সেলিনা জাহান প্রিয়ার বিশেষ গল্প: ‘অ-মানব ও একটি ছোট লাল জুতা’
অ-মানব ও একটি ছোট লাল জুতা
——————————————– সেলিনা জাহান প্রিয়া
তানিয়া ১৬ বছরের পরেছে । কিন্তু সে তার বাবা কে কোন দিন দেখে নাই । তানিয়ার মা সরকারি ব্যাংক এ চাকুরী করে । ছোট বেলা থেকে যাকে তানিয়া বাবা ডাকে । তানিয়া ক্লাস সেভেন পড়ার সময় জেনেছে যে এটা তার মায়ের দ্বিতীয় স্বামী । আর তিনি তানিয়া সেই হিসাবে তাকে বাবা ডাকে তার নাম আলতাফ তালুকদার । সে তার প্রথম বউ কে তালাক দিয়ে তানিয়ার মা জমিলা খাতুন কে বিয়ে করেছে । মায়ের সাথে এই লোকের ব্যাংকে এ পরিচয় । তানিয়ার বাবা নাকি খুব এক জন সাধারন মানুষ ছিল । ছোট ভাইবোন দের মানুষ করতে যেয়ে সময় মত বিয়ে করতে পারে নাই । একটু বয়স করে বিয়ে করে তানিয়ার বাবা তাই তানিয়ার মায়ের একদম পছন্দ ছিল না তানিয়ার বাবা কে ।
বিয়ের পর তানিয়ার বাবা জানতে পারে জামিলা আই এ পাস তখন সে বউ কে বি এ ভর্তি করায় । জামিলা খাতুন বি এ পাস করার পর তানিয়া বাবা তাকে ব্যাংক এ নিয়োগ পরীক্ষায় দেয়ায় । অনেক জায়গায় তদবির করিয়ে এক নেতা কে বেশ মোটা অংকের সালামি দিয়ে জামিলা খাতুনের চাকুরী ঠিক করে দেয় । জামিলা খাতুন চাকুরী পাওয়ার পর একটু বদলে যায় কিন্তু তখন একমাত্র কন্যা তানিয়ার জন্ম হয় । জামিলা খাতুন প্রথমে খুব ভালই ছিল কিন্তু সরকারি চাকুরী পাওয়ার পর আস্তে আস্তে স্বামীর সাথে মানসিক পার্থক্য হতে থাকে । এর মধ্য জামিলার খাতুনের সাথে পরিচয় হয় আলতাফ তালুকদারের । পরিচয় টা ধীরে ধীরে প্রেমে রুপ নেয় ।
আলতাফ দেখতে সুন্দর আর জামিলা সাথে মাঝে মধ্য বাহিরে ঘুরতে গেলে সবাই স্বামী ই মনে করে । কিন্তু তানিয়ার বাবার সাথে তাকে মানায় না বয়সের জন্য । আসলে এটা তানিয়ার মায়ের একটা মানসিক সমস্যা নিজেকে খুব বড় মনে করা ছাড়া কিছুই না । জামিলা খাতুনের তানিয়া বাবা সাথে বিয়ের পড়ে যখন তানিয়ার জন্ম হয় ঠিক তার ৭ দিন পর তানিয়া বাবার তালতলার তিন কাঠার বারিটা তানিয়ার মাকে রেজিস্ট্রি করে দিয়ে দেয় । আগার গাঁ বাজারে একটা কাপড়ের দোকান ছিল তানিয়ার বাবার । তবে তা খুব বড় না। তানিয়ার মা জামিলা খাতুনের এখন দুই ছেলে আর তানিয়া । কিন্ত তানিয়া খেয়াল করেছে তার মা জিবনে সুখি না । যাকে ভালবেসে বিয়ে করেছে তার আগের সংসারে ও আছে দুই সন্তান । মাঝে মাঝে তুমুল ঝগড়া লেগে যায় । এখন তানিয়ার মায়ের উপর চলে আলতাফ তালুকদারের অত্যাচার । বাড়ির ভাড়া বেশির ভাগ আলতাফ তালুকদার নিয়ে যায় । তানিয়া মা এখন খুব দুঃখ করে মনে মনে কিন্তু কি হবে ? জিবনে যেই ভুল করেছে সেই ভুলে ফিরে যাওয়া যায় না। তানিয়া তার মায়ের দুঃখ গুলো বুঝে । কিন্তু মায়ের মন দুখে দুখে পাথর হয়ে গেছে । তানিয়া আগার গাঁ কলোনি স্কুলে পড়ে এবার তার এস এস সি পরীক্ষা । মায়ের সাথে তার প্রায় ঝগড়া হয় । কারন সংসারের সব কিছুই তাকে দেখতে হয় । ছোট ভাই দের । মাঝে মাঝে রান্না ।
স্কুলের সামনে আজ খুব ভীর কারন স্কুল গেইটের সামনে এক লোক এসেছে । সে নাকি সবাই কে চোখ বন্ধ করে যে যা দেখতে চায় তাই দেখায় । লোকটা দেখতে অনেক সুন্দর কিন্তু চুল গুলো অনেক লম্বা । দাড়ি আর গোঁফ মুখে ভরা। অদ্ভুত সুন্দর তার চাহনি । ছাত্র ছাত্রি রা ভীর করে আছে । একজন বলল আমি জা দেখতে চেয়েছি তা দেখিছে । তানিয়া পাগলটার সামনে আসতেই পাগল টা বলল – দিদি মনি
তুমি কিছু দেখতে চাও । তানিয়া মাথা নেড়ে বলল হ্যাঁ ।
— আজ কি তোমার পরীক্ষা শেষ ।
— হ্যা ভাইয়া ।
পাগল বলল সবাই যা দেখতে চায় আমি ও তাই দেখাই । তানিয়ার এক বান্ধবি তালিয়া কে বলল খুব মজা আমি আমার আম্মুর টাকা কোথায় রাখে দেখতে চাইলাম ।আর পাগল আমাকে বলল চোখ বন্ধ কর । জুড়ে জুড়ে নিশ্বাস নাও । শান্ত হও । আর তোমার ঘরে তোমার মা কে দেখতে পাওয়া মাত্র অনুসরণ কর । আমি দেখলাম মাকে আর অনুসরণ করলাম । দেখতে পেলাম মা টাকা রাখে চালের বালতির মধ্য । আমি এক দৌরে বাসায় গিয়ে দেখি সত্য ঐ খান থেকে নিয়ে আলাম ৫০০ । আবার পাগলের সামনে আসলাম আমাকে বলে তুমি চোর । যাও আজ কপালে দুঃখ আছে । আমি টাকা রেখে মাত্র ২০ টাকা নিয়ে এসেছি । তানিয়া বলল – আর কে কি দেখতে চাইলো । সবাই যে যার বয় ফ্রেন্ড যে যার গার্ল ফ্রেন্ড দেখল । আমি যখন আমার মায়ের টাকা খুজে পেয়েছি তাহলে অন্য সবার টাও ঠিক।
তানিয়া তার বাবার কোন কথা জানে না । মানুষ টা বেঁচে আছে কিনা । বা দেখতে কেমন ছিল । পাগলের কাছে তানিয়া বলে দেখার কোন সর্ত আছে ।
তানিয়ার বান্ধবি বলে ঠিক দেখতে পেলে কিছু খাবার কিনে দিলেই হবে । লোকটা অনেক ভাল । অন্য এক বন্ধু বলে ভালই মনে হয় কারন সে মজার মজার কথা বলে । আর ফু দিলে খুব মিষ্টি সুগন্ধ বের হয় ।
তানিয়া বলল আমি এমন একটা জিনিস দেখতে চাই যা আমি দেখেছে কিন্তু আমার মনে নেই । এখন যদি চোখ বন্ধ করে সেটাই দেখতে পাই তাহলে চিনব কি করে আমি যা চিন্তা করছি যদি সে না হয় ।
— পাগল হেসে বলে দিদি চিন্তা মানুষের জীবনের অংশ। যার চিন্তা নেই ভাবনা নেই
সে খুব সুখি মানুষ বা খুব আপন ভুলা মানুষ । কিন্তু যার চিন্তা সৎ সুন্দর তার জিবন সুন্দর । তোমার চিন্তা যদি সৎ ও সুন্দর হয় তাহলে তুমি তাই দেখবে ।
তানিয়া কি জানি কি চিন্তা করে বলল না থাক আমি দেখব না। তানিয়া বাসায় চলে আসে । তানিয়ার মা জামিলা খাতুন তানিয়ার উপর খুব বিরক্ত হয়ে বলল পরিখা শেষ হয়েছে সেই কখন তোর এত দেরি কেন ?
—- মা আজ তো আমার টা শেষ হতে দেরি হয়েছে ।
—- তুমি জান না। বাসার কাজ আছে ।
—- কাজ আছে করব । আমি এখন কথা বলতে পারব না । কি কাজ বল করে দেই ।
—- ছাদ থেকে কাপড় গুলো নিয়ে আসো ।
— ঠিক আছে যাচ্ছি ।
আপন মা কিন্তু কেন জানি তানিয়া কে দেখতে পারে না। তানিয়া আজ কাল তার সৎ বাবার সাথে বেশি একটা কথা বলে না। তানিয়া মনে মনে বলে যে তার জন্ম দেয়া মেয়ের খবর রাখে না। আমি তো হলাম সৎ মেয়ে । আমার বাবার দেয়া বাড়িতে থাকে । আমার বাবা কে এই বাড়ি থেকে বের করেছে । তানিয়া জানে না তার বাবা কোথায় আছে । মাঝে মাঝে তাল তলা বাজারে যায় বাবা কাপড়ের দোকানটা যেই লোকের কাছে বিক্রি করছে সে একদিন বলে তানিয়া তুমি ভাল বাবার মেয়ে । সব সময় ভাল ভাবে চলবে । তানিয়ার চাচা রা কোন দিন তানিয়ার খবর নেই নাই । তানিয়ার মায়ের ব্যবহারে হয়ত আর তারা আসে না।
তানিয়া ছাদে দাড়িয়ে কাপড় তুলছে । হটাৎ দেখে ঐ পাগল টা গাছ তলায় শুয়ে আছে।
তানিয়া একটু হেসে বলল যেই মানুষ মানুষের আগামীর স্বপ্ন দেখায় সে আছে গাছ তলায় ।
সন্ধ্যা হয়ে এখন রাত তানিয়া দেখে পাগল টা মাঠের সেই গাছ তলায় আগের মত শুয়ে আছে । তানিয়ার মা বলল- বার বার জানালায় যাচ্ছ কেন ।
—- না মা! একটা পাগল মানুষ । আজ স্কুলের সামনে দেখে ছিলাম । একটু
পরে বৃষ্টি হতে পারে । কিন্তু ঐ পাগলটা এখনো গাছের নিচে ।
— পাগল দেখে কোন লাভ নাই । নিজের কাজ কর । তোমার আব্বুর কাপড় গুলো
ভাজ করে রাখ ।
জামিলা খাতুন জানালা লাগিয়ে দেয় । রাত এক টা বাজে আকাশে বিজলী চমকায় একটু একটু বৃষ্টি শুরু হয়েছে । তানিয়া পাগলের কথা খুব ভাবছে , লোকটা কি
বৃষ্টির পানিতে ভিজে যাবে । বিছানা থেকে উঠে বারান্দায় যেয়ে দেখে পাগলটা গাছ তলায় বসে আছে । কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত তার ছোট ভাই কে বলে
এই সজল উঠ তো । সজল বলে কি হইছে ডাক কেন । চুপ কর আমার সাথে চল ছাতা নিয়ে । সজল কে সাথে নিয়ে চলে যায় পাগলের কাছে । পাগল একটু হেসে বলে তুমি
তোমার বাবার মত হয়েছো । পর উপকারি । সজল বলে ছাই বলেছ আমার বাবা
মানুষের কোন উপকার করে না। তানিয়া বলে তোর বাবা না পাগল । এটা অন্য একটা মেয়ে । পাগল ভাই আমার সাথে আসুন । বৃষ্টি বেশি আসলে আপনি ভিজে যাবেন ।
— আমাকে নিলে তোমার মা তোমাকে বকবে ।
—- বকলে বকুক । আসুন তো অনেক রাত । আমি কিন্তু রাতে ঘর থেকে বের
হই না।
—- ঠিক আছে চল । আমি খুব সকালে চলে যাব ।তানিয়া পাগল কে রান্না ঘরের
সাথে সিঁড়ির পাশে একটা পাটি এনে বিছানা করে দেয় ।পাগল বলে তুমি খুব
মায়াশীল তোমার বাবার মত ।
— থাক আমাকে আমার বাবা কথা শুনাতে হবে না।
— তুমি কিন্তু শুনতে চাও । কিন্তু বলতে পার না। ভয় পাও ।
—- কি হবে জেনে ? আমার বাবা তো কোন দিন আমার খোঁজ নিতে আসে নাই ।
—- পাগল বলল তোমার বাবা তোমাকে অনেক দিন দেখে গেছে ।
— আপনি কি বলতে চান বাবা দেখে গেছে আমাকে । সে কি বলবে না। আমি যে
তার মেয়ে হই ।
— পাগল একটু হেসে বলে এই জগতে রক্তের মায়া খুব বেশি টান ও খুব বেশি ।
— আমার জন্য কারো কোন মায়া নেই । বাবা র কথা মনে নেই । মামা রা কোন
দিন বলে না। নানু বলে না। আস পাশের মানুষ শুধু বলে বাবা খুব ভাল মানুষ
ছিল । কিন্তু আমার বাবা আমার তো খবর নিবে । আর তুমি কি করে জান
আমার বাবার কথা ।
অ-মানব একটু হেসে বলল আমি তো মানুষের ভাবনা পড়তে পাড়ি । মানুষের চিন্তা পড়তে পাড়ি । যারা মানুষের চিন্তার মধ্যে এক বার প্রবেশ করে তখন সেই সেই মানুষের সকল চিন্তা ভাবনা তার মধ্যে চলে আসে । চিন্তা কে ধীর করে একটা লাইনে আনলে সেটা একটা শক্তি । সকল শক্তির সৃষ্টি আছে তবে কোন শক্তির বিনাশ নাই ।
শক্তি রূপান্তরিত হয় । মানুষের মাঝে ি এক বিশাল জগত আছে । কত জন মানুষ
সেই জগতে যেতে পারে । যারা মানুষের চিন্তার জগতে প্রবেশ করে তারা মানুষ থেকে
মানব হয়ে যায় ।
—– তানিয়া সজল কে বলল জা তুই যেয়ে ঘুমা । সজল বলল না আমি তোমার সাথে
এই ভাইয়ার কথা শুনব ।
—– পাগল বলল থাকতে দাও । অনেক সময় মানুষের মধ্যে মানুষের অজানা
কে জানার জন্য একটা বাসনা সৃষ্টি হয় । এটা তার মধ্যে হয়েছে ।
—- আচ্ছা আপনাকে যে পাগল বলে কিন্তু আপনি তো পাগল না।
—– আমি পাগল কি ভাল এটা আমি নেজেই জানি । তবে সবার কাছে ই আমি
হলাম পাগল ।।
— আচ্ছা আমার আব্বু কে । আপনি বলতে পারেন ।
—- কেন পারব না। একবার বলে দিলেই তুমি চিনবে ।।
— তাহলে বলুন ।
—- তুমি স্কুলে গেলে একদিন একটা লোক তোমার জন্য অনেক গুলো ফুল নিয়ে
এসেছিল মনে আছে । একজন সাদা দাড়ি আর সুন্দর জামা পরে বলল আমি
তোমার আব্বুর বন্ধু হই ।
— হ্যা মনে আছে প্রতি বছর আসে । যখন আমার স্কুল শুরু হয় । কিন্তু গত দুই তিন
বছর হলো আসে না। স্কুলের সবার জন্য অনেক চকলেট নিয়ে আসে । অনেক
ভাল মানুষ । আমাকে তো বলেছে সে নাকি অনেক দূর দেশে থাকে । আম্মু কিন্তু
সেই আঙ্কেল কে আবার চিনে না।
— হ্যা তোমার তো তাকে দেখে নাই ।
—- আম্মু দেখলে কি চিনত ঐ আঙ্কেল কে।
—– তানিয়া ঐ মানুষটা তোমার আঙ্কেল না। তোমার আব্বু । তোমাকে দেখার
জন্য প্রতি বছর আসে । কিন্তু সামনে তোমার পরীক্ষা আর এর মধ্যে দুই বার
এসেছে কিন্তু সেই দুই দিন তুমি স্কুলে যাও নাই ।
—- বলেন কি আপনি ঐ লোকটা আমার আব্বু ।
—- তোমাদের আলমারিতে একটা লাল ছোট জুতা আছে ।
—– হ্যা । এটা নাকি আমার ছোট বেলার জুতা । একটা নাকি হারিয়ে গেছে ।
—— কিন্তু তোমার আম্মু বাকি একটা জুতা না ফেলে কেন যত্ন করে আলমারিতে
রেখেছে ।
—- হ্যা তাই তো ।
—- যদি ঐ লোকটার সাথে দেখা হয় । দেখবে এর একটা জুতা সে রুমাল দিয়ে যত্ন
করে তার বুক পকেটে রেখেছে ।
তানিয়া বলল ঐ ভাল মানুষটা আমার আব্বু । আমাকে তো অনেক চকলেট কিনে দিয়েছে । স্কুলে বলে গেছে আমার লিখা পড়ার সব যেন স্কুল দেখে । স্কুল এ সে দশটা ফ্যান কিনে দিয়েছে । ঐনি আমার আব্বু জান । আমদের দোকান দার চাচা বলেছে
আব্বুর নাকি হাতের পায়ে কেনি আঙ্গুলে একটা বড় কালো তিল আছে । ঐ তো
সু জুতা পরে আসে ।। আচ্ছা কাল কথা হবে । আমি যাই এই বিস্কুট এর পানি । অনেক বৃষ্টি আপনি ঘুমিয়ে থাকুন ।
তানিয়ার খুব সকালে ঘুম ভেঙে যায় । তাড়াতাড়ি সিঁড়ির কাছে যায় । কিন্তু পাগল নাই । তানিয়া আলমারি খুলে দেখে উপরের তাকে একটা লাল জুতা । মা কে কোন কিছু না বলেই সেই জুতা টা তার ব্যাগে নিয়ে নেয় ।
পাগল মানুষটা কে মনে মনে খুজে । ছোট ভাই সজল বলে বার বার আচ্ছা আপু
তোমার মা আমার মা এক কিন্তু তোমার আব্বু আমার আব্বু এক না। এটা কেমন
কথা । আমি তো কিছুই বুঝি না। আম্মু কে বলব ভাবছি কিন্তু আম্মু আমাকে যদি মারে । তানিয়া বলল সব কিছু আম্মু কে বলতে হয় না। তুমি এখন এখন একটু বড় হয়েছ না। সজল বলে ঠিক বলেছে আপু ।
দুই মাস পরে তানিয়র এস এস সি রেজাল্ট দিবে । সবাই স্কুলে গেছে । তানিয়া আজ স্কুলে আসছে রেজাল্ট নিতে । তানিয়া জানে সে ভাল করবে । কিন্তবার বার সে তার ব্যাগটায় হাত দিচ্ছে । সেই লাল জুতা টা বের করে দেখছে । রেজাল্ট দেয়া শেষ । তানিয়া পাশ করেছে খুব ভাল ভাবে । সবাই খুশিতে হাসছে । কিন্তু তানিয়া কাঁদছে ।
মা তার অফিসে । সৎ বাবা আসে নাই । সবার সাথেই মা অথবা বাবা আছে । হটাৎ
তানিয়ার মাথায় একটা হাত -হ্যালো মা তুমি কাঁদছ কেন ।
— তানিয়া মুখ ফিরিয়ে দেখে সেই সাদা দাড়ি ওয়ালা মানুষটা । আগের মত সুন্দর
একটা হাসি দিয়ে বলল বাবা তোমার রেজাল্ট কি ?
—- তানিয়া তার দিকে চেয়ে চোখের পানি মুছে । অবাক হয়ে অনেক সময় দেখে
তার পর বলে আপনার পকেটে ঐ টা কি একটু দেখাবেন ।।
—- ভদ্রলোক বুক পকেট থেকে রোমালে পেছানো একটা লাল জুতা বের করে
দেখায়ে বলে এটা আমার মেয়ের জুতা মা । ভুলে পকেটে করে নিয়ে এসেছি ।
—- তানিয়া তার ব্যাগ থেকে আর একটা জুতা বের করে দিয়ে বলে কান্না ভেজা
চোখে । আমি ভুল করে এই টা জামিলা বেগমের আলমারি থেকে আজ নিয়ে
এসেছি আব্বু । এই কথা বলে বাবা কে জরিয়ে ধরে । আব্বু আব্বু বলে কান্না
শুরু করে দেয় । তানিয়া পায়ের দিকে চেয়ে দেখে ঠিক একটা কালো তিল ।
তানিয়া বলে আব্বু আমাকে নিয়ে চল তোমার সাথে । ঐ মহিলা আমার জন্য
বাকি জীবন যেন তোমার সাথে যে প্রতারণা করেছে সেই কষ্ট নিয়ে বাচে ।
তানিয়া কে নিয়ে তার বাবা অজানা ঠিকানায় চলে যায় । তানিয়ার মা তানিয়া তানিয়া করে পাগল হয়ে যায় । চাকুরী চলে যায় । তানিয়া কোথায় আছে কেউ জানে না। সজল বলে মা একটা পাগলের সাথে আপু চলে গেছে । লাল জুতা নিয়ে । তানিয়ার
মা আলমারি তে সেই লাল জুতা খুজে । তানিয়ার বাবা একটা জুতা যাওয়ার সময়
চেয়ে নিয়ে গিয়েছিল । আর বলেছিল বাকি জুতাটা রেখে দিও । একদিন আমার মেয়ে
ঐ জুতা নিয়ে তার বাবা কে খুজে নিবে । জামিলা খাতুন মাঝে মাঝে লাল জুতা দেখে
হাসত আর বলত এই লাল জুতা দেখে তানিয়া তার বাবা কে চিনে নিবে । রাখলাম এই জুতা দেখি কি ভাবে চিনে মেয়ে নিয়ে যায় । এখন প্রায় বলে লাল জুতা টা কই । এটাই আমার মেয়ে । সবার কাছে একটা লাল জুতা চায় । তানিয়ার মা সারা বাড়িতে লাল জুতা খুজে । কত জন কত লাল জুতা এনে দেয় আসলে সে তো তার তানিয়া কে খুজে যার সাথে মনের দুঃখ গুলো রাগ করে বের করত আজ তো তার সেই ভাবে গালি দেয়ার কেউ নাই । তাল তলার বাসার জানলায় দাড়িয়ে যেই যায় বলে লাল জুতাটা দেখেছ ………।।