সেলিনা জাহান প্রিয়ার গল্প: ‘অ-মানব’- (২৫ তম পর্ব)

 

‘অ-মানব’- (২৫তম পর্ব)

———————— সেলিনা জাহান প্রিয়া

ট্রাক চালকের শরীরে আবার জ্বর আসতে লাগল । পাগল মানুষটা বেদেনা কে ডেকে বলল তোমার বাবার সাথে আমি একটু বাজারে যাই । আমরা না আসা পর্যন্ত তুমি একটু মাথায় পানি দাও । মুসা মিয়া কে নিয়ে পাগল মানুষ বাজারে যায় । মুসা মিয়া কে বলে এ কি কাজ করেন । মুসা মিয়া বলে টাকা থাকলে আমি ফলের ব্যবসা করতাম কিন্তু টাকা নাই । তাই যখন যে কাজ পাই তাই করি । কিন্তু আমার মেয়ে বেদেনার জন্য অনেক মায়া হয় । মেয়েটাকে রেখে কোথাও যেতে মন চায় না।
আল্লাহ্‌ যদি মেয়েটার একটা ব্যবস্তা করে ।
— পাগল বলল আপনি মেয়ে কে খুব ভাল বাসেন তাই না ।
— হ্যা মেয়ে ছাড়া আমার তো কেউ নাই ।
— আচ্ছা আজ যদি আপনি মারা যান তখন মেয়ের কি হবে ?
— আমি এই চিন্তা টাই সব সময় করি ।
— দেখুন আমার আপনার এই জগতের যে মালিক । সে কোন কিছুই কোন কারন ছাড়া সৃষ্টি করে নাই । তাই আমাদের চিন্তা থাকতে হবে তবে তা স্রষ্টার চেয়ে বেশি হলেই
আপনি ভুল করবেন । আপনার উচিৎ এই মেয়েটাকে কিছু হাতের কাজ শিখনো । আপনি চলে যান আপনার সেই ফলের আরতে । কাজ নেন । মেয়েটাকে নিয়ে যান । তাকেও কোন না কোন কাজ করতে দেন । যদি মনে করেন মেয়ে মানুষ কাজ করলে
আপনার সম্মান নষ্ট হবে। তাহলে আপনি মারা গেলে ও কি নিয়ে এই কঠিন সমাজে বাস করবে । যদিও মেয়েটা কে কেউ বিয়ে করতে চায় কিন্তু মেয়েটাকে কাজ না শিখয়ে বিয়ে দিবেন না। পাগল ডাক্তারের কাছ থেকে কিছু ঔষধ কিনে দিয়ে বলল আমি আর ফিরছি না। এই খানে কিছু টাকা আছে রাখুন । এই গুলো এক পুকুরের মাছ বিক্রি করা টাকা । যদি এই টাকা ব্যবসা ভাল হয় একদিন আমি ফেরত নিতে আসব । মুসা মিয়া বাজার করে বাড়িতে ফেরার পথে পাগলের কথা গুলো মনে মনে চিন্তা করতে লাগলো । ঠিকিই মেয়ে কে কিছু কাজ শিখাতে না পারলে তো সমস্যা ।

ট্রাক চালক সাবুর মাথায় পানি ঢালতে ঢালতে বেদেনা এক সময় সাবুর মাথায় হাত দেয় । মেয়েটার হাত সাবুর মাথায় ছোঁয়া মাত্র সাবু বলে – এত কষ্টে তোমাদের ফেললাম । মেয়েটা খুব শান্ত ভাবে বলে কোন কষ্ট না। কিন্তু রাতের বেলায় ঐ মানুষটা অনেক কষ্ট করেছে । আপনার চিনা জানা না। কিন্তু আমি দেখছি যে আপনার জন্য সে কত বার পানি নিয়ে আপনার মাথায় দিয়েছে । এখন বাবার সাথে বাজারে গেছে ।
মানুষ টা জানি কেমন। আপনি তো বার বার আমাকে দেখছিলেন কিন্তু ঐ মানুষটা একবার ও আমার দিকে তাকায় নাই । আমি এমন মানুষ প্রথম দেখলাম ।
— সাবু বলে ঐ মানুষ কি এই বাড়ির কেউ না।
— না । এই বাড়ির কেউ না।
— আমার মনে হইছিল এই বাড়ির কেউ ।
— না । তবে আমি ভেবেছিলাম যে আপনার হেল্পার । কারন গাড়িটা রাস্তা থেকে আমাদের বাড়ির সামনে কি সুন্দর করে চালিয়ে নিয়ে এসেছে ।
— সাবু বলে তুমি তো আমাকে তোমার কাছে ঋণী করলে মাথায় পানি দিয়ে । তোমার বাবার কাছে তোমার কথা জানলাম । আমিও তোমার মত কিছুটা দুঃখী । আমার একটা মেয়ে আছে নাম নুপুর পাচ বছর বয়স । ওর মা আমার হেল্পারের সাথে
চলে গেছে যখন নুপুরের বয়স তিন বছর । আমার মা নুপুর কে এখন পালতাছে ।
বেদেনা সাবুর কথা শুনে কিছুটা অবাক হইল । বলল- কেমন মা এমন দুধের বাচ্ছা রেখে চলে যায় ।
এর মধ্য সাবুর মা মেয়ে আর ট্রাকের মালিক চলে আসছে । মুসা মিয়া ঔষাধ এনে দেয় । মহাজন ট্রাক নিয়ে যায় । সাবুকে কে কিছু টাকা দেয় । বলে তুমি আস্তে ধীরে জ্বর কমলে আসো ।
নুপুর কে খুব আদর করে বেদেনা গোসল করিয়ে নিজের হাতেই খাওয়ে দেয় । সাবু বলে চাচা ঐ লোকটা কোথায় । মুসা মিয়া বলে উনি চলে গেছে । আমাকে না বলে চলে
গেছে ।
— হা । না বলেই চলে গেল । অনেক ভাল মানুষ ।
— সাবু বলল আল্লার ফেরেস্তা ।
মুসা মিয়ার বাড়ির পাশেই একটা সরকারি পুকুর দুপুরে খাবার শেষ করে বেদেনা আর নুপুর পুকুর পারে বসা এমন সময় সাবু মিয়া আসে এখন আর জ্বর নাই ।
নুপুর বলে আব্বু খালামনি কে আমাদের সাথে নিয়ে চল । সাবু বলে যদি মা তুমি বল
আর তোমার খালা মনি যেতে চায় তাহলে নিয়ে চল ।।

ডাঃ জীবন আর দিলরুবা ওসি সাহেবের সামনে বসা । ডাঃ জীবনের বড় ভাই রেজা তার ছোট ভাই এর জন্য খুবেই দুঃখ প্রকাশ করে বলে – তুমি এতটা নিচে নেমেছ ভাবতেও অবাক লাগে । আমার ও দুই টা মেয়ে আছে । তোমার একটা বোন আছে । এর এই মেয়ে কে তুমি বিয়ের কথা বলে তার জীবন নিয়ে খেলা করছ । একবার কি তুমি তোমার বোন ভাগনী ভাতিজী দের কথা চিন্তা করলা না। ভাগ্য ভাল যে তুমি
থানায় এসেছ । আর এই মেয়েটা তোমাকে বিশ্বাস করেছে তুমি তার বিশ্বাস নিয়ে খেলেছ । ওসি সাহেব আপনি এদের ব্যাপারে কি করে জানলেন । ওসি সাহেব বলে
তেজগাও থানার ওসি আমাকে বিষয়টা ফোনে বলে । আমি তখন ঐ ওসির কাছে তাদের হোটেলের নাম জানি । এবং তাদের পিছনে সোর্স লাগিয়ে তাদের নজরদারিতে রাখি ।
আপনার ছোট ভাই ডাঃ সাহেব হোটেল ছেরে দিবে তা হোটেল ম্যানেজার কে বলে ।
সোর্স আমাদের সংবাদ দেয় যে আপনার ভাই কিলার তারু কে টাকা দেয় । তখন আমাদের সন্দেহ হয় যে মেয়েটাকে মেরে ফেলতে পারে । তাই তেজগাঁ থানার ওসি সাহেব বলে যে ডাঃ যে মেয়েটা কে সাথে নিয়ে হোটেলে উঠেছে সে তার স্ত্রী না। তখন আমরা ঐ হোটেলে যাই । আমাদের এস আই সাহেব তাদের কথায় প্রমান পেয়ে যায় যে তারা মিথ্যা পরিচয় দিয়ে এই হোটেলে উঠেছে । এবং আমরা কিলার তারু কে এরেস্ট করি সে জানায় আপনার ভাই এই মেয়েকে হত্যার পরিকল্পনা করেছে ।
এখন এই মেয়ে যাই বলবে মামলা সেই ভাবে হবে ।
— রেজা বলে ওসি সাব কি করা যায় বলেন ।
— ওসি বলে আপনি মেয়ের সাথে কথা বলেন । প্রেম করা পাপ না কিন্তু নস্টালজিয়া
খারাপ । বাজে পরিকল্পনা খারাপ ।
—- দিলরুবা বলে মানুষ এত খারাপ । আমাকে জানে মেরে ফেলার জন্য মানুষ কে টাকা দেয় । আরে আমি এমন একজন কে বিশ্বাস করলাম । যার জন্য আমি মরে যেতে চাই আর সেই কিনা আমাকে মারার জন্য মাস্তান ভারা করে । দিলরুবা বলে
ওসি সাব একজন মাতাল নিয়ে পঙ্গ মানুষ নিয়ে জীবনে বাচা যায় । কিন্তু লম্পট চরিত্রহীনের সাথে না । রেজা দিলরুবার মাথায় হাত রেখে বলে বোন আমি বড় ভাই হিসাবে তোমার দায়িত্ব নিলাম । তোমার মান সম্মান আজ হতে আমার পরিবারের সবার । তোমাকে আমার ভাইয়ের বউ হিসাবে মেনে নিলাম । ওসি বলে পারিবারিক ভাবে সমাধান হলে কি আর থানা পুলিশ লাগে । তেজগাঁ থানার ওসি এসে বলে ডাঃ জীবন আপনি হয়ত কোন ভাল মায়ের সন্তান । আর এই মেয়ে হয়ত আপনাকে ই শুধু
বিশ্বাস করেছে তাই আজ আপনার সব অন্যায় মাপ করে দিয়েছে । যান রেজা সাহেব
সামনেই কাজি অফিস । বিয়েটা শেষ করেন মিষ্টি নিয়ে আসেন । আজ ঐ পাগলটা কে খুব মিস করছি যে ফোন করে সব ঠিক করে দিল ।
—রেজা জানতে চায় কোন পাগল ।
— ওসি হেসে বলে ভাই যে পাগল আমার বউ এনে দিয়েছিল । আপনি চিনবেন না ।

চলমান————————-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!