খানসামার নলবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি’র ফলাফল শূণ্য
ভূপেন্দ্র নাথ রায়, দিনাজপুর জেলা প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার গোয়ালডিহি ইউনিয়নের নলবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০১৮ সালের এসএসসিতে কেউ পাশ করেনি।
এই প্রতিষ্ঠান থেকে সুমি রানী রায় ও সাহিদা খাতুন নামে ২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে। এরা কেউ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে নি।
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড ঘোষিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে এবার পাশ করে নি এমন বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫টি। এই ৫টির মধ্যে দিনাজপুর জেলার খানসামা উপজেলার গোয়ালডিহি ইউনিয়নের অবস্থিত নলবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে।
১৯৯৩ সালে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হলেও ১৯৯৫ সালে বোর্ডের অনুমোদন পায় এবং ১৯৯৯ সালের ১ এপ্রিল এমপিও ভুক্ত হয়েছে।
অফিস সূত্রে জানা যায়, নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ের ৫ জন শিক্ষক ও ৩ জন অফিস সহকারী মিলে প্রতিমাসে মোট বেতন পায় এক লক্ষ চৌদ্দ হাজার ছয়শত আটচল্লিশ টাকা।
২০০২ সালে প্রথম বারের মতো এসএসসি পরীক্ষা শুরু করলেও তা প্রাথমিক থেকেই পরীক্ষার্থী সংখ্যা ছিল নগন্য। সাম্প্রতিক ২০১৪ সালে অংশগ্রহন করে ৭ জন, ২০১৫ সালে ৫ জন, ২০১৬ সালে ২ জন, ২০১৭ সালে ৫ জন। এর মধ্যে ২০১৬ সালেও উপজেলার মধ্যে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হতে কেউ পাশ করেনি।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী সংখ্যা ১১৪ জন হলেও তা হাজিরা খাতা পর্যন্তই শেষ। বাস্তবে তা ১৫-২৫ জন।
গতকাল সোমবার সরেজমিনে নলবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সকাল সাড়ে ১১ টায় গিয়ে অফিসে কথা বলে জানা যায়, ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ৩, ৭ম শ্রেণিতে ২, ৮ম শ্রেণিতে ৫, নবম শ্রেণিতে ২ এবং ১০ম শ্রেণিতে ২ জন উপস্থিতি রয়েছে। কিন্তু হাজিরা খাতা ও সরাসরি ক্লাশে গিয়ে দেখা যায় তাও গরমিল। অষ্টম শ্রেণিতে ৫ জনের কথা বললেও শ্রেণি কক্ষে গিয়ে দেখা যায় ৩ ও নবম শ্রেণিতে ১ জন রয়েছে। এছাড়াও হাজিরা খাতাতেও নিয়মিত ছাত্রীদের হাজিরা করা হয় না।
এ বিষয়ে সহকারী শিক্ষক হরনাথ রায় ও নির্মল রায় বলেন, ছাত্রীর সংখ্যা কম থাকার ফলে মাঝে মাঝে শ্রেণিকক্ষে হাজিরা খাতা নিয়ে যাই না। এ জন্য হাজিরা খাতার এ অবস্থা।
একজন শিক্ষার্থীও পাশ করতে পারে নি কারণ জানতে চাইলে সহকারী শিক্ষক মোঃ আব্দুল্লাহ্ বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠান জুনিয়র স্কুল হিসেবে চলে। আমরা এখনো মাধ্যমিক পর্যন্ত চালানোর জন্য শিক্ষক পাই নি। এছাড়া পরীক্ষার্থী ২জন ইপিজেডে কাজ করায় কাংখিত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছি।
নলবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এবারের অকৃতকার্য পরীক্ষার্থী জালালপাড়ার মোসলেম উদ্দীনের মেয়ে সাহিদা খাতুন বলেন, আমি অষ্টম শ্রণি হতে দশম শ্রেণি পর্যন্ত এ স্কুলে পড়াশোনা করেছি। কিন্তু নিয়মিত ক্লাশ না হওয়া, শিক্ষকদের খেয়াল খুশিমত স্কুলে যাওয়া আসার ফলে আমাদের এই অবস্থা। সে শিক্ষকের কথার প্রতিবাদ করে বলেন, আমি কখনো ইপিজেডে যাই নি। এটা তিনি নিজেদের বাঁচানোর জন্য মিথ্যে বলেছে।
এ দিকে প্রধান শিক্ষিকা মোছাঃ কোহিনুর বেগমের গত ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষ হলেও ২০১৮ সালের জানুয়ারী-মে মাস পর্যন্ত শিক্ষক হাজিরা খাতায় তার অনুপস্থিতি দেখা যায়। কারণ হিসেবে জানতে চাইলে অফিস সহকারী ক্ষিতিশ চন্দ্র রায় জানান, আপার বেতন না হওয়ায় ও শারীরিক ভাবে অসুস্থ থাকার ফলে তিনি প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত আসেন না।
এ বিষয়ে উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন সভাপতি ও বর্তমান সভাপতি আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, মাধ্যমিকের অনুমোদন ও পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় এবারে কেউ পাশ করে নি। আর প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীও ছিল না। আর যে দু’জন পরীক্ষা দিয়েছে তাদের অনেক কষ্ট করে এই প্রতিষ্ঠান হতে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করিয়েছিলাম।
নলবাড়ী গ্রামের আঃ করিম বলেন, ঐ স্কুলে তো পড়াশুনায় হয় না আর বাচ্চারা কিভাবে ভর্তি হবে। শিক্ষকরা শুধু যায় আর আসে। প্রধান শিক্ষিকা তো সভাপতির মেয়ে হওয়ার কারনে স্কুলেই যায় না। তিনি তার ইচ্ছেমত স্কুল চালায়।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আজমল হক জানান, শিক্ষাবোর্ড এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।