অশ্বগন্ধা গুঁড়া (Ashwagandha Powder)
অশ্বগন্ধা বা উইন্টারচেরী (Winter cherry) আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের নয়নমণি। ৩০০০বছর ধরে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঔষধি ভেষজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর বৈজ্ঞানিক নাম ওইদেনিয়া সোমনিফেরা (Withania Somnifera)। অসাধারণ কার্যকারিতার জন্য অশ্বগন্ধাকে ইন্ডিয়ান জিনসেং হিসেবেও অভিহিত করা হয়। অশ্বগন্ধা ছোট এক ধরনের শাখাবহুল গুল্ম, যাতে হলুদ রঙের ফুল হয়, এতে ছোট ছোট মটরের মতো ফল হয়।
অশ্বগন্ধার গুড়া নিয়মিত খেলে শারীরিকভাবে অশ্ব বা ঘোড়ার মতো শক্তি বৃদ্ধি হয়। অশ্বগন্ধা মূলের মধ্যে থেকে অশ্বের অর্থাৎ ঘোড়ার মতন এক রকমের গন্ধ বের হয়। শুধু এটাই না এই অশ্বগন্ধা ঘোড়ার মত বল সম্পন্ন। অশ্বগন্ধা পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
অশ্বগন্ধা ভারত, পাকিস্তান, স্পেন, আফ্রিকা, মধ্য প্রাচ্য, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলি ও বাংলাদেশেও এখন পাওয়া যায়। প্রাচীনকাল থেকেই এই গাছের পাতা, ফল, বীজ ও শিকড় আয়ুর্বেদিক ঔষুধ তৈরী করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত অশ্বগন্ধার নির্যাসে ৩৫ ধরণের ফাইটোকেমিক্যাল উপাদান আছে বলে জানা গেছে। অশ্বগন্ধায় আছে- অ্যালকালয়েড, স্ট্রেরয়ডাল ল্যাক্টনস, ট্যানিনস, স্যাপোনিনস এই সব উপাদান যা ক্যান্সার, স্ট্রেস, বার্ধক্যজনিত প্রভাব, যৌনক্ষমতা সংক্রান্ত ও প্রদাহ জনিত সমস্যার বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। এছাড়া উইথানন, উইথাফেরিন এ, ডি, ই , উইথাননোলাইড হল কিছু বায়োঅ্যাক্টিভ পর্দাথ যা অশ্বগন্ধায় থাকে।
অশ্বগন্ধার সব ধরণের গুণের কারণ হল এতে উপস্থিত একধরনের ফাইটোকেমিক্যাল উপাদান। গবেষণায় জানা গেছে সঠিক পরিমাণে অশ্বগন্ধা ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও কার্যকরী।
অশ্বগন্ধা গুঁড়া অশ্বগন্ধা পুরুষের শুক্রাণূ বৃদ্ধি ঘটায়। মহিলাদের হরমোন নিঃসরনে সমতা আনে এবং অতিরিক্ত রজঃস্রাবের উপসর্গ কমায়। অকালে চুল পাকা এবং চুল পড়া বন্ধ হয়। ত্বককে উজ্জ্বল ও দাগহীন করে। অশ্বগন্ধা মন শান্ত করে, যা শরীরের কর্টিসলের মাত্রা কমায়।
হালের বহু গবেষণাই বলছে, নানা কারণে পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা কমছে। তার মধ্যে যেমন রয়েছে মানসিক চাপ, তেমনই বিশ্রামের অভাব। এ ছাড়াও অতিরিক্ত ধূমপান এবং মদ্যপানের অভ্যাস দ্রুত হারে কমতে থাকে শুক্রাণুর উৎপাদন। ফলে কমে প্রজনন ক্ষমতা। তবে ডায়েটে কিছু খাবার বেশি মাত্রায় রাখতে পারলেই পুরুষরা বন্ধ্যত্বের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
সম্প্রতি ‘কফি উইথ কর্ণ’-র আড্ডায় যৌনজীবন ভাল করার দাওয়াই হিসাবে অভিনেতা ‘বরুণ ধবন’ এর মুখে শোনা গিয়েছিল অশ্বগন্ধার নাম।
অশ্বগন্ধার কার্যকারিতা:
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়: অশ্বগন্ধা একটি নামকরা অ্যাডাপ্টোজেন। দেখা গিয়েছে, এটি মানসিক চাপ, অবসাদ এবং দুশ্চিন্তা কমায় এবং মানসিক চাপ সংক্রান্ত সমস্যা যেমন উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়বিটিস প্রতিরোধ করে।
ডায়বিটিস নিয়ন্ত্রণ করে: গবেষণাপত্রে প্রকাশ পেয়েছে, অশ্বগন্ধা উন্নতমানের ডায়বিটিস প্রতিরোধী (অ্যান্টি-ডায়বিটিস)।এটি স্বাস্থ্যবান এবং ডায়বিটিস আক্রান্তদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: গবেষণায় প্রকাশিত যে অশ্বগন্ধা হচ্ছে অসাধারণ ইমিউনোস্টিমুলেটর (রোগ প্রতিরোধী)। সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরের রোগ প্রতিরোধী শক্তি বাড়িয়ে তোলে।
নিদ্রা গাঢ় করে, চাপ এবং দুশ্চিন্তা কমিয়ে মাথা ঠান্ডা করতে সাহায্য করে বলে ঘুম খুব ভাল হয়।
অশ্বগন্ধা পুরুষ এবং নারীদের যৌনক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, পুরুষদের শুক্রাণু বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
হৃদযন্ত্রের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: অশ্বগন্ধা হৃদয়ের পেশি শক্তিশালী করে হৃদযন্ত্রের সামগ্রিক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, যার ফলে রক্ত জমাট হয় না এবং হার্ট এর ওপর চাপ কমে। হৃদরোগের অন্যতম ঝুঁকি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।
ত্বকের জন্য উপকারী, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সমৃদ্ধ উৎস হওয়ার দরুণ অশ্বগন্ধা একটি প্রকৃত বার্ধক্য প্রতিরোধী ভেষজ। বয়ঃবৃদ্ধির প্রাথমিক উপসর্গ রোধ করে এবং শুষ্ক ত্বক এবং কেরাটোসিস-এর বিরুদ্ধে শরীর রক্ষা করে।
চমৎকার কেশ টনিক: অশ্বগন্ধা চুলে পুষ্টি জোগায়, যা চুল পড়া কমতে সাহায্য করে এবং চুল দীর্ঘ এবং উজ্জ্বল করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হওয়ার কারণে অকালে চুলে পাক ধরা এবং চুল পড়া বন্ধ হয়।
এটি মহিলাদের ঋতুচক্র চলাকালীন সময় চমৎকার কাজ দেয়। এটি চাপ, দুশ্চিন্তা কমায়, হরমোন নির্যাসে সমতা নিয়ে আসে, রজঃস্রাবের উপসর্গ হ্রাস করে।
পুরুষদের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, অশ্বগন্ধা পুরুষদের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি শুধুমাত্র শুক্রাণু সংখ্যা এবং টেস্টোস্টেরোন বৃদ্ধি করে না, এটি যৌনক্ষমতা এবং ক্রিয়ার উন্নতি ঘটায়।
ন্যাচারালস অশ্বগন্ধার বিশেষত্ব:
ভার্জিন গ্রেডের অশ্বগন্ধাকে বাছাই ও প্রক্রিয়াজাত করে ন্যাচারলস অশ্বগন্ধা পাউডার তৈরি করা হয়। শতভাগ প্রাকৃতিক হওয়ায় ন্যাচারালস অশ্বগন্ধা বাজারের সাধারণ অশগন্ধা থেকে অধিক কার্যকর ও স্বাস্থ্যসম্মত। ন্যাচারালস এর কোন পণ্যেই ক্ষতিকর ও অপ্রয়োজনীয় উপদানের মিশ্রণ থাকে না।
ন্যাচারালস অশ্বগন্ধার উপকারিতা:
১। অশ্বগন্ধ হতাশা, দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ কমায়।
২। শারীরিক শক্তি, স্টামিনা এবং এনডিউরেন্স বাড়ায়। মাসল বৃদ্ধি করে তাই বডি বিল্ডারদের জন্য বেস্ট চয়েজ।
৩। শিশুদের ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট ও উচ্চতা বৃদ্ধিতে বিশেষ কার্যকর।
৪। সুগার লেভেল ব্যালেন্স করে ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ করে।
৫। ইনসোমনিয়া বা ঘুমের সমস্যার প্রাকৃতিক সমাধান অশ্বগন্ধা।
৬। নারী ও পুরুষের যৌন ও প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৭। ইমিউনিটি বুস্ট করে ও তারুণ্য ধরে রাখে।
৮। মন শান্ত করে, যা শরীরের কর্টিসলের মাত্রা কমায়।
৯। মানসিক চাপ, অবসাদ ও দুশ্চিন্তা কমায়।
১০। উচ্চ-রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে।
১১। হার্টের পেশি শক্তিশালী করে হৃদযন্ত্রের সামগ্রিক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
১২। অশ্বগন্ধায় Tropen alkaloid বিদ্যমান যা বেদনানাশক ও ক্ষারক রোধক হিসেবে কাজ করে।
১৩। রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করে।
১৪। কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড কমায়।
১৫। মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে।
১৬। ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি করে।
১৭। মুখের ব্রন কমায় ও দাগ দূর করতে সাহা্য্য করে।
১৮। ত্বক ও চুলের যত্নে ব্যবহার করা।
১৯। মানসিক চাপের উপসর্গ বা দুশ্চিন্তার উপসর্গ কমায়।
২০। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে।
২১। ঠান্ডা কাশি নিরাময়ে ভীষণ কার্যকরী।
২২। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
২৩। ইনসুলিন এর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
২৪। বাত ব্যথা, গাটের ব্যাথা কমায়।
২৫। কোলেস্টেরল মাত্রাটাকে অনেকখানি কমাতে সাহায্য করে। শুধু কোলেস্টেরল না তার সঙ্গে সঙ্গে টি.জি. র মাত্রাটা কেও কমাতে সাহায্য করে।
অশ্বগন্ধার খাওয়ার নিয়ম:
অশ্বগন্ধা গুড়া খাওয়ার সাধারণ নিয়ম হলো- রাতে ঘুমানোর পূর্বে ১ চা চামচ শ্বগন্ধার গুঁড়া ১ কাপ কুসুম গরম পানি, চা, দুধ এর সাথে একটু মধু মিশিয়ে দিনে দু’বার সেবনে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়। ডায়াবেটিস বা অন্যান্য সমস্যা থাকলে শুধু পানির সাথে মিশিয়ে দিনে দু’বার সেবন করা যায়।
এছাড়াও, বাজারে ট্যাবলেট পাওয়া যায়, অনেক সময় এর মূল টাও পাওয়া যায়। ট্যাবলেট হলে রাতের বেলায় একটা করে খেতে হবে। এছাড়াও অশ্বগন্ধার মূল চায়ের মতো করে জলের মধ্যে ফুটিয়ে ছেঁকে নিয়ে খাওয়া যায়।
সতর্কতাঃ গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মায়েদের সেবন করা উচিত নয়।