সেলিনা জাহান প্রিয়ার রহস্য গল্প- মোবাইল ফোনের ম্যাসেজ

 

রহস্য গল্প- মোবাইল ফোনের ম্যাসেজ ( দুর্বল মনের মানুষরা পড়বেন না )

————————————————————সেলিনা জাহান প্রিয়া

 

মোবাইল ফোনটা একটা ম্যাসেজ এলো তখন ভোর পাঁচ টা কিন্তু ম্যাসেজ রিং টোন কেন জানি একটু ভৌতিক মনে হল। লাইট টা জ্বালিয়ে একটু পানি খেয়ে নিল। রাতে রিং টোন অফ করে ঘুমায়। ম্যাসেজ টা অনেক সুন্দর – হাই পিউ। তুমি রাতে মেরুন গাউন পড়ে ঘুমাও। চশমা টা খুলে ঘুমাবে। নাইট ড্রেস আর হালকা গোলাপি লিপজেল তোমাকে দারুন লাগে।
অফিসে যাওয়ার সময় ছাতা নিও বৃষ্টি হবে। গুড ডে। মুখ টা একটু বাকা করে বলল- কত রকমের পাগল আছে জানি না। শীতের দিনে বাংলাদেশে বৃষ্টি এটা একটা পাগল ছাড়া কিছুই না।
আর ঘুমাতে পারলো না পিউমনি। একটু কফি বানিয়ে খেয়ে নিল। বনানীর লেকে লাইটের আলো কুয়াশার জন্য দেখা যায় না। যে ম্যাসেজ দিল মনে মনে আবার একটু বকা দিল। যত সব পাগল ছাগল। দাত ব্রাশ শেষ করে। হালকা একটু ব্যায়াম করে নিল। খুব সচেতন মেয়ে। একটা ভাল চাকুরি করে। নিজের টাকায় ছোট একটা ফ্ল্যাট নিয়েছে বনানী। মা ভাইদের সাথে লন্ডন থাকে। বড় বোনের সাথে একটা বিষয় নিয়ে মনমালিন্য। রুটিন বাধা জিবন। সকাল ৭ টা আবহাওয়া খুবই খারাপ। গভীর সমুদ্রে নাকি নিম্ন চাপ। খবরে দেখাচ্ছে। দরজা জানালা সব বন্ধ। শীতের নীল সুয়েটার পড়ে অফিসের জন্য বের হল। উত্তরা অফিস। গাড়ি থেকে নামতেই বৃষ্টি আর বৃষ্টি। এমন জায়গায় নামলো যে ভেজা ছাড়া উপায় নাই। অফিস থেকে কোন মতে শরীর মুছে ছুটি নিয়ে বাসায়। বেলা এগারটা আবার একটা ম্যাসেজ অবাক হল নাম্বারটা টা দেখে! +১০১। এবার লিখা তোমার ঘরটা অনেক সুন্দর আমার ভাল লেগেছে তবে শীতকাল বলে কি টবে পানি দিবে না। পিউ এবার আর একটু অবাক হল। ঠিক তো টবে পানি দেয়া হয় না অনেক দিন। বারান্দায় গেল। টবে পানি দিল। বৃষ্টি হল কিন্তু টব পর্যন্ত পানি আসে না। যে অল্প একটু বৃষ্টি। পিউ তার গোল্ডেন কালার আই ফোনটা দেখছে। ভাবছে কেউ হয়ত রহস্য করছে। কিন্তু কে করবে তার সাথে। চিন্তা করে পায় না। পিউ ভাবতে লাগলো। ভালই তো। দেখি আর কি কি বলে এই ম্যাসেজ। সাথে সাথে রিপ্লে চলে এলো। হ্যালো পিউ আমি তোমাকে অনুসরণ করি ২৪ ঘণ্টা। পিউ এবার হেসে বলল দারুন মজা তো – তা কে আপনি জানতে পারি। ম্যাসেজ এলো আমি রহস্য। পিউ বলল আপনি রহস্য! এবার আবার ম্যসেজ এলো – তোমার কি বিশ্বাস হয় না। সেল ফোনের দিকে চেয়ে পিউ পিউ একটু ভয় পেল। এর মধ্য ফোন বাজছে।

cpa add
—হ্যালো কে?
— আরে পিউ নাম ভাসে নাই।
— অহ! সরি কেয়া।
— কি হল তোকে এমন শুনাচ্ছে কেন? বৃষ্টি তে গলা বসেছে।
— আরে না কেয়া। আমার মনে হয় কিছু সমস্যা হচ্ছে।
— কি রকম।
— আর বলিস না। ফোনে আবল তাবল ম্যাসেজ আসে।
— এত সুন্দর মেয়ে তুই। একটা ছ্যাকা খেয়ে আর ছেলেদের বিশ্বাস করিস না। এটা ঠিক না। একজন মানুষ খারাপ হতেই পারে তাই বলে জগতের সবাই না।
—- আমি ভাই প্রেম করব না। বুঝলে।
— কেন করবি না। তুই কি ম্যাদার তেরেসা হবি পিউ।
—- তাহালে কি তোর মত হতে বলছিস?
— আমি কেমন?
— তুই তো তসলিমার নাছরিনের নানী।
— কি ভাবে?
—- এই যে তুই বস কে আর বসের ভাই কে এক সাথে দিল্লির লাড্ডু দেখাচ্ছিস।
—- শুন লাড্ডু দেখুক কিন্তু দিল্লির লাড্ডু অনেক দামী। শুন পিউ এরা হল সব রাম ছাগল। ঘরে বউ আছে তার পরও বলে চলুন না কেয়া একটু কফি খেতে। ভালই লাগে যখন আমার হাত ধরে বলে কেয়া তোমাকে অনেক মিস করি আবার বাসায়
গিয়ে বউ কে বলে জান তুমি আছো বলেই জিবন কত সুন্দর।।
—- শুন কেয়া। তাই তো তুই তসলিমার নানী। নানীর চরিত্র তসলিমার চেয়ে একটু ভাল ছিল।
—- পিউ কাল তো অফিস বন্ধ। বড় দিনের। কি করবি।
— তোর তো অনেক ছেলে বন্ধু একটা আমাকে হাওলাদ দে হাবাগোবা দেখে।
—- হাবা গোবা কেন?
—- বলদ টাইমের ছেলে গুলো মেয়েদের জন্য যে কোন রিক্স নিতে পারে। আর চালাক গুলো চামে কেটে পড়ে।।
—- পিউ তোর তো ভালই জ্ঞান।
—- হবে না তোর মতো একটা বান্ধবি আছে। যে দশটা প্রেম করে। একদিন দেখবি তুই প্রেমের কি জ্বালা।
—- পিউ আমি প্রেম করি না। প্রেমের ভাব ধরি। যার যত ভাব তার তত মুল্য।
—- কেয়া তুই তোর ভাব নিয়ে থাক। আমি ফোন রাখি। একটু পিংক সিটিতে যাব।
—- কেন রে? কেউ আসবে না কি?
—- ওহ আসবে জাতীয় চাচা। আমি তো দেখতে বিদিশার মতো।
—- পিউ তুই যা বলিস না। রাখি কাল ফোন দিস।
পিউ ফোনটা রেখে রান্নার কি কি আছে দেখছে। একটা ম্যাসেজ এলো হ্যালো পিউ আমি তোমাকে দেখছি। ম্যাসেজটা পড়ে একটু হেসে বলল – মন ভড়ে দেখ। দেখতে আর পয়সা লাগেনা। আমাকে দেখছ! তাহালে বল দেখি আমি কি করছি। ম্যাসেজ এলো। পিউ তোমার পড়নে একটা ফতুয়া কমলা সাদা কালার। তবে টাইস টা সাদা। এখন তুমি রান্না ঘরে।
পিউ ভয় পেল। রান্না ঘর থেকে তাকে কেউ দেখা সম্ভব না। তবে কি তার ঘরে কোন গোপন ক্যামেরা কেউ বসালও। না আমি মনে মনে যাই বলি সে তাই উত্তর দেয়। আবার ফোন হাতে নিয়ে বলল – আচ্ছা মিঃ রহস্য আমি আজ রাতে কি করব। সাথে সাথে উত্তর এলো তুমিও আজ রহস্য হয়ে আমার কাছে ফিরে আসবে। পিউ বলল ঠিক আছে। আমার জন্য অপেক্ষা কর।
ম্যাসেজ এলো তাই তো করছি। পিউ কোথায় জানতে পারি। ম্যাসেজ এলো গুলসান এক এ। শুটিং ক্লাবের ঠিক সামনে।। পিউ এবার ফোন করল এবার কেয়া কে –
——হ্যালো কেয়া।
—— কি রে পিউ বল।
—- শুন আমি হয়ত পাগল না হয় ছাগল। আমার সেল ফোনে কিছু ভৌতিক ম্যাসেজ আসে। আমি কি করি? কি খাই? কি পরি? সব বলে দেয়। রাতে একটু ভয় ভয়
লাগছে। তুই চলে আয় একসাথে থাকব।
—– আচ্ছা ২০ মিনিট লাগবে। থাক। একসাথে পিংক সিটি তে যাব।
—– ওকে কেয়া।
ফোন শেষ করতেই ম্যাসেজ। হ্যালো পিউ। তোমার একটা সুন্দর নাম আছে। আমি কি সেই নামে ডাকব তোমায়। পিউ রেডি হতে হতে বলল – ডাকো। আবার ম্যাসেজ – আমার কাছে আসবে শীতের রাতে তবে একটা শাড়ি পড়লে ভাল হতো। পিউ মনে মনে একটা শাড়ি পড়ার চিন্তা করছিল। এবার পিউ ভাবছে এটা তার মনের খেয়ালের উত্তর। তার বেখ্যায়ালি মন এ উত্তর দিচ্ছে। এবার সে তার প্রিয় শাড়ি পড়লো। হাতে কিছু কাঁচের চুরি। কপালে একটা ছোট কালো টিপ। আবার ম্যাসেজ – তোমাকে আজ বসন্তের রানির মতো লাগছে। এবার স্বর্গে এক সাথে বসন্তে নীল আকাশের মেঘের সাথে তোমাকে দেখাব স্বর্গের একটা মহল। কি বল।
একটু একটু ভয় নিয়ে বলল পিউ – অপেক্ষা কর আবার পালিও না। আমি কিন্তু পালানো মানুষ পছন্দ করি না। পিউ ধরে নিয়েছে সে যা দেখছে। সব ভুল। এটা তার ভাবনা। কেয়া চলে এসেছে পিউ তার ম্যাসেজ দেখাল কেয়া কে। একটা রিক্সা নিয়ে গুলসান পিংক সিটির দিকে যাচ্ছে। কেয়া বলে কি রে কোন ম্যাসেজ নেই। তুই আমাকে মাঝে মাঝে বোকা বানাস। এটা ঠিক না। পিউ বলল –
আমার মনে হয়েছে যে এটা আমার ভাবনা। না হয় ম্যাসেজ গুলি গেল কই। কিন্তু কেয়া সকালের বৃষ্টি। টবের পানি, গোলাপি লিপজেল, আমার শাড়ি পড়া, সব জানি কেমন লাগছে। কেয়া বলল – একা একা থাকলে এমন হয়। এটা একধরনের মানসিক সমস্যা ঘুমালে ঠিক হয়ে যাবে। তাদের দু জনের শপিং শেষ। ধানসিঁড়ি তে নান রুটি কাবাব বেশ মজা করে খেল। কেয়ার একটা ফোন এলো। তার এক বন্ধু এসেছে গুলসান ফুয়াং ক্লাবে। কেয়া বলল চল পিউ তকে একটা হাবলার সাথে পরিচয় করাই। পিউ বলল – তুই তো জানিস ছেলে মানুষ আমার একদম পছন্দ না। ওদের প্রেম মানেই হাত ধরা কিস করা। আমার নোংরামি ভাল লাগে না। কেয়া বলল- আচ্ছা চল – ৫ মিনিটের মধ্য চলে আসবো। দু জন মিলে একটা রিক্সা নিল। শুটিং ক্লাবের কাছে আসার একটু আগে একটা ম্যাসেজ আসলো। পিউ দেখ এবার তো বিশ্বাস হল+১০১ নাম্ভার। কেয়া দেখল সত্যি ম্যাসেজ। পড়তে লাগলো পিউ – হ্যালো জবা। পিউ এর শরীরের সব কটা লোম কুপ কাঁটা দিয়ে উঠল। এই নামে কেবল তাকে আকাশ ডাকতো। যে তার ভালবাসা। যে কিছু না বলে হারিয়ে গেছে। কি সুন্দর করে লিখা জবা আমি স্বর্গের পালকি নিয়ে দাড়িয়ে তোমাকে নিতে এসেছি। ম্যাসেজটা পড়া শেষ। একটা গাড়ি খুব জুড়ে ধাক্কা দিল রিক্সা টা কে। কেয়া দূরে ছিটকে পড়লো। পিউ এর উপর দিয়ে চলে গেল গাড়িটা খুব দূরত। মানুষের ভীর লেগে গেল। কেয়ার কিছুই হয় নাই। কেয়া পিউ এর সেল ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে কোন ম্যাসেজ নাই। শুধু দেখে একটা আলোর পালকি তে পিউ কে! কে জানি তুলে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পিউ এর নিথর লাশটা মাটিতে পড়ে আছে।।

sms

 

 

 

 

 

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!