১০ বছর পর ফের সরগরম সেই নয়াপল্টন
অনলাইন ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
২০০৮ থেকে ২০১৮। মাঝে ১০টি বছর বিরোধী দলে থাকায় নেতাকর্মীরা ঠিকভাবে পার্টি অফিসেও আসতে পারেননি। করতে পারেননি কোনও সভা-সমাবেশও। উল্টো গ্রেফতার-হামলা-মামলা আর সরকারের দমননীতিতে কাহিল হয়ে পড়েছিল বিএনপির সাংগঠনিক ভিত্তি। তবে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়ন সংগ্রহ করতে আসা নেতাকর্মীদের পদচারণায় এক দশক পর আবারও সরগরম হয়ে উঠেছে নয়াপল্টন। আবারও গোটা এলাকায় জেগেছে জনজোয়ার। গত দুদিন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে দলে দলে নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ধানের শীষের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন মানেই আলাদা একটি উৎসব। যেন ঈদ, দুর্গাপূজা কিংবা বড়দিনের মতো কোনও উৎসবের আমেজ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সারা দেশে লেগেছে ভোটের হাওয়া। নির্বাচনের দিনক্ষণ, মনোনয়ন ফরম বিক্রি, জমা ও প্রত্যাহারের দিনক্ষণও ঘোষণা করা হয়ে গেছে। ফলে দেশের নির্বাচনের মাঠে নির্বাচনী হাওয়ার গতিবেগ আগের চেয়ে বেড়ে গেছে অনেক বেশি।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবদী দলের (বিএনপি) মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় মনোনয়নের ফরম সংগ্রহ করতে আসছেন। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি চোখে পড়ে গত দুই দিন। জনসমুদ্রে পরিণত হয় কাকরাইল থেকে ফকিরাপুল সড়ক। এসময় পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সবার মুখে একই শ্লোগান, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’, ‘নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই’, ‘ধানের শীষে ভোট চাই।’
টানা ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় না থাকা বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশি বাধায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমবেত হতে না পারলেও একাদশ জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ উপলক্ষে ব্যাপক সংখ্যায় তাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে নয়াপল্টনে। পাঁচ বছর আগের নির্বাচন বর্জন করে আসা বিএনপি এবার নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই দলটির নেতাকর্মীদের নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতা দেখা যায়।
২০০৮ সালের ২৯ জানুয়ারি নবম সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এরপর বিরোধী দল বিএনপি বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সভা-সমাবেশ করতে পারলেও সেই চিত্রও পাল্টে যায় একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ওই নির্বাচন বর্জন এবং প্রতিহতের ডাক দেয় বিএনপি। সে সময় তাদের আন্দোলনের মধ্যে সহিংসতায় অনেকের প্রাণহানি ঘটে।
সেই থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক তৎপরতা দৃশ্যত সঙ্কুচিত হয়ে আসে। নাশকতার বিভিন্ন মামলায় আসামি হন হাজার হাজার নেতাকর্মী, গ্রেফতার হন অনেকে। অপরদিকে দলীয় কার্যালয়ের সামনেও সভা-সমাবেশের জন্য পুলিশের অনুমতি চেয়ে বার বার ব্যর্থ হতে হয় দলটিকে।
দলটি আবার নির্বাচনমুখী হওয়ায় কয়েক বছর পর আগের চেহারায় ফিরেছে তাদের নয়াপল্টনের কার্যালয়। মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাকর্মীদের মিছিল আর মহড়া দেখলে মনে হবে যেন রাজধানীর নয়াপল্টনে কোনো আনন্দ উৎসব চলছে। মিছিলে নেতাকর্মীদের হাতে রয়েছে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ নেতাকর্মী ও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ছবিসহ প্ল্যাকার্ড, ব্যানার কিংবা পোস্টার। সাথে দেখা যাও বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রও। কেউ গান বানিয়ে সেই রেকর্ডের গানও একাধারে বাজিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থীর পক্ষে।
এতে কার্যালয়ের সামনে অস্বাভাবিক ভিড় গত দুই দিনে লক্ষ করা যায়। এ ভিড় সামলে মনোনয়ন কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের। এরপরেও কারও মুখে কোনও ক্লান্তির ছাপ নেই। নির্বাচন কমিশনও বলছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম কিনতে আসা হাজার হাজার নেতাকর্মীর ঢল ‘আচরণবিধি লঙ্ঘন নয়’।
মঙ্গলবার বিকেলে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে যে মনোনয়ন ফরম নিতে লোক আসছে এটা আচরণবিধি লঙ্ঘনে পড়ে না। কারণ সারা বাংলাদেশে প্রতি আসনে তিনজন করেও যদি নমিনেশন নিতে আসে তাহলেও ৯০০ জন হয়। আর তাদের সঙ্গে যদি দু’জন করেও আসে তাহলে হয় ১৮০০ জন। তাহলে ৯০০ ও ১৮০০ মিলে হয় ২৭০০।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘ধরি, এই তিন হাজার লোক এই কার্যালয়ের সামনে থাকেবে। এটাতো আচলবিধি লঙ্ঘন নয়। আর এটাকে যদি আপনারা লিখেন আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে এটা লিখেন তাতে নিজের প্রতি অন্যয় করবেন, নিজের বাস্তবতার প্রতি অন্যয় করবেন, মানুষের প্রতি অন্যয় করবেন, দলের প্রতি অন্যায় করবেন।’
বিএনপির মনোনয়ন ফরমের জন্য পাঁচ হাজার টাকা করে নেয়া হচ্ছে। তবে জমা দেয়ার সময় জামানত হিসেবে দিতে হচ্ছে আরও ২৫ হাজার টাকা। ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম কেনা ও জমা দিতে পারবেন দলটির প্রার্থী হতে ইচ্ছুকরা।
মঙ্গলবার (১৩ নভেম্বর) ছিল মনোনয়ন ফরম বিক্রির দ্বিতীয় দিন। প্রথম দিনই প্রার্থীদের মধ্যে ১ হাজার ৩২৬টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি শেষ করেছে বিএনপি। দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ১ হাজার ২১৩ টি ফরম বিক্রি করেছে দলটি। ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে ফরম বিক্রি ও জমা।
এবার বিএনপি থেকে তিনজন কণ্ঠশিল্পীসহ চার তারকাকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। তারা হলেন- কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা (সিরাজগঞ্জ-১), মনির খান (ঝিনাইদহ-৩), বেবী নাজনীন (নীলফামারী-৪) এবং অভিনেতা হেলাল খান (সিলেট-৬)। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে নয়াপল্টনে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা মনে করছেন সরকার যদি ন্যূনতম সুষ্ঠু নির্বাচন করারও সুযোগ দেয় তবে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হবে। বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করবে বিএনপি।