সেলিনা জাহান প্রিয়ার গল্প-একজন ছায়া মানবের গল্প

 

একজন ছায়া মানবের গল্প

——————————সেলিনা জাহান প্রিয়া

 

আসিফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে দিন চাঞ্জ পেল সেই দিন তার বাবার খুশির শেষ নেই । বাজারের দোকানে বসে ছেলের কথা বলছে আর যে আসছে তাকেই চা খাওয়াচ্ছে ।
আসিফের বাবা একজন কৃষক মানুষ । তার খুব ইচ্ছা তার ছেলে লিখা পড়া করে ভাল কিছু করুক । জমি কিছু বিক্রি করে ছেলে কে টাকা দিয়েছে । ম্যানেজমেন্টের খুব ভাল ছাত্র আসিফ । অল্প দিনেই ফারিয়ার নজর কাটে । যদিও ফারিয়া আই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে না। ফারিয়ার বান্ধবি কেয়া সাথে আসিফের পরিচয় সেই ভাবে ফারিয়ার পরিচয় আসিফের সাথে । চার বছরে তাদের মাঝে এক নিবিড় ভালবাসার বন্ধনে সৃষ্টি হয় ।
আসিফের বাবা ছেলে যখন যা পাড়ে দেয়ার চেষ্টা করে । বাবা বিশ্বাস করে ছেলে একদিন তার জন্য ছায়া হবে ।
ফারিয়া কে পেয়ে আসিফ ধীরে ধীরে গ্রামে যাওয়া এক রকম ছেড়ে দেয় । শেষ বার মায়ের মৃত্যর খবর পেয়ে বাড়িতে আসে । মাত্র দশবার দিন ছিল । আবার গ্রাম ছেড়ে ঢাকা চলে আসে । ফারিয়া বাবা এক কথায় বিয়ে দিতে রাজি হয় ফারিয়া কে যে তার মেয়ে কক্ষনো গ্রামে যাবে না। আসিফ এতটা ভালবেসেছে যে ফারিয়া কে ছাড়া অন্য কিছু চিন্তাও করতে পারছে না। আসিফের বাবার খুব ইচ্ছা ছেলে পাশ করে তারদের উপজেলা সদরে কলেজে পড়াবে । সবাই দেখলে যেন আসিফের বাবা কে বলে প্রফেসারের বাবা । কিন্তু সেই আশায় গুঁড়ে বালি । আসিফ একবার বাড়িতে এসে তার বাবা কে বলল দেখ বাবা আমি লিখা পড়া শিখেছি । আমি আমার ভাল মন্দ বুঝি । আমাকে তুমি শুধু শুধু জ্ঞান দিতে এসো না। আসিফের দুই বোন তার বাবা কে বলে – বাবা ছেলের কথা ভুলে যাও । এই ছেলে তোমার কোন কাজে আসবে না। অসিফের বাবা নীরবে চোখে পানি ফেলে ।
পাশ করার পরপরেই আসিফ একটা ভাল চাকুরী পেয়ে যায় । ফারিয়া কে আর বিয়ে করতে কোন অসুবিধা নাই । মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির চাকুরী । আসিফ কে রাতারাতি আরও বদলে দেয় । আসিফের বাবা জানতে পাড়ে ছেলে তার বিয়ে করেছে ।
আসিফের বাবা সব সময় ছেলের জন্য নামজ পড়ে দোয়া করে । আসিফের স্ত্রী কোন দিন আসিফের বাবা তার পরিবারের লোকজনের খবর নিত না।
তিন বছর পড়ে আসিফের স্ত্রী বলে তার মামা ঢাকা মায়া কানুনে একটা ফ্ল্যাট প্রজেক্ট করছে ঐ খান থেকে কিছুটা কমে ফ্ল্যাট নেয়া যাবে । আসিফ তিন বছরে যে টাকা জমিয়েছিল তা হিসাব করে দেখে প্রায় বিশ লাখের মতো হবে । সেই টাকা ফ্ল্যাটের জন্য জমা দেয় । আসিফ বাড়িতে এসে বাবা কে জমি বিক্রির চাপ দেয় । বাবা ছেলের সুখের কথা চিন্তা করে শেষ পর্যন্ত একটা জমি বিক্রি করে ১৫ লক্ষ টাকা দেয় । তাতে আসিফের দুই বোন মন ক্ষুণ্ণ হয় । বাবা খুব সুখ করে বলে কি রে আসিফ বউ মা কে নিয়ে একবার গ্রামে আয় । দরকার পরলে আরেকটা জমি বেঁচে একটা পাকা ঘর করে দিব । কিন্তু আসিফ কিছুই শুনে না। সে তার নিজের মতই চলে ।
জিবনে মনে করে বাবার বয়স হয়েছে । আর যদি তার বউ আসতে না চায় তাহলে তাঁকে আনা ঠিক হেব না। ফারিয়া কে নিয়ে সে ভাল আছে । আসিফের বাবা সবাই কে বলে ছেলে পছন্দ করে বিয়ে করেছে । শহরে মেয়ে । বাড়ি ঘর ঠিক নাই । তাই ছেলে বউ নিয়ে আসে না। তা ছেলে কে কারো কাছে ছোট করে না। আসিফ অফিস থেকে আরও ১০ লক্ষ টাকা অ্যাডভানস নিয় মায়া কানুনের ফ্ল্যাট টা বউয়ের নামে রেজিস্ট্রি করায় । আসিফ মনে মনে অনেক খুশি । যাই হউক একটা ফ্ল্যাট তো হল পড়ে একটা গাড়ি কিনে নিবে এক দুই বছরের মধ্যে ।
আসিফ অ্যাডভানস টাকা নেয়ার সময় তাড়াহুড়া করে অনেক কাগজে এক অফিসার অনেক সাইন রেখে দেয় । যা অসিফ বুঝতে পাড়ে না।
ঠিক কিছু দিন পড়ে আসিফ অফিসে যায় তার বস তাঁকে ডেকে তার হাতে একটা চিঠি ধরিয়ে দেয় । আসিফ চিঠি পড়ে একদম বোকা হয়ে যায় । কারন আসিফের চাকুরী নাই । আফিসের নামে থানায় জিডি করা হয়েছে । মামলার প্রস্তুতি চলছে । আসিফ তার স্যার কে বিষয় তা বুঝাতে চেষ্টা করে । কিন্তু সব সাক্ষর আসিফের । আসিফ কে এক মাস সময় দেয়া হয় টাকা পরিশোধের । না হয় তাঁকে জেলে যেতে হবে। আসিফ বার বার বলে যে সে এই অপরাধ করে নাই । বস বলে আগে টাকা পরিশোধ করুন । তারপর প্রমান করন । আসিফ ফাইন তার স্ত্রী ফারিয়া কে সব কিছু খুলে বলে ।
ফারিয়া খুব চিন্তায় পড়ে যায় । কারন একবার তার স্বামীর চুরির খাতায় নাম উঠে গেছে সমাজে সে কি করে মুখ দেখাবে । ফারিয়া ফ্ল্যাট তালা দিয়ে সোজা সে তার মায়ের কাছে যায় । ফারিয়ার মা বলে ওকে ফোন করে এখানে আসতে না করে দে । সমাজে কি করে মুখ দেখাই । আর আসিফ এখন ফ্ল্যাট বিক্রি করে সেই টাকা অফিসে জমা দিবে তোর কি কোন ভবিষ্যৎ নাই ? এমন স্বামী রাখার চেয়ে তালাক দিয়ে দে । আসিফ বাসায় আর যেতে পাড়ে না। রাতে রেল ষ্টেশনে বসে থাকে । সকালে ফারিয়া তাঁকে ফোন করে বাসার সামনে আসতেই দারোয়ান একটা ব্যাগ আর একটা খাম তার হাতে দেয় । আসিফ খামটা খুলে দেখে তার স্ত্রী ফারিয়া তাঁকে তালাক দিয়েছে । দারোয়ান আর তাঁকে বাসায় প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।আসিফ যেন চার দিক অন্ধকার দেখতে লাগলো । কি করবে ? যাকে জীবনের চেয়ে বেশি ভালবেসেছে আজ সেই ভালবাসার মানুষটা তাঁকে এমন করে আঘাত করলো । মানসিক ভাবে আসিফ খুব ভেঙে পড়ে আর রাস্তায় এসে করে এক্সিডেন্ট । দান পায়ে খুব ব্যথা পায় । দয়া করে কিছু মানুষ তাঁকে ঢাকা মেডিক্যাল নিয়ে আসে । আজ আসিফের পাশে কেউ নেই । আসিফ তা ফারিয়াকে ফোন করে যে সে ঢাকা মেডিক্যাল কিন্তু ফারিয়া বলে সরি আমি কিছুই করতে পারব না। খুব কষ্ট করে ভাঙা পা নিয়ে হাসপাতালে পড়ে থাকে একমাস । এর মধ্য তার অফিসের মামলায় তাঁকে ভাঙা পা নিয়ে পুলিশ তাঁকে জেলে চালান দেয় । আসিফের পাশে আজ কেউ নাই । চার পাশ হয়ে গেল আসিফ জেলে । সেই জেলে থেকে খবর পায় যে তার স্ত্রী ফারিয়া অন্য এক ছেলে কে বিয়ে করেছে । আসিফ মনে মনে বলে আল্লাহ্‌ আমাকে কেন নেয় না। আমার জিবনে কেউ কি নেই । আসিফের পক্ষে মামলা আর চিকিৎসা চালান খুবেই কষ্টের । আসিফ জেলে বসে বসে কান্না করে ।
এমন সময় একজন বলল আসিফ আপনার জামিন হয়েছে । জান কাপড় আর ফাইল নিয়ে । আসিফ খুব অবাক হয় কে তার জামিন করালো । তার তো তেমন কেউ নেই ।
আর তার বাবা তো কোন দিন আসবে না। ভাঙা পা নিয়ে একটু একটু করে হেঁটে জেলের জাবিনের কাগজে সাক্ষর করে জেল গেইট থেকে বাহির হয় ।
ডান বাম চেয়ে দেখে আসিফ । কে জামিন করালো । হটাৎ চেয়ে দেখে আসিফের বাবা । আসিফ কে জরিয়ে ধরে কান্ন্যা করে বলে কি রে আমি কি মরে গেছি । তোর এত বিপদ আমাকে কেন জানাস নাই । বৃদ্ধা বাবা কে আসিফ কত অপমান করেছে । কত অবহেলা করেছে । আজ সেই বাবাই তাঁকে জামিনে নিতে আসছে । আসিফ বাবা বুকে জরিয়ে কাদতে কাদত বলছে বাবা আমাকে ক্ষমা কর । বাবা আমি ভুল করেছি আমাকে ক্ষমা কর । ছেলের চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে আরে পাগল কান্না করছ কেন ? আমি আছি না। আমার উকিল বলেছে এই মামলায় তোর কোম্পানিকে জেল খাটাবে ।
আরে বেটা তোর আমার মামাত ভাই অনেক বড় উকিল না। তুই তো তাদের সাথে যোগাযোগ রাখস না। শুন বাবা রক্তের লোক জনেই সব চেয়ে আপন । রক্ত থেকে কেউ দূরে থাকতে পাড়ে না।
আসিফ এখন তার বাবার কাছে । মামলায় আসিফ জিতে যায় । কোম্পানি আসিফ কে জরিমানা দিয়ে ক্ষমা চেয়ে নেয় । আসিফ এখন গ্রামের কলেজে চাকুরী করে ।
ফারিয়ার দ্বিতীয় বিয়ে কিছু দিন পড় ভেঙে যায় । ফারিয়ার দ্বিতীয় স্বামী ফারিয়ার ফ্ল্যাট ব্যাংকে বন্ধকি রেখে ঋণ নেয় । সেই ঋণের জন্য ফ্ল্যাট নিলামে উঠে ।
ফারিয়া এখন দ্বিতীয় স্বামীর বিরুদ্দে মামলা চালাতে চালাতে হিমসিম খাচ্ছে ফারিয়া মাঝে মাঝে আসিফের জন্য একা একা কান্যা করে ।
আসিফ এখন খুব ভাল আছে কারন সব কিছুর পড় আসিফ বাড়িতে এসে দেখে তার বাবা তার জন্য অপেক্ষা করছে । ছেলের মন খারাপ দেখলে বলে বাবা অতীত নিয়ে দুঃখ না করে সামনে দেখ …………।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!