এম এম শাহানূর হোসেন এর লেখা- ফুট পথের কান্না
গল্প নয় সত্যি-
ফুট পথের কান্না
এম এম শাহানূর হোসেন
মানুষ আবার বেজন্মা হয় নাকি!
ছিঃ এমন কথা বলতে নেই,ওরাই ক্ষমতার উৎস, সরকারের অতন্ত্র প্রহরী।
মাস্টার দা ( চা পানের দোকানদার) বলল, হয় ভাই হয়, বড় কষ্টে কথাগুলো বলছি।
কোনো রকমে নাম লিখতে পারে সে, তবুও সকলেই তাকে মাস্টারদা বলে ডাকে। চাকরি সূত্রে এখানে আসার পর থেকে সবার সাথে আমি ও মাষ্টারদা বলেই ডাকি। বয়সে আমার চেয়ে ছোট তবুও কেন জানি মাস্টারদা বলতে ভালো লাগে।
অনেকদিন হলো ফুটপাতে চা সিগারেটের দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে, পদ্মার ভাঙ্গনে মাথাগোঁজার আশ্রয়টুকু চলে গেছে কবে, সে কথা সে জানেনা, বাবার মুখে শুনেছে তাদেরও একসময় ভালো অবস্থা ছিল, উপকূলগ্রাসী পদ্মা সব কেড়ে নিয়েছে। বৃদ্ধ মা-বাবা ছেলেমেয়ে স্বামী স্ত্রী মিলে 6 জন মানুষের সংসার তার। চা বিড়ি সিগারেট রুটি কলা বিক্রি করে যেটুকু লাভ হয় তাই দিয়েই তাদের সংসার চলে।
জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছে , এমন করে গালি দিচ্ছ কেন? বলল, ভাই খুব কষ্টে দিনাতিপাত করি , তারপর লাইসেন্সপ্রাপ্ত চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্যে জীবনটা অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। আগ্রহ নিয়ে ওর পাশের বেঞ্চিটাতে বসলাম, বললাম, কি হয়েছে খুলে বলতো। বলল, রোদ, বৃষ্টি, ঝড় তো আছেই সবকিছুর উপরে আছে সিটি কর্পোরেশনের দাবড়, এই নিয়ে আমরা দোকানদারি করি। আসলে আমাদের যাওয়ার জায়গা নেই তাই বাধ্য হয়েই ফুটপাতে পড়ে আছি। কিন্তু লাইসেন্সপ্রাপ্ত বাবুদের মনোরঞ্জন করতে গিয়ে আমরা শেষ, এরচেয়ে সরকার যদি আমাদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট একটা ভাড়া নিত তাহলে আমরা শান্তিতে দোকানদারি করতে পারতাম, সরকারেরও উপকার হত, আমাদের টাকা দিয়ে টুকটাক উন্নয়ন কাজ করতে পারতো। আমি আগ্রহ নিয়ে ওর আরো কাছে ঘেঁষে বসলাম।
বলল, আপনি যেন আবার কাউকে বলবেন না, তাহলে যেটুকু করে খাচ্ছি তাও বন্ধ হয়ে যাবে। আমি বললাম ঠিক আছে, কাউকে বলবো না, নিশ্চিন্তে থাকো। আবার বলতে শুরু করল, প্রতিদিন ডিউটি অফিসার কে ৫০ টাকা করে দিতে হয় সঙ্গে চা সিগারেট ফ্রী, সাপ্তাহিক দিতে হয় ৪০০ টাকা , বড়বাবুকে দিতে হয় মাসিক ৫০০ টাকা, এখন আবার বলে গেল বিট বাবুদের প্রতিদিন ৬০ টাকা করে দিতে হবে। এবার বলেন ভাই এতোটুকু একটা দোকান বিভিন্ন কিস্তিতে এত টাকা চাঁদা দেওয়ার পর বউ-বাচ্চা সংসার সবকিছু নিয়ে আমরা কি করে চলব? আমি কিছুক্ষণ ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের কার্যকারিতা ক্যাঙ্গারুর চার পায়ের মতো। তার পিঠে ভর করেছে শাসন ব্যবস্থা। বাক স্বাধীনতা হরিণের মত খাঁচায় বন্দী। তোমার কথার উত্তরে শুধু এতটুকু বলতে পারি নতুন একটা বিপ্লব প্রয়োজন।