সেলিনা জাহান প্রিয়ার গল্প-চালাকের হটাৎ বিয়ে
চালাকের হটাৎ বিয়ে
———————সেলিনা জাহান প্রিয়া
বিকেল তিনটা বাজে । আসিফের একটু বাড়িতে যাওয়া লাগে কিন্তু বস তাকে ছুটি দিবে কি না সে জানে না। তাই আসিফ বসের রুমে প্রবেশ করে বস কে পা ছুয়ে ছালাম করল । আসিফের বস আসিফ কে আবার খুব পছন্দ করে । কারন আসিফ কাজের ব্যাপারে খুব মনোযোগী । আর উপস্থিত মেধা খুব চমৎ কার ।
আসিফের সালাম করা দেখে বস বলল কি ব্যাপার আসিফ পা ছুয়ে সালাম ।
— স্যার শেষ পর্যন্ত আমার মা আমার জন্য কন্যা পেয়েছে । আমি তো স্যার মায়ের
পছন্দের বাহিরে কোন মেয়ে বিয়ে করব না। আমার মা একটু আগে ফোন
করে বলল আসিফ সব ঠিক হয়েছে তুই আসলেই মেয়ে কে আংটি পরাব ।
— আসিফ খুব ভাল কথা তাহলে কবে যাবে ঠিক করেছ ।
—- স্যার মা তো বলল আগামী কালকের মধ্যে চলে আসতে । আমার মেজ খালা বলল
যে বিকালেই গাড়িতে উঠি । এখন কি করব ভেবে পাচ্ছি না স্যার ।
—- ঠিক আছে আসিফ মায়ের মনে কষ্ট দেয়া ঠিক হবে না। ফোন খোলা রাখবে
যাতে অফিসের কাজে সহযোগিতা করা যায় ।
— জি স্যার । আমি মোবাইল খোলা রাখব । আর স্যার কিছু টাকা লাগবে
— ঠিক আছে অফিস থেকে নিয়ে যাও ।
আসিফ মহা খুশি যাই হউক কম পক্ষে সাত দিন থাকা যাবে । ট্রেনে বেশ হাসি খুশি
ভাবেই উঠেছে । মা কে ফোন করে বলল- মা আমি বাড়িতে আসতেছি ।
আসিফ তার বস কে তার উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে ছুটি নিল । আসলে সে তার বন্ধুর বিয়েতে যাচ্ছে ।
আসিফের মা হটাৎ ছেলে আসবে শুনে বেশ খুশি সে তার মেজ বোন কে বলল আসিফ
বাড়িতে আসবে ।মেজ বোন বলল ভাইতো এইবার তোমার ছেলে কে গলায় দড়ি পড়াব ।
পরের দিন আসিফের বস অফিসের সবাইকে বলল আসিফের মা মেয়ে দেখেছে । মেয়ে
ফাইনাল । আসিফ আংটি পড়িয়ে অফিসে আসবে । আপনারাদের কোন দরকার হলে ফোনে তার সাথে কাজ শেরে নিবেন । আসিফের আংটির পড়াবার কথা শুনে সোনিয়া
বোকার মত স্যারের দিকে চেয়ে বলল – স্যার আপনি সত্য বলছেন । দিলরুবা বলল
স্যার মজা করছেন না তো । রুবি বলল – স্যার আসিফ মেয়ে কে সত্য আংটি পড়াতে গেছে । এটা তো বিশ্বাস হয় না। তিন জন কে বস বলল । আচ্ছা আসিফ কি মিথ্যা কথা বলে । সোনিয়া বলল স্যার মাঝে মাঝে বলে একদিন আমাকে কফি খাওয়াবে বলে তিন ঘণ্টা বসুন্ধার সামনে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল ।
— পরে কি আসিফ আসে নাই ।
— আসছে স্যার কিন্তু সাথে এক মেয়ে । আমার সাথে পরিচয় করিয়ে বলল- আসিফের
গার্ল ফ্রেন্ড । পরে ছয় মাস পর জানলাম মেয়েটা আসিফের বন্ধুর গার্ল ফ্রেন্ড ।
— বস বলল মেয়েটার নাম কি
— পপি স্যার
— ঠিক আছে আসিফ ঠিক বলেছে । পপি ব্যাংক চাকুরী করে তাই না ।
— হ্যা স্যার ঠিক বলেছেন । আপনি কি করে জানেন ।
— আরে মেয়েটা কয় দিন পর পর ফ্রেন্ড বদলায় । তখন আসিফের ছিল তার পর
অসিফের বন্ধুর হয়েছে । এটা কোন সমস্যা না।
— দিলরুবা বলল স্যার খুব মিথ্যা বলে স্যার । একদিন আমাকে মার্কেটে দেখে বলে
দিলরুবা একটা সার্ট পছন্দ কর । আমি পছন্দ করলাম । আমাকে বলল টাকা দিতে
আমি টাকা দিলাম । সাথে সাথে বলে সুন্দর গিফট করার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ ।
— বস বলল , মার্কেটে দেখা হয়েছিল না তুমি ফোন করে যেতে বলেছিলে ।
— স্যার আমিই যেতে বলেছি ।
— আপনি এমন সুন্দর স্মার্ট ছেলে কে মার্কেটে ডেকে নিয়ে যাবেন আর কিছু কিনে
দিবেন না। না এটা ঠিক না। আসিফ ঠিক কাজ করেছে ।
— রুবি বলল স্যার । আসিফ কে বললাম একদিন আমাদের একটা পিক নিক আছে
আসিফ আপনি যাবেন । শুক্র বার শুনে আসিফ রাজি হয়ে গেল । বলল আমাকে
টিকেট নিতে । আমি আসিফের জন্য টিকেট নিলাম ৩ হাজার টাকা দিয়ে । সকালে
ঠিক টাইমে চলে আসলো । আমার কাছ থেকে টিকেট নিল । পিকনিকে আমার এক
বান্ধুবির সাথে পরিচয় হল । আসিফ আমার বান্ধুবির টাকায় ৫ হাজার টাকার
লাকি কোপন কিনে নিল । আমার কাছ থেকে এক হাজার টাকার । ছয় হাজার
টাকা লাকি কোপন দিয়ে সে স্যার তিনটা পুরুস্কার পেল । একটা ল্যাপটপ , একটা
এল সি ডি ৩২ ইঞ্চি টি ভি । আর একটা মোবাইল ফোন । আমারা ভাবলাম সে
আমাদের টাকা দিবে । বা পুরুস্কার আমাদের মধ্যে ভাগ করবে । কিন্তু সে সব
নিয়ে গেল । পিকনিকের টাকা পর্যন্ত দিল না। আমাকে ফোন করে বলে পিকনিকে
নেয়ার জন্য ধন্যবাদ । আমার বান্ধবি আসিফ কে পছন্দ করে । এই কথা আসিফ
কে বললে বলে আমি তো বিবাহিত । আমি অফিসে তার কাগজে দেখি অবিবাহিত
। স্যার আপনিই বলেন এটা কি ঠিক ।
—- বস বলল , আপনার বান্ধুবি কে সে ভালবাসে কোন দিন বলেছে ।
—- না স্যার বলে নাই ।
—- তাহলে আপনার বান্ধবি তাকে এক তরফা ভালবেসেছে । আপনি তাকে পিকনিকের দাওয়াত দিয়েছেন না কি টিকেট বিক্রি করতে চেয়েছেন এটা পরিষ্কার
ছিল না আসিফের নিকট । তাই আসিফ ভেবেছে আপনি তাকে দাওয়াত দিয়েছেন ।
আর লাকি কোপন তার তাই পুরুস্কার তার ।
আপনাদের বোকা বানিয়ে আসিফ খুব মজা পায় । অফিসের একজন বলল স্যার মনে
হয় গত কাল আপনাকে বোকা বানিয়ে চলে গেছে ।
— বস বলল আসিফ যদি আমাকে বোকা বানায় তাতে দুঃখ নাই । তোমাদের মত
চালাক মেয়েদের বোকা বানাতে পারে যে তাকে এই লাইক ।।
আসিফের বন্ধু রেজার বিয়ে । মেজ খালা এসে বলল আসিফ তুমি যে খানে যাবে
আমাকে সাথে নিবে । মেজ খালার কথা না শুনলে আসিফের খবর আছে । তাই রেজার বর যাত্রী তে মেজ খালা কে নিয়ে যেতে বাধ্য হল ।
মেজ খালা কনের বাড়িতে নেমে দেখে এটা তার স্কুল জীবনের বান্ধবি রেবুর বাড়ি ।
দুই বান্ধবি মিলে বেশ আড্ডা জমেছে । মেজ খালার নাম জয়তুন । রেবু আর জয়তুন মিলে খুব আড্ডা হচ্ছে বিয়ে বাড়িতে । আজ রেবুর মেয়ের বিয়ে । মেয়ে দেখতে খুব
সুন্দর । জয়তুন বলল – ইস আগে জানলে এই মেয়ে আমার বোনের ছেলের জন্য
নিতাম । হটাৎ বিয়েতে চেঁচামেচি শুরু হল । পুলিশ নিয়ে এক মেয়ে এসেছে । রেজা নাকি ঐ মেয়ে কে আগে বিয়ে করেছিল । আসিফ দেখল রেজার সেই বান্ধুবি । আসিফ
তাকে চিনে । বন্ধু কে বিয়ে থেকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল । আসিফের মেজ খালা বলল
আসিফ এই বিয়ে করবে , কাজি ডাকুন । আসিফ বলল এটা কেমন কথা খালা । কেমন কথা মানে । তোমার বন্ধু বিবাহিত তার পর ো তোমার মত একজন শিক্ষিত ছেলে কি করে এক প্রতারক কে বর সাজিয়ে নিয়ে আসলে । এখন এই মেয়ের উপযুক্ত
বর তুমি ছাড়া অন্য কেউ নাই । তোমার মাকে খবর দেয়া হয়েছে । সে এখনি চলে আসবে । আসিফ বলল আমি তো আফিস থেকে ছুটি নেই নাই । তা ছাড়া মেয়ে তো দেখি নাই । মেজ খালা বলল – তুমি তো সব সময় বল মায়ের পছন্দ হলেই বিয়ে করবে
ঠিক কিনা বল ?
— হ্যা খালাজি ।
— আসিফের মা কে তার খালত ভাই মটর সাইকেলে নিয়ে আসলো । আসিফ পরে গেল একটা গ্যারা কলে । সে পালাবার জন্য সব বুদ্ধি বের করতে লাগলো । আসিফের মা বলল – আসিফ আমি মেয়ে দেখেছি । তোমার ফোনটা দাও । আসিফের মা ফোনটা নিয়ে আসিফের বস কে ফোন করল ।
—- হ্যালো আপনি কি আসিফের বস বলছেন ।
—– জি বলছি ।
—- বাবা আজ তো আসিফের বিয়ে , সময়ের জন্য আপনাদের দাওয়াত
দিতে পারলাম না। আগামী পরশু বউ ভাত , আপনারা সবাই অফিসের
চলে আসবেন ।
—- জি খালা মনি আমরা চলে আসব । বিয়েটা শেষ করে ফেলেন ।
আসিফ আর যায় কোথায় বিয়ে করতে বাধ্য । সবাই খুব মজা করে আসিফের বিয়ে
করিয়ে বউ নিয়ে বাসায় আসলো ।আসিফ আজ বোকা হয়ে গেল । শেষ পর্যন্ত বন্ধুর পছন্দ করা
মেয়ে কে তার বিয়ে করতে হল । আসিফ মিথ্যা বলে বাড়িতে আসলো আর তাই সত্য হয়ে গেল।
বস সবাই কে বলল আসিফ মানুষ কে বোকা বানাতে বানাতে আজ সে নিজেই বোকা
হয়ে গেল । তোমাদের সবাই কে বলি অতিচালাকের গলায় দড়ি না মাজে মাজে ফাঁস ও লাগে ।।