাস, চাঁদপুর পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজের ৪ তলা একাডেমিক ভবন, মতলব উত্তর উপজেলার সুজাতপুর ডিগ্রি কলেজের ৪ তলা একাডেমিক ভবন, মতলব উত্তর উপজেলার কালিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ৪ তলা একাডেমিক ভবন, কচুয়া বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজের ৪তলা একাডেমিক ভবন, ফরিদগঞ্জ উপজেলার লাউতলী ডা. রশিদ আহম্মেদ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ৪ তলা একাডেমিক ভবন, ফরিদগঞ্জ উপজেলার শোল্লা উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, মতলব উত্তর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে ভবন, ফরিদগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, চাঁদপুর জেলার ৮টি উপজেলার ৬০ জন ভূমিহীন ও অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার জন্য বাসস্থান, হাইমচর উপজেলাধীন চাঁদপুর পুরাণবাজার (ডেলের বাজার)-হাইমচর চরভৈরবী সড়ক উন্নয়ন, চাঁদপুর সদর উপজেলাধীন রালদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সম্প্রসারণ, চাঁদপুর সদর উপজেলাধীন হোসেনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সম্প্রসারণ, চাঁদপুর সদরের আমিনুল হক পৌর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সম্প্রসারণ, কদমতলা পৌর সুপার মার্কেট, স্বৈরাচারবিরোধী ৯০-এর গণ আন্দোলনে শহীদ ছাত্রলীগ নেতা জিয়াউর রহমান রাজু স্মরণে ‘রাজু চত্বর’, ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি, চাঁদপুর ও মতলব ধনাগোদা নদীর উপর সেতুর (মতলব সেতু)।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপনকৃত প্রকল্পগুলো হচ্ছে : মতলব দক্ষিণ উপজেলার গালিম খাঁ চাঁদপুর-কুমিল্লা সংযোগ স্থানে সীমানা গেইট নির্মাণ, কচুয়া উপজেলার জগৎপুর অংশে চাঁদপুর-কুমিল্লা সংযোগ স্থানে সীমানা গেইট নির্মাণ, ফরিদগঞ্জ উপজেলার চরমান্দারী চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর সংযোগ স্থানে সীমানা গেইট নির্মাণ, মতলব দক্ষিণ উপজেলা পরিষদে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ নির্মাণ, মতলব উত্তর উপজেলা পরিষদে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ নির্মাণ, কচুয়া উপজেলা পরিষদে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ নির্মাণ, হাইমচর উপজেলা পরিষদে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ নির্মাণ, হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ নির্মাণ, কচুয়া পৌরসভার ভূ-গর্ভস্থ পানি শোধনাগার নির্মাণ, মেঘনা নদীর ভাঙন হতে চাঁদপুর জেলার হরিণা ফেরিঘাট এবং চরভৈরবী এলাকার কাটাখাল বাজার রক্ষা প্রকল্প, ফরিদগঞ্জ উপজেলার বাশারা উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন নির্মাণ, ফরিদগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন নির্মাণ, মতলব দক্ষিণ উপজেলার হযরত শাহজালাল উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন নির্মাণ, মতলব দক্ষিণ উপজেলাধীন নায়েরগাঁও দক্ষিণ ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ, মতলব দক্ষিণ উপজেলাধীন মতলব পৌর ভূমি অফিস নির্মাণ, মতলব দক্ষিণ উপজেলাধীন নারায়ণপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ, চাঁদপুর সদর উপজেলাধীন বালিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ, শাহরাস্তি উপজেলাধীন কনৈ ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ, কচুয়া উপজেলাধীন কচুয়া দক্ষিণ ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ, কচুয়া উপজেলাধীন কাদলা ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ, হাইমচর উপজেলাধীন ঈশানবালা জিসি শরীয়তপুর-চাঁদপুর আরএন্ডএইচ সড়ক উন্নয়ন, মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ, চাঁদপুর পরিবার পরিকল্পনা অফিস নির্মাণ ও চাঁদপুর পৌর অফিস ভবন নির্মাণ।