সেলিনা জাহান প্রিয়ার গল্প: ভালোবাসার শেষ আবদার (শেষ পর্ব)
পারু মনে মনে বলে এত দিন হয়ে গেল দুই বছরের কথা বলে আজ ছয় বছর । পারু বিয়ের ব্যাপারে মত দিয়ে দেয় । খুব সুন্দর একটা আয়োজনের মধ্যে আলফাজের সাথে পারুর বিয়ে হয়ে যায় । সময় কেটে যায় অনেক বছর । পারু এখন লন্ডন থাকে চাকুরী ছেড়ে দিয়ে স্বামী সাথে চলে আসে কিছু দিন পড় বাবা মাকে নিয়ে আসে লন্ডন । কায়েসের কেউ কোন খবর জানে না। কায়েসের বাবা পরের দুই ছেলের বিয়ে করাই তাদের পছন্দ মতে । মেয়ে আসে বেড়াতে । সময় গড়িয়ে আঠারো বছর । রিয়ার জিবনে কোন স্বামী নিয়ে সুখী হতে পাড়ে নাই । তিনটা বিয়ে হয়েছে কিন্তু সে সুখী না। দেশের মধ্য অনেক
পরিবর্তন হয়েছে । এখন মাঝে মাঝে কায়েসের বাবা ছেলেদের হাতে অপমান হতে হয় । হয়ত এটাই সময় এক সময় বুড়া বাবা মা ছেলে মেয়েদের কথা শুনতে হয় ।
কায়েসের মা মাঝে মাঝে ছেলের কথা মনে করে কান্না করে ।
পারু লন্ডন থেকে আসে প্রতি বছর স্বামীর সাথে এই বছর ও সে আসছে । ঢাকা বিমান বন্দর রেল ষ্টেশনে স্বামী বাচ্চা নিয়ে । ট্রেন আসছে না।এর মধ্যে ট্রেন আসে
ঢাকায় লাগাতার অবরোধ ।ট্রেনে খুব ভীর । অনেক কষ্ট করে তারা ট্রেনে উঠে । রিজারভিসন করা থাকায় তারা তাদের রুমে প্রবেশ করে । তাদের তিনটা সীট । অন্য একটা সীটে চেয়ে দেখে চাপদাড়ি ওয়ালা এক ভদ্রলোক বসা । সেও সিলেটে যাচ্ছে ।
পারু ভাল করে চেয়ে দেখে কায়েস । পারু অবাক হয়ে এত বছর পড়েও চিনে যায় ।
চুপ চাপ কায়েসের দিকে চেয়ে আছে । কায়েস কোন কথা বলছে না। সে তাঁর মতো পত্রিকা পড়ছে । ২৩ বছর মাজ খানে । অবাক হয়ে দেখছে । আলফাজ বউ বাচ্চা ঠিক মতো বসিয়ে একটু আরাম করে বসল । এই প্রথম কায়েস আলফাজের দিকে তাকাল ।
কিছু বলল না । কিন্তু পারুর দিকে একবার ও দেখল না। আলফাজ প্রথমে পরিচিত
হবার জন্য বলল
——হ্যালো আমি আলফাজ ফরম লন্ডন ।
—– কায়েস একটু হেসে বলল আমি ডক্টরর কায়েস ভুইয়া ।
—— ও আপনি ডাক্তার ।
——- না ভাই আমি ডক্টরেট করা মানুষ ।
——- অহ সরি ।
——- তা কোন বিষয়ে ডক্টরেট করলেন । কোথায় থেকে ?
——- সে অনেক লম্বা কথা । চাকুরী করতাম একটা বিদেশী সিমেন্ট কোম্পানি তে ।
আমাকে মাঝে মাঝে কোম্পানির কাজে সুনাম গঞ্জ আসতে হত । আমার কাজের
কোয়ালিটি দেখে কোম্পানি আমাকে ঢাকা থেকে সাউথ আফ্রিকায় পাঠায় ।
সেখানে খুব ভাল ভাবে কাজ করতে থাকি । এক বছরের মাথায় এত বড় সুযোগ
আমিও চ্যালেঞ্জ নিয়ে চলে আসি । দেশে আসব নিয়ত করি । সাউথ আফ্রিকা
থেকে কোম্পানির জাহাজে দেশে আশার জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করি । খুব মজার
ব্যাপার হলো তাঁর রাজি হয়ে যায় । জাহাজ আফিকা থেকে ছারার ১০ দিনের
মাথায় সোমালিয়া জল দুস্য দাঁরা আমারা আক্রান্ত হই । আমাদের ধরে নিয়ে
যায় আফ্রিকায় । সেখানে আমি সহ প্রায় ১৯ জন তাদের হাতে বন্ধি হই ।
কোম্পানি তাদের মার্কেটে বদনাম হবে বলে পুরা বিষয়টা চেপে যায় । আর
গোপনে তাদের সাথে একটা ফয়সালা করার চেষ্টা করে । পাক্কা তিন বছর লাগে
আমাদের এই জামেলা শেষ করতে । আমি খুব অসুস্থ হয়ে যাই । এক তাদের
ভাষা বুঝি না। দুই তাদের খাবার আর আমার খাবার এক না । আমাদের একটা
জঙ্গলে রাখা হয় । জীবনের মায়া একদম ছেড়ে দেই । আমার সাথে দুই জন
মারা যায় । তারা ভারতীয় ।
———– দারুন ঘটনা মিঃ । তাঁর পর । দেশে মানুষ মানে আপনার মা বাবা স্ত্রী ?
———– দেখুন আমার বাবা খুব রাগী মানুষ ছিল । মা খুব ভাল কিন্তু বাবার উপরে
কোন কথা বলত না। আর বিয়ে করতে চেয়ে ছিলাম । কিন্তু করা হল না।
———— অহ সরি তাঁর পর কি হল ?
————- সারে তিন বছর পর আমরা মুক্তি পাই , তখন আমার মানসিক অবস্তাও
ভাল ছিল না। আমরা নিউজিল্যান্ড আসি কোম্পানির মুল অফিসে ।
নিউজিল্যান্ড আসার পর আমাদের সাথের একজন সবার পক্ষ নিয়ে একটা
মামলা করে দেয় । আমার চিকিৎসা করাতে থাকি । এক বছর লেগে যায়
আমার ভাল হতে ।তখন আমি নিউজিল্যান্ড থেকে অস্ট্রেলিয়া চলে যাই ।
আমার কোম্পানির ভাল দিকটা আমি আদালাতে তুলে ধরি । এবং
আদালাতকে আমি বুঝতে সক্ষম হই যে কোম্পানি র কোন ইচ্ছা কৃত
দোষ ছিল না।কোম্পানি আমার কথায় খুব বড় রকমের বেঁচে যায় এবং
আমাকে অস্ট্রেলিয়া তারাই পাঠায় নতুন কাজে । আবার কাজ শুরু করি
দেশে থেকে তখন বিদেশে প্রায় ৭ বছর হয়ে যায় । আমি আমার ভাল
বাসার মানুষের কাছে অনেক চিঠি লিখি কিন্তু সব চিঠি মালিক না থাকায়
ফেরত আসে । বাবা সাথে আর ইচ্ছা করেই যোগাযোগ করি নাই ।
——— এ দেখি খুবেই দুখের কথা ।
এত কথা বলার মাঝে একবার ও পারুর দিকে তাকায় নাই । পত্রিকার দিকে তাকেই কথা গুলো বলছে ।
————- হ্যা দুঃখ হবার কথাই কারন আমি যাকে ভালবাসতাম সেও বাবার মতো
খুব রাগী ছিল । রাগী মানুষদের একটা একটা সমস্যা তারা যা বলে তাই
করে । আমি অস্ট্রেলিয়া থেকে একদিন দেশে আসি । প্রথমে ওদের
বাড়িতে যাই । গিয়ে শুনি ও বিয়ে করেছে । আমি ঢাকা এসে আমার
একাডেমীক কাগজ পত্র তুলে আবার অস্ট্রেলিয়া চলে আসি । আর
অস্ট্রেলিয়াতে পরিবেশর উপর পি এইচ ডি করি । বছর খানেক হল দেশে
এসেছি একটা আন্তর জাতিক অ্যান জি ও এর কান্ট্রি চিপ হয়ে ।
———- পড়ে আর বিয়ে শাদী করেন নাই ।
———- আমি আমার অতীত থেকে বের হতে পাড়ি নাই । সবাই পড়ে না।
যাকে ভাল বাসার অপরাধে যার বাবা এক কাপড়ে তাঁর শিক্ষিত ছেলে
ঘর থেকে বের করে দেয় । যাকে ভালবেসে ঘর থেকে বের হলাম সেও
আমাকে আমার বাবার মত শর্ত দেয় । জীবন কি শর্ত দিয়ে চলে । জীবন
শর্ত দুয়ে চলে না। জীবন চলে বিশ্বাসে ।
পারু কালো চশমার পড়ে মাথায় কাপড় দিয়ে চুপ করে চোখের পানি মুছতে থাকে । পারুর মেয়ে বলে আম্ম তুমি কান্না করছ কেন ? পারু কোন কথা বলে না। আলফাজ
পরিচয় করিয়ে দিতে চাইলে কায়েস বলে আমি আপনার স্ত্রী কে চিনি । আমাদের এলাকার মেয়ে তাঁর নাম পারুল । আজ আর পারু বলে না। তিনি আমাকে চেনার
কথা না। কারন এলাকার মেয়েরা তো সবাইকে চিনে না।আলফাজ অবাক হয়ে
বলে আপনি চিনেন আমার মিসেস কে ? কায়েস বলে খুব ভাল করে চিনি । আপনাদের
আমি বিমান বন্দর ষ্টেশনে প্রথম দেখেছি । পড়ে কাকতালীয় ভাবে একেই কক্ষে ।
মানুষ জীবন টাই খুব নাটকীয় । আমি আমার এলাকার মানুষের কাছ থেকে যত দূরে
থাকতে চাই ততই তাদের সামনে চলে আসি ।
আলফাজ বলে আপনার কথা শুনে আমার স্ত্রী কান্না করছে । আসলে আমার স্ত্রীর সাথে
আমার খুন ভাল সম্পর্ক । সেও এক ছেলে কে ভালবাসত । কিন্তু সেই ছেলের বাবা তাঁকে চাকুরী নিয়ে দেয় । আমার সাথে ঐ ছেলের বাবা বিয়ে দিয়ে দেয় । ঐ ছেলের
বাড়ি অবশ্য আমার স্ত্রীর এলাকায় না অন্য এলাকায় । তবে ঐ ছেলের বাবা মা তাদের
জিবনে ভুল বুঝতে পেরেছে কিন্তু ছেলে মনে মনে হয় বেঁচে নাই । থাকলে এত দিনে বাপ মাকে দিখতে আসতো । ঐ ছেলের মা আর বাবা প্রতিদিন এই আশা নিয়ে হয়ত বেঁচে আছে । কায়েস কোন কথা বলে না।
——- আলফাজ বলে আপনার বাবা মায়ের সাথে কি কথা হয় ??
——– কায়েস বলে এবার হবে মনে দেখা হবে ।
পারু চোখ থেকে খুলে । চোখের পানি নিজ হাতে মুচ্ছে । আর বলে দেখা হওয়া উচিৎ
হয়ত আপনার আর আমার ভাগ্য একেই কিছু লিখন একেই রকম , তবু চাই আপনি
তাদের সাথে দেখা করেন । আমি জানি অপেক্ষা কত কষ্টের । হয়ত আপনার পিতা মাতা আপনার জন্য আমার সেই মানুষটার মত অপেক্ষা করছে । আমি জানি আমার সেই মানুষ টা আর আসবে না । কিন্তু আপনি আপনার পিতা মাতার কাছে যাবেন এটাই আমার মিনতি ।।
—— কায়েস বলে আপনার ভালবাসার মানুষটির নাম জানা হল না।
কায়েস মাঝে মধ্যে পারু কে শতরূপা ডাকতো । আজ সে ভাবেই বলল ওর নাম শত রূপা তবে আমার কাছে সে এখন শুধুই কল্পনা ।
পারু কোন দিন তাঁর স্বামী কে বলে নাই যে কায়েস তাঁকে শত রূপা ডাকতো ।
ভৈরব রেল ষ্টেশনে আসতেই কায়েস বলল আমার একটু কাজ আছে আমি নামলাম ।
কায়েস নেমে যায় । পারু চুপ হয়ে বসে থাকে । আলফাজ বলে মানুষটা অনেক ভাল ।
তোমার বাড়ি কটিয়াদি আর দেখ তোমার সাথে যার বিয়ের কথা ছিল তাঁর বাড়ি
নরসিংদী মনোহরদী দুই জন দুই জেলার মানুষ কিন্তু গল্পটা একই রকম । পারু বলল
মানুষের জীবনের সাথে মানুষের কত মিল । চেহারার সাথে চেহারার কত মিল ।
কায়েস পারুর শেষ মিনতি টা রেখেছে । পারু বাড়িতে পৌঁছে অপেক্ষায় থাকে আলফাজ কখন বাহিরে যাবে । আলফাজ বাহিরে যেতেই ফোন করে । কায়েসের মাকে
পারুর বিয়ের দিন থেকে মা ডাকে । হ্যালো মা আমি পারু বলছি । কায়েসের মা বলে
হ্যা পারু আমি শুনছে । আমার কায়েস তোমার মিনতি রেখেছে । আল্লাহ্ তোমাকে সুখী করুক মা । আমার ছেলে আমার বুকে এসেছে ।
কায়েস কে কায়েসের বাবা বুকে জরিয়ে ধরে কাদতে থাকে । কায়েসের বাবার সাদা দাড়ি তাঁর চোখের পানিতে ভিজতে থাকে ।
কায়েসের মা মাঝে মাঝে ছেলের কথা মনে করে কান্না করে ।
পারু লন্ডন থেকে আসে প্রতি বছর স্বামীর সাথে এই বছর ও সে আসছে । ঢাকা বিমান বন্দর রেল ষ্টেশনে স্বামী বাচ্চা নিয়ে । ট্রেন আসছে না।এর মধ্যে ট্রেন আসে
ঢাকায় লাগাতার অবরোধ ।ট্রেনে খুব ভীর । অনেক কষ্ট করে তারা ট্রেনে উঠে । রিজারভিসন করা থাকায় তারা তাদের রুমে প্রবেশ করে । তাদের তিনটা সীট । অন্য একটা সীটে চেয়ে দেখে চাপদাড়ি ওয়ালা এক ভদ্রলোক বসা । সেও সিলেটে যাচ্ছে ।
পারু ভাল করে চেয়ে দেখে কায়েস । পারু অবাক হয়ে এত বছর পড়েও চিনে যায় ।
চুপ চাপ কায়েসের দিকে চেয়ে আছে । কায়েস কোন কথা বলছে না। সে তাঁর মতো পত্রিকা পড়ছে । ২৩ বছর মাজ খানে । অবাক হয়ে দেখছে । আলফাজ বউ বাচ্চা ঠিক মতো বসিয়ে একটু আরাম করে বসল । এই প্রথম কায়েস আলফাজের দিকে তাকাল ।
কিছু বলল না । কিন্তু পারুর দিকে একবার ও দেখল না। আলফাজ প্রথমে পরিচিত
হবার জন্য বলল
——হ্যালো আমি আলফাজ ফরম লন্ডন ।
—– কায়েস একটু হেসে বলল আমি ডক্টরর কায়েস ভুইয়া ।
—— ও আপনি ডাক্তার ।
——- না ভাই আমি ডক্টরেট করা মানুষ ।
——- অহ সরি ।
——- তা কোন বিষয়ে ডক্টরেট করলেন । কোথায় থেকে ?
——- সে অনেক লম্বা কথা । চাকুরী করতাম একটা বিদেশী সিমেন্ট কোম্পানি তে ।
আমাকে মাঝে মাঝে কোম্পানির কাজে সুনাম গঞ্জ আসতে হত । আমার কাজের
কোয়ালিটি দেখে কোম্পানি আমাকে ঢাকা থেকে সাউথ আফ্রিকায় পাঠায় ।
সেখানে খুব ভাল ভাবে কাজ করতে থাকি । এক বছরের মাথায় এত বড় সুযোগ
আমিও চ্যালেঞ্জ নিয়ে চলে আসি । দেশে আসব নিয়ত করি । সাউথ আফ্রিকা
থেকে কোম্পানির জাহাজে দেশে আশার জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করি । খুব মজার
ব্যাপার হলো তাঁর রাজি হয়ে যায় । জাহাজ আফিকা থেকে ছারার ১০ দিনের
মাথায় সোমালিয়া জল দুস্য দাঁরা আমারা আক্রান্ত হই । আমাদের ধরে নিয়ে
যায় আফ্রিকায় । সেখানে আমি সহ প্রায় ১৯ জন তাদের হাতে বন্ধি হই ।
কোম্পানি তাদের মার্কেটে বদনাম হবে বলে পুরা বিষয়টা চেপে যায় । আর
গোপনে তাদের সাথে একটা ফয়সালা করার চেষ্টা করে । পাক্কা তিন বছর লাগে
আমাদের এই জামেলা শেষ করতে । আমি খুব অসুস্থ হয়ে যাই । এক তাদের
ভাষা বুঝি না। দুই তাদের খাবার আর আমার খাবার এক না । আমাদের একটা
জঙ্গলে রাখা হয় । জীবনের মায়া একদম ছেড়ে দেই । আমার সাথে দুই জন
মারা যায় । তারা ভারতীয় ।
———– দারুন ঘটনা মিঃ । তাঁর পর । দেশে মানুষ মানে আপনার মা বাবা স্ত্রী ?
———– দেখুন আমার বাবা খুব রাগী মানুষ ছিল । মা খুব ভাল কিন্তু বাবার উপরে
কোন কথা বলত না। আর বিয়ে করতে চেয়ে ছিলাম । কিন্তু করা হল না।
———— অহ সরি তাঁর পর কি হল ?
————- সারে তিন বছর পর আমরা মুক্তি পাই , তখন আমার মানসিক অবস্তাও
ভাল ছিল না। আমরা নিউজিল্যান্ড আসি কোম্পানির মুল অফিসে ।
নিউজিল্যান্ড আসার পর আমাদের সাথের একজন সবার পক্ষ নিয়ে একটা
মামলা করে দেয় । আমার চিকিৎসা করাতে থাকি । এক বছর লেগে যায়
আমার ভাল হতে ।তখন আমি নিউজিল্যান্ড থেকে অস্ট্রেলিয়া চলে যাই ।
আমার কোম্পানির ভাল দিকটা আমি আদালাতে তুলে ধরি । এবং
আদালাতকে আমি বুঝতে সক্ষম হই যে কোম্পানি র কোন ইচ্ছা কৃত
দোষ ছিল না।কোম্পানি আমার কথায় খুব বড় রকমের বেঁচে যায় এবং
আমাকে অস্ট্রেলিয়া তারাই পাঠায় নতুন কাজে । আবার কাজ শুরু করি
দেশে থেকে তখন বিদেশে প্রায় ৭ বছর হয়ে যায় । আমি আমার ভাল
বাসার মানুষের কাছে অনেক চিঠি লিখি কিন্তু সব চিঠি মালিক না থাকায়
ফেরত আসে । বাবা সাথে আর ইচ্ছা করেই যোগাযোগ করি নাই ।
——— এ দেখি খুবেই দুখের কথা ।
এত কথা বলার মাঝে একবার ও পারুর দিকে তাকায় নাই । পত্রিকার দিকে তাকেই কথা গুলো বলছে ।
————- হ্যা দুঃখ হবার কথাই কারন আমি যাকে ভালবাসতাম সেও বাবার মতো
খুব রাগী ছিল । রাগী মানুষদের একটা একটা সমস্যা তারা যা বলে তাই
করে । আমি অস্ট্রেলিয়া থেকে একদিন দেশে আসি । প্রথমে ওদের
বাড়িতে যাই । গিয়ে শুনি ও বিয়ে করেছে । আমি ঢাকা এসে আমার
একাডেমীক কাগজ পত্র তুলে আবার অস্ট্রেলিয়া চলে আসি । আর
অস্ট্রেলিয়াতে পরিবেশর উপর পি এইচ ডি করি । বছর খানেক হল দেশে
এসেছি একটা আন্তর জাতিক অ্যান জি ও এর কান্ট্রি চিপ হয়ে ।
———- পড়ে আর বিয়ে শাদী করেন নাই ।
———- আমি আমার অতীত থেকে বের হতে পাড়ি নাই । সবাই পড়ে না।
যাকে ভাল বাসার অপরাধে যার বাবা এক কাপড়ে তাঁর শিক্ষিত ছেলে
ঘর থেকে বের করে দেয় । যাকে ভালবেসে ঘর থেকে বের হলাম সেও
আমাকে আমার বাবার মত শর্ত দেয় । জীবন কি শর্ত দিয়ে চলে । জীবন
শর্ত দুয়ে চলে না। জীবন চলে বিশ্বাসে ।
পারু কালো চশমার পড়ে মাথায় কাপড় দিয়ে চুপ করে চোখের পানি মুছতে থাকে । পারুর মেয়ে বলে আম্ম তুমি কান্না করছ কেন ? পারু কোন কথা বলে না। আলফাজ
পরিচয় করিয়ে দিতে চাইলে কায়েস বলে আমি আপনার স্ত্রী কে চিনি । আমাদের এলাকার মেয়ে তাঁর নাম পারুল । আজ আর পারু বলে না। তিনি আমাকে চেনার
কথা না। কারন এলাকার মেয়েরা তো সবাইকে চিনে না।আলফাজ অবাক হয়ে
বলে আপনি চিনেন আমার মিসেস কে ? কায়েস বলে খুব ভাল করে চিনি । আপনাদের
আমি বিমান বন্দর ষ্টেশনে প্রথম দেখেছি । পড়ে কাকতালীয় ভাবে একেই কক্ষে ।
মানুষ জীবন টাই খুব নাটকীয় । আমি আমার এলাকার মানুষের কাছ থেকে যত দূরে
থাকতে চাই ততই তাদের সামনে চলে আসি ।
আলফাজ বলে আপনার কথা শুনে আমার স্ত্রী কান্না করছে । আসলে আমার স্ত্রীর সাথে
আমার খুন ভাল সম্পর্ক । সেও এক ছেলে কে ভালবাসত । কিন্তু সেই ছেলের বাবা তাঁকে চাকুরী নিয়ে দেয় । আমার সাথে ঐ ছেলের বাবা বিয়ে দিয়ে দেয় । ঐ ছেলের
বাড়ি অবশ্য আমার স্ত্রীর এলাকায় না অন্য এলাকায় । তবে ঐ ছেলের বাবা মা তাদের
জিবনে ভুল বুঝতে পেরেছে কিন্তু ছেলে মনে মনে হয় বেঁচে নাই । থাকলে এত দিনে বাপ মাকে দিখতে আসতো । ঐ ছেলের মা আর বাবা প্রতিদিন এই আশা নিয়ে হয়ত বেঁচে আছে । কায়েস কোন কথা বলে না।
——- আলফাজ বলে আপনার বাবা মায়ের সাথে কি কথা হয় ??
——– কায়েস বলে এবার হবে মনে দেখা হবে ।
পারু চোখ থেকে খুলে । চোখের পানি নিজ হাতে মুচ্ছে । আর বলে দেখা হওয়া উচিৎ
হয়ত আপনার আর আমার ভাগ্য একেই কিছু লিখন একেই রকম , তবু চাই আপনি
তাদের সাথে দেখা করেন । আমি জানি অপেক্ষা কত কষ্টের । হয়ত আপনার পিতা মাতা আপনার জন্য আমার সেই মানুষটার মত অপেক্ষা করছে । আমি জানি আমার সেই মানুষ টা আর আসবে না । কিন্তু আপনি আপনার পিতা মাতার কাছে যাবেন এটাই আমার মিনতি ।।
—— কায়েস বলে আপনার ভালবাসার মানুষটির নাম জানা হল না।
কায়েস মাঝে মধ্যে পারু কে শতরূপা ডাকতো । আজ সে ভাবেই বলল ওর নাম শত রূপা তবে আমার কাছে সে এখন শুধুই কল্পনা ।
পারু কোন দিন তাঁর স্বামী কে বলে নাই যে কায়েস তাঁকে শত রূপা ডাকতো ।
ভৈরব রেল ষ্টেশনে আসতেই কায়েস বলল আমার একটু কাজ আছে আমি নামলাম ।
কায়েস নেমে যায় । পারু চুপ হয়ে বসে থাকে । আলফাজ বলে মানুষটা অনেক ভাল ।
তোমার বাড়ি কটিয়াদি আর দেখ তোমার সাথে যার বিয়ের কথা ছিল তাঁর বাড়ি
নরসিংদী মনোহরদী দুই জন দুই জেলার মানুষ কিন্তু গল্পটা একই রকম । পারু বলল
মানুষের জীবনের সাথে মানুষের কত মিল । চেহারার সাথে চেহারার কত মিল ।
কায়েস পারুর শেষ মিনতি টা রেখেছে । পারু বাড়িতে পৌঁছে অপেক্ষায় থাকে আলফাজ কখন বাহিরে যাবে । আলফাজ বাহিরে যেতেই ফোন করে । কায়েসের মাকে
পারুর বিয়ের দিন থেকে মা ডাকে । হ্যালো মা আমি পারু বলছি । কায়েসের মা বলে
হ্যা পারু আমি শুনছে । আমার কায়েস তোমার মিনতি রেখেছে । আল্লাহ্ তোমাকে সুখী করুক মা । আমার ছেলে আমার বুকে এসেছে ।
কায়েস কে কায়েসের বাবা বুকে জরিয়ে ধরে কাদতে থাকে । কায়েসের বাবার সাদা দাড়ি তাঁর চোখের পানিতে ভিজতে থাকে ।