ভারত থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ আসছে বাংলাদেশে
অনলাইন ডেক্স । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
পশ্চিমবঙ্গের হুগলি নদীতে মাছ ধরার জাল ও পলি জমে নদীর নাব্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশের দিকে যাত্রা শুরু করেছে ইলিশের ঝাঁক। সম্প্রতি ভারতের সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের করা এক গবেষণায় এমন তথ্য পাওয়া যায় বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
পশ্চিমবঙ্গের মাছের বাজারে এবার বিগত বছরগুলোর মতো ইলিশ মাছ দেখা যায়নি। ২০০২ থেকে ২০০৩ সালে হুগলি নদী থেকে ৬২ হাজার ৬০০ টন ইলিশ মাছ ধরা পড়েছিল। ২০১৭-১৮ সালে তা নেমে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৫৩৯ টনে। অর্থাৎ ইলিশের জোগান প্রায় ৫৬ শতাংশ কমেছে।
একই সময় বাংলাদেশের নদীগুলোতে লক্ষণীয় হারে ইলিশ মাছ ধরা পড়েছে। ২০০২ থেকে ২০০৩ সালে বাংলাদেশে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৩২ টন মাছ ধরা পড়ত। ২০১৭-১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫ লাখ ১৭ হাজার টনে।
অর্থাৎ মাছের জোগান বেড়েছে প্রায় ১৬০ শতাংশ। বর্তমানে ইলিশের ৭৫ শতাংশ ধরা পড়ে বাংলাদেশে, ১৫ শতাংশ মিয়ানমারে এবং মাত্র ৫ শতাংশ ভারতে ধরা পড়ে।
ভারতের সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সাবেক বিভাগীয় প্রধান উৎপল ভৌমিক বলেন, “ইলিশ সাধারণত তিনটি পথ ধরে- হুগলি, বাংলাদেশের মেঘনা নদী ও মিয়ানমারের ইরাবতী।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে হুগলিতে অনিয়ন্ত্রিত মাছ ধরা ও নদীতে পলি জমার কারণে ইলিশ আর এই পথ দিয়ে যাচ্ছে না। মেঘনা নদীপথকে যাওয়ার জন্য বেছে নিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “ইলিশ মাছের ঝাঁক পানির গভীরতা অন্তত ৩০-৪০ ফুট না হলে যেতে পারে না। হুগলি নদীর প্রবেশ মুখের এতটা গভীরতা নেই। ফারাক্কা বাঁধ ও সঠিকভাবে ড্রেজিং না করার কারণে নাব্য সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।”
পশ্চিমবঙ্গের মৎস্যজীবীদের একটি সংগঠনের নেতা প্রদীপ চ্যাটার্জি বলেন, “হুগলি নদীর মুখে অনেক জাল রয়েছে। এক একটি জাল প্রায় দুই কিলোমিটার লম্বা। এত জাল থাকলে কীভাবে মাছ নদীতে প্রবেশ করবে?
ইলিশ মাছ বাঁচার জন্য মেঘনা নদীর দিকে যাচ্ছে। ওখানে নদীর গভীরতা ৫০ থেকে ৬০ ফুট। বিপদ শনাক্তে ইলিশের নিজস্ব ব্যবস্থা আছে। ওই ব্যবস্থা ইলিশকে নিরাপদ পানির দিকে নিয়ে যায়।”
২০১৩ সালের দিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার হুগলি, মালতা, রায়মঙ্গল এবং ঠাকুরান অঞ্চলকে ইলিশের অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছিল। এই অঞ্চলে মাছধরা, পরিবহন ও ২৩ সেন্টিমিটারের নিচের আয়তনের ইলিশ বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ বলে জানান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওশানোগ্রাফিক বিভাগের অধ্যাপক সুগত হাজরা।